গোয়া: আট ম্যাচে অপরাজিত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে অবশেষে থামাল এফসি গোয়া (Mohun Bagan Super Giant vs FC Goa)। শুক্রবার ঘরের মাঠে তারা গতবারের লিগ শিল্ডজয়ী মোহনবাগানকে ২-১-এ হারায়। জোড়া গোল করেন ২৩ বছর বয়সী গোয়ানিজ মিডফিল্ডার ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ, যিনি বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধেও গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন। সারা ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচের সেরার খেতাবও জিতে নেন তিনি।


সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের তুলনায় মোহনবাগানকে এ দিন বেশ কিছুটা অগোছালো মনে হয়। গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের পরই দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা। শুক্রবার ফতোরদায় সেই পারফরম্যান্সই ফিরে এল যেন। একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন দলের অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন।


সারা ম্যাচে এ দিন তিনটি শট গোলে রাখতে পারে তারা। দশটি গোলের সুযোগ তৈরি করেও একটির বেশি গোল করতে পারেনি কলকাতার দল। তাও সেটি পেনাল্টি থেকে। তবে এই হারের ফলে শীর্ষস্থান খোয়াতে হয়নি গতবারের লিগজয়ীদের। ১২ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরেই রয়ে গেল তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-র ১২ ম্যাচে সংগ্রহ ২৪। বরং এই ম্যাচে জিতে তিন নম্বরে উঠে এল এফসি গোয়া। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২২ পয়েন্ট। অর্থাৎ, শীর্ষস্থান দখলের লড়াই ক্রমশ জমে উঠছে। এর পর থেকে পয়েন্ট খোয়ানোর বড়সড় খেসারত দিতে হতে পারে সেরা চারে থাকা দলগুলিকে।


ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় ব্রাইসনের গোলে এগিয়ে যায় গোয়া। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল পান দিমিত্রিয়স পেত্রাতোস। ৫৫ মিনিটের এই গোলের ১৩ মিনিট পরেই ফের দলকে এগিয়ে দেন ব্রাইসন। দু’টি গোলেই তাঁকে অ্যাসিস্ট করেন বোরহা হেরেরা। ম্যাচের বাকি আধ ঘণ্টায় একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও সেগুলি থেকে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত রইল এফসি গোয়া। টানা ১২টি হোম ম্যাচে গোল করার নতুন নজির গড়ল তারা।


গত ম্যাচের দলে কোনও পরিবর্তন না করেই এ দিন প্রথম এগারো নামায় মোহনবাগান এসজি। এফসি গোয়া প্রথম এগারোয় ফিরিয়ে আনে কলকাতায় খেলে আসা দুই বিদেশী আরমান্দো সাদিকু ও বোরহা হেরেরা-কে। ব্রাইসনকেও এ দিন প্রথম এগারোয় ফেরানো হয়। দুই দলই এ দিন শুরুটা ধীরগতিতে করলেও ক্রমশ খেলার গতি বাড়ে এবং এফসি গোয়ার আক্রমণে তীব্রতাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। দশ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন সাদিকু। কিন্তু তাঁকে নিরস্ত করেন আপুইয়া।


মোহনবাগান শুরুতেই ধাক্কা খায় ১২ মিনিটের মাথায় যখন বক্সের মাথা থেকে নেওয়া ব্রাইসনের শট টম অলড্রেডের পায়ে লেগে গোলকিপার বিশাল কয়েথের অনেকটা দূর দিয়ে গোলে ঢুকে যায় (১-০)। ডানদিক থেকে থ্রো-ইনের পর বাঁ প্রান্ত থেকে উঠে আসা ব্রাইসনকে ক্রস বাড়ান বোরহা হেরেরা। সেই ক্রস থেকে গোল পান তিনি। ব্রাইসনকে আগেই আটকাতে পারতেন আশিস রাই। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।


এর পরেও ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় হোম টিম। ২৬ মিনিটের মাথায় মহম্মদ ইয়াসির বক্সের বাইরে থেকে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে বল পাঠান ব্রাইসনের জন্য, যা তিনি ঠিকমতো টোকা দিতে পারলে হয়তো গোল পেতেন। সেই চেষ্টাও করেন ব্রাইসন। কিন্তু বলের দখল নিয়ে নেন বিশাল। ৩১ মিনিটের মাথায় ইয়াসিরের দূরপাল্লার জোরালো শট অনায়াসে আটকান বাগান গোলকিপার।


মোহনবাগান তাদের প্রথম ইতিবাচক সুযোগটি পায় ৩৫ মিনিটের মাথায়। তার আগে পর্যন্ত সে রকম কোনও গোলের সুযোগই পায়নি তারা। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল হেড করে গোলে পাঠান আলবার্তো রড্রিগেজ, যার দখল নিয়ে নেন গোয়ার গোলকিপার ঋত্বিক তিওয়ারি। কিন্তু তাঁর পিছনেই বলের দখল নিতে ছুটে আসা শুভাশিস বোস ও সন্দেশ ঝিঙ্গন পরষ্পরের ধাক্কায় চোট পেয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন। তবে কেউই অবশ্য মাঠ ছাড়েননি।


বিরতির ঠিক আগে ফের সুযোগ পায় কলকাতার দল। সহাল আব্দুল সামাদ বক্সের বাঁ দিকে মনবীর সিংকে ব্যাকপাস করলে তিনি বক্সের মাঝখানে বল পাঠান দিমিত্রিয়স পেত্রাতোসের উদ্দেশে। কিন্তু প্রথম টাচেই শট নিয়ে বল বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন তিনি। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়েও কর্নার থেকে ফ্লিক করে গোলে বল ঠেলার চেষ্টা করেন মনবীর, যা এক ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোললাইনের বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধে কোনও কর্নার আদায় করতে পারেনি এফসি গোয়া, যেখানে মোহনবাগান চারটি কর্নার পায়। প্রথম ৪৫ মিনিটে একবারের বেশি বল লক্ষ্যে রাখতে পারেনি গতবারের লিগ শিল্ডজয়ীরা।


দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে মোহনবাগান এবং ৪৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া সহালের গোলমুখী শট সেভ করেন ঋত্বিক। ৫০ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করেন রড্রিগেজ, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শুভাশিসের শটও বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।


৫৪ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মনবীর লো ক্রসে বল বক্সের মধ্যে পাঠানোর চেষ্টা করেন, যা প্রায় শুয়ে পড়ে আটকাতে যান সাদিকু এবং তাঁর হাতে বল লাগায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পরবর্তী মিনিটে পেনাল্টি থেকে সমতা আনেন পেত্রাতোস (১-১)। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে এই নিয়ে চতুর্থ গোল পেত্রাতোসের। তবে এই গোলের দু’মিনিটের মধ্যেই অপ্রত্যাশিত ভাবে পেত্রাতোসকে তুলে জেসন কামিংসকে নামান কোচ হোসে মোলিনা। সম্ভবত চোটের জন্য বসে যান পেত্রাতোস।


গোল খাওয়ার পর থেকেই ফের ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা শুরু করে এফসি গোয়া। কার্ল ম্যাকহিউ ও সাদিকু গোলের সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হন। তাদের চেষ্টা সফল হয় ৬৮ মিনিটের মাথায়, যখন ফের গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন ব্রাইসন। এ বারও তাঁর গোলে অ্যাসিস্ট করেন বোরহা। বক্সের ডানদিক থেকে পাঠানো বোরহার ক্রসে হেড করে জালে বল জড়িয়ে দেন ব্রাইসন, যিনি বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকেন এবং সম্পুর্ণ অরক্ষিত ছিলেন (২-১)।


ফের সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সবুজ-মেরুন বাহিনী এবং ৭২ মিনিটের মাথায় প্রায় অবধারিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন জেমি ম্যাকলারেন। ডানদিক থেকে মনবীরের ক্রসে ঠিকমতো পা লাগাতে পারলেই গোল পেতেন তিনি। কিন্তু দ্রুত ছুটে এসেও বলের নাগাল পাননি তিনি।


ম্যাচের ৭০ মিনিটের পর থেকে দুই দলই গোলের জন্য ঝাঁপায়। ৭৬ মিনিটের মাথায় সাদিকুর গোলমুখী শট আটকান বিশাল। ঠিক তার পরই কর্নার থেকে মনবীরের হেড গোলের বাইরে চলে যায়। ৭৮ মিনিটে ফের সাদিকুর হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৮১ মিনিটের মাথায় পরিবর্ত মিডফিল্ডার ইকের গুয়ারৎজেনার দূরপাল্লার শট দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় সেভ করেন বিশাল।


হার বাঁচানোর উদ্দেশে ৮০ মিনিটের মাথায় জোড়া পরিবর্তন করেন মোলিনা। লিস্টন ও আশিসকে তুলে অনিরুদ্ধ থাপা ও আশিক কুরুনিয়ানকে নামান তিনি। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে সুহেল ভাটকেও নামান তিনি। কিন্তু ততক্ষণে এফসি গোয়ার রক্ষণ দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে ওঠে। মাঝমাঠেও লোক বাড়িয়ে খেলার গতি কমিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করে তারা। তাদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে একাধিকবার গোলের সুযোগও তৈরি করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। সাত মিনিটের সংযুক্ত সময়ও পায় তারা। সহালের কর্নার থেকে ফের গোলের সুযোগ পান ম্যাকলারেন। কিন্তু এ বারও বলে ঠিকমতো পা লাগাতে পারেননি তিনি। এই সময়েই হয়তো গ্রেগ স্টুয়ার্টের অভাব বোধ করেন মোলিনা ও মোহনবাগান সমর্থকেরা। হতাশায় মোহনবাগানের এক সাপোর্ট স্টাফ লাল কার্ডও দেখেন।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: '১০ জনকে নিয়ে মাঠে নামতাম', পৃথ্বী শর বিজয় হাজারে থেকে বাদ পড়া নিয়ে বিস্ফোরক MCA আধিকারিক