কলকাতা: চেন্নাইয়িন এফসির (East Bengal vs Chennaiyin FC) মতো শারীরিক ভাবে এগিয়ে থাকা দলকে যে কৌশলের লড়াইয়ে হারাতে হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন (Oscar Bruzon)। সেই অনুযায়ীই শনিবারের ম্যাচের পরিকল্পনা তৈরি করেন তিনি। সেই পরিকল্পনা ও কৌশল নিখুঁত ভাবে কার্যকর করেই যে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল তারা, তা ম্যাচের পর জানিয়ে দিলেন লাল-হলুদ বাহিনীর কোচ।
শনিবার চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৫৪ মিনিটের মাথায় পিভি বিষ্ণু ও ৮৪ মিনিটের মাথায় জিকসন সিংহের গোলে এ বারের আইএসএলের দ্বিতীয় জয় পায় লাল-হলুদ বাহিনী। ব্রুজোনের প্রশিক্ষণে আইএসএলে এত দিনে জয়ের সরণিতে হাঁটা শুরু করল তারা।
গত এপ্রিলে কেরল ব্লাস্টার্স ও বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে পরপর জোড়া জয় পেয়েছিল কার্লস কুয়াদ্রাতের ইস্টবেঙ্গল। অর্থাৎ, আইএসএলের ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার টানা জোড়া ম্যাচ জিতল ইস্টবেঙ্গল। তবে গোল অক্ষত রেখে তাদের পরপর দু’টি জয় এই প্রথম। এই নিয়ে টানা তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখল লাল-হলুদ বাহিনী।
চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে কী ভাবে কৌশলের লড়াইয়ে জিতল তাঁর দল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে ম্যাচের পর অস্কার বলেন, 'আমরা পুরো ম্যাচেই আজ ভাল খেলেছি। ম্যাচের মধ্যে একেকটা মুহূর্ত একেকরকম ছিল। চেন্নাইয়িন এফসি ঘরের মাঠে খেলেছে। এই পরিস্থিতিতে এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট তোলা খুবই দরকার ছিল ওদের। এই লিগে যে দলগুলো শারীরিক সক্ষমতায় এগিয়ে, তাদের মধ্যে ওরা অন্যতম। তাই সাধারণত, ওরা বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকে। ৫০-৫০ ডুয়েল, লং বল, সেকেন্ড বলের ক্ষেত্রে ওরা যা করে, আজও তাই করার চেষ্টা করেছে। আমরা ওদের এই অভ্যাসটাই কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলাম'।
কী ভাবে প্রতিপক্ষকে হতাশ করে তোলে তারা, তা জানিয়ে ইস্টবেঙ্গল কোচ বলেন, 'শুরুর দিকে বল ধরে খেলার দিকে আমরা বেশি নজর দিই, সঙ্ঘবদ্ধ থাকার চেষ্টা করি, আমাদের অর্ধে ওদের টেনে আনার চেষ্টা করি। কারণ, আমরা ওদের রক্ষণ কী রকম, তা জানি। ব্যক্তিগত ডুয়েল, ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে ওরা বেশির ভাগ সময়েই এগিয়ে থাকে। ৯০ মিনিট ধরে ওদের সঙ্গে এই লড়াই করে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সে জন্যই অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হয় আমাদের। আজ যে প্রথমে গোল করবে, তাদেরই যে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা বেশি, তা আমাদের আগেই মনে হয়েছিল। তাই সেই পরিকল্পনা নিয়েই এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলাম আমরা'।
এ দিন প্রতিপক্ষের গোলের সামনে অনেক বেশি তৎপর ছিল কলকাতার দল। সারা ম্যাচে তাদের তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল, যার মধ্যে দু’টি থেকেই গোল হয়। মোট ১০টি গোলের সুযোগ তৈরি করে ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে ১৬ বার বল ছোঁয় তারা ও ফাইনাল থার্ডে ৫৩ বার প্রবেশ করে।
ইস্টবেঙ্গল কোচ মনে করেন, প্রথমার্ধের জল বিরতির পর থেকেই খেলার মোড় ঘুরতে শুরু করে। বলেন, 'প্রথমার্ধের ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর থেকে, ১০-১৫ মিনিট আমরা ক্রমশ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করি এবং ঘন ঘন গোলের সুযোগ তৈরি করা শুরু করি। দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের দলের ছেলেরা কৌশল অনুযায়ী নিখুঁত এবং অসাধারণ খেলেছে। আমরা সঙ্ঘবদ্ধ থেকে, নিজেদের শেপ বজায় রেখে খেলি। ৪-৪-২ ছক বজায় রেখে খেলেছি আমরা। মাঝমাঠ আমরাই নিয়ন্ত্রণ করি। যার ফলে ওরা উইং বরাবর খেলতে বাধ্য হয়, যেটা ওরা সাধারণত করতে পছন্দ করে না। সে জন্যই প্রতিপক্ষ হতাশ হয়ে ওঠে'।
মাঝমাঠের দখল নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'ওরা (চেন্নাইয়িন) আসলে বেশি দৌড়ে খেলতে পছন্দ করে। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতা ওদের খেলায় বেশি দেখা যায়। কিন্তু ওই জায়গাটাই আজ সম্পুর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাই আজ ওরা ক্রমশ হতাশ হয়ে যায় এবং সেই সুযোগটাই আমরা নিই এবং ওদের পাল্টা চাপে ফেলে দিই। আমরা আজ ওদের পা থেকে অনেক বল কেড়েছি এবং আক্রমণে ওঠার জন্য অনেক জায়গাও তৈরি করতে পেরেছি। এটা আমাদের ছেলেদেরই কৃতিত্ব'।
অস্কারের মতে, আরও বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তাঁর দল। বলেন, 'আমার মনে হয় ২-০-র ব্যবধানটা কমই হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি করেছি। শুধু তা-ই নয়। ওদের দখল থেকে বল ছিনিয়ে নেওয়া, দ্রুত আক্রমণে ওঠা, উপযুক্ত জায়গা তৈরি করা এবং সুযোগ তৈরি করার দিক থেকে আমরা আজ ওদের চেয়ে এগিয়েই ছিলাম। সেই জন্যই ম্যাচটা জিততে পেরেছি'।
পরপর দু’টি জয়ের ফলে লিগ টেবলের সর্বশেষ স্থান থেকে দু’ধাপ উঠে এসেছে লাল-হলুদ বাহিনী। ৬৭ দিন ধরে ১৩ নম্বরে থাকার পরে এ দিনই প্রথম ১১ নম্বরে উঠে আসে তারা। নয় ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন হায়দরাবাদ এফসি ও মহমেডান এসসি-র ওপরে।
তবে এরই মধ্যে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে দুঃসংবাদও রয়েছে। সল ক্রেসপোর চোট। প্রথম গোলের পরেই হ্যামস্ট্রিং সমস্যার জন্য মাঠেই শুয়ে পড়েন তিনি এবং স্ট্রেচারে শুইয়ে তাঁকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। হ্যামস্ট্রিং পুল হওয়া মানে হয়তো অন্তত সপ্তাহ দুয়েকের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। তার ওপর মাঠের বাইরে গিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি, যা তাঁর চতুর্থ হলুদ কার্ড। ফলে পরের ম্যাচে নিশ্চিতভাবে নেই তিনি।
ক্রেসপোর চোট কতটা গুরুতর, তা জানতে চাইলে ব্রুজোন বলেন, 'সলের হ্যামস্ট্রিং-এ সমস্যা। সোমবার পরীক্ষার পর জানা যাবে, ওকে কতদিন পাওয়া যাবে না। মনে হয় অন্তত সপ্তাহ দুয়েক ওকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে'। ক্রেসপোর মতো নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের বিজয়রথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে টানা দুই জয়ের পর লাল-হলুদ শিবিরে যে আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে, তাতে এই সমস্যা দূর করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস স্প্যানিশ কোচের।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষ বদলালেও বদলাল না ছবি, পাঞ্জাবের বিরুদ্ধেও পরাজিত মহামেডান স্পোর্টিং