কলকাতা: গত ম্যাচে অভূতপূর্ব জয়ের পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা যেমন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন তাঁদের কোচ অস্কার ব্রুজোনও (Oscar Bruzon)। গত ম্যাচে ফর্মে থাকা পাঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ২১ মিনিটের মধ্যে চার গোল করে ম্যাচ জিতে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। এই অসাধারণ জয়ের পর ফুটবলারদের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও তাঁদের মানসিক শক্তি নিয়ে কোনও চিন্তা নেই কোচের।
তাই শনিবার ঘরের মাঠে আরও এক শক্তিশালী দল জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে (East Bengal vs Jamshepur FC) নামার আগে লাল-হলুদ কোচ বলেন, বাস্তবটা হল, 'কাল আমাদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। আর আমরা যদি কাল জিততে পারি তাহলে আমাদের ওপরে থাকা অন্যান্য দলের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কমবে। পরের সপ্তাহে আমরা হায়দরাবাদকেও হারাতে পারলে বছরটা প্রত্যাশিত জায়গায় থেকেই শেষ করতে পারব। এখন এটাই আমাদের স্বপ্ন, যাকে সত্যি করে তোলা সম্ভব। ওই জায়গায় পৌঁছনোর জন্য যা যা করা দরকার সবই করব আমরা'।
অস্কারের মতে, চলতি বছরে যে দু’টি ম্যাচ আরও বাকি আছে তাদের, সেগুলি জিতলে নতুন বছরটা ভাল ভাবে শুরু করতে পারবে তারা। তিনি বলেন, 'ঘরের মাঠে পরপর তিনটি ম্যাচ জিতলে এর প্রভাব মরশুমের বাকি সময়েও পড়বে। কালকের ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে ছন্দ ফিরে পেয়েছি আমরা, সেই ছন্দ যাতে নষ্ট না হয়, সেই চেষ্টা আমাদেরই করতে হবে। লিগ টেবলে আমাদের উঠতে হবে। কাল সেই সুযোগ আমাদের সামনে আছে। জামশেদপুর এখন ছ’নম্বরে রয়েছে। আমরাও স্বপ্ন দেখছি ওই জায়গায় পৌঁছনোর। কিন্তু এখনও দলের মধ্যে একাধিক সমস্যা রয়েছে। সে সব সামলে ওখানে পৌঁছতে গেলে জয়ের খিদে, লক্ষ্যে পৌঁছনোর ইচ্ছা আমাদের আরও বাড়াতে হবে। গত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যা করতে পেরেছি আমরা'।
সমর্থকদের অনেকেরই প্রশ্ন, দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস, জিকসন সিং ও নাওরেম মহেশ— তিনজনেই শনিবারের ম্যাচে খেলতে পারবেন কি না। তাদের আশ্বস্ত করে কোচ বলেন, 'ওরা তিনজনই শেষ অনুশীলনে ভাল ইঙ্গিত দিয়েছে। মনে হয়, ওরা স্কোয়াডে থাকবে। তবে যে-ই খেলুক আমাদের শেষ পর্যন্ত লড়াই করার জায়গায় থাকতে হবে। যদি ম্যাচের একেবারে শেষ দিকেও আমাদের লড়তে হয়, তা হলে লড়ব। গত ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে যে ভাবে আমরা খেলায় ফিরে এসেছি, তাতে ফুটবলের সৌন্দর্যই ফুটে উঠেছে। আমি দলে ঘন ঘন বেশি পরিবর্তন করার মানুষ নই। তাই দেখা যাক কাল কাদের নামাতে পারি'।
এখন আর ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে আশাবাদী নন, বরং বাস্তববাদী হতে চান স্প্যানিশ কোচ অস্কার। বলেন, 'আমি এখানে এসে প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, ইস্টবেঙ্গলের মতো একটা ঐতিহাসিক ক্লাবের জায়গা সবার নীচে নয়। এর চেয়ে আরও ভাল জায়গায় থাকার মতো দল ইস্টবেঙ্গল। নিজেদের শক্তিশালী করে তোলার জন্য ও লক্ষ্যপূরণের জন্য তো আমাদের সেরা ছয়ে থাকতেই হবে। তাই এটাই এখন আমাদের লক্ষ্য। তাই আমি আশাবাদী হতে চাই না, বাস্তববাদী হতে চাই'।
টানা সাতটি ম্যাচে জয় না পাওয়া দলের ফুটবলারদের লড়াকু করে তোলা প্রসঙ্গে অস্কার বলেন, 'আমি আসার আগে দলের ছেলেদের শরীরের ভাষা কেমন ছিল জানি না। তবে ওরা যে দলকে সাফল্য এনে দিতে চায় এবং সেজন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে রাজি, তা জেনে আমি খুশিই হয়েছিলাম। সপ্তাহের পর সপ্তাহ অনুশীলনের পর আমি বুঝতে পারি দল সত্যিই উন্নতি করছে। এখন তো আমাদের পারফরম্যান্স ও ফলেই বুঝতে পারছেন, কতটা উন্নতি করতে পেরেছি আমরা'।
শনিবার তাদের প্রতিপক্ষ যারা, সেই জামশেদপুর এফসি গত দুই ম্যাচেই জিতেছে। লিগের শুরুটা দুর্দান্ত করার পরেও মাঝখানে টানা ব্যর্থতা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। তাদের ভারতীয় কোচ খালিদ জামিলের প্রশংসা করে অস্কার বলেন, 'খালিদকে আমি অনেক আগে থেকে চিনি, যখন আমি মুম্বইয়ের দলে কোচিং স্টাফে ছিলাম। ও দলটাকে যে ভাবে তৈরি করেছে, যে ভাবে দলটার মধ্যে লড়াকু মানসিকতা তৈরি করেছে, প্রশংসা করতেই হবে। খালিদ প্রমাণ করে দিয়েছে আইএসএলে ভারতীয় কোচেদের সুযোগ দিলে তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারে। দুটো ম্যাচে জিতে ওরা আমাদের বিরুদ্ধে নামছে। অর্থাৎ, কাল আমরা বেশ শক্তিশালী একটা দলের বিরুদ্ধে নামছি'।
প্রথম লেগে ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে দু’গোলে হার নিয়ে লাল-হলুদ বাহিনীর পথপ্রদর্শক বলেন, 'গত ম্যাচের সময় এখানে ছিলাম না। তবে ম্যাচটা আমি দেখেছি। সেই ম্যাচে খুব ভাল খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। আধিপত্য বিস্তার করা, গোলের সুযোগ তৈরি করা সব দিক দিয়েই আমরা এগিয়ে ছিলাম। খালিদ জামিলের দল যথেষ্ট কার্যকরী। ওদের ভাল কিছু করতে গেলে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয় না। একটা সেকেন্ড বল, একটা সেট পিস বা একটা কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই ওরা খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। গত ম্যাচে ওরা দু’গোলে জিতেছিল ঠিকই। কিন্তু ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখে কেউ হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবে না যে, ওরকম একটা ফল হয়েছিল'।
এই ম্যাচে জিততে গেলে যে সেরা পারফরম্যান্স দেখাতেই হবে তাদের, তা জানিয়ে অস্কার বলেন, 'লিগ টেবলের অবস্থান অনুযায়ী কালকের ম্যাচে জামশেদপুরকেই ফেভারিট বলে ধরতে হবে। তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমরা ঘরের মাঠে খেলব। এই ম্যাচের আগে মাত্র দু’দিন প্রস্তুতির সময় পেয়েছি আমরা। তবে আমাদের খেলোয়াড়রা এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে জানে। আমার বিশ্বাস, কাল ম্যাচটা ওপেন হবে। আমরা যে ভাবে ওদের আটকানোর পরিকল্পনা করছি, ওরাও নিশ্চয়ই আমাদের আটকানোর পরিকল্পনা করছে। কৌশলের লড়াই হবে। জামশেদপুরের খেলা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণই করেছি আমরা। দেখা যাক, আমাদের পরিকল্পনা কাল সফল হয় কিনা'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: নজরে ক্লেটন, ঘরের মাঠে চোট আঘাতে জর্জরিত ইস্টবেঙ্গলের সামনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ