হায়দরাবাদ: অস্কার ব্রুজোন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নতুন উদ্যমে ছুটছে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) গাড়ি। বিগত পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জয় পেয়েছে। নিজামের শহরে সুযোগ ছিল আইএসএল ইতিহাসে প্রথমবার জয়ের হ্যাটট্রিক করার। তবে হল না। ৯০ মিনিটে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গোলহজম করতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। জিকসন সিংহের গোলে গোটা তিন পয়েন্টের আশা ছিল। তবে এক পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল লাল-হলুদকে।
ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের যে পারফরম্যান্স দেখা গিয়েছিল, এ দিন হায়দরাবাদ এফসি-র ঘরের মাঠে সেই ছন্দে দেখা যায়নি তাদের। অ্যাওয়ে ম্যাচে তারা যে বরাবরই স্বচ্ছন্দ নয়, তা এ দিন আরও একবার প্রমাণিত হল। সব মিলিয়ে ছ’টি অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। একটি জেতে ও এ দিন ড্র করে লাল-হলুদ বাহিনী। অর্থাৎ, পরিবেশ বদলালে তারাও আর ছন্দ ধরে রাখতে পারছে না।
এ দিনও ঠিক তা-ই হল। যদিও ম্যাচটা ছিল লিগ টেবলের ১১ বনাম ১২ নম্বর দলের ম্যাচ। কিন্তু অনেকেই এগিয়ে রেখেছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে। হয়তো দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ও ধরে নিয়েছিলেন এই ম্যাচে তারা জিতবে। কিন্তু ঘটল ঠিক উল্টোটা। হায়দরাবাদ এফসি-ই এ দিন প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে। এ দিন তারাই কলকাতার দলের চেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে। তারা যেখানে দশটি সুযোগ তৈরি করে, সেখানে ইস্টবেঙ্গল চারটির বেশি গোলের সুযোগ পায়নি।
অথচ ইস্টবেঙ্গল প্রতিপক্ষের বক্সে বল পায় বেশিবার (১৫-১২) এবং গোলে শটও নেয় বেশি (৩-১)। কিন্তু এ সবই তারা করে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমার্ধে তাদের একটিও শট লক্ষ্যে ছিল না। হায়দরাবাদও প্রথমার্ধে কোনও শট গোলে রাখতে পারেনি। প্রথমার্ধে বেশিরভাগ সময়ই মাঝমাঠ-নির্ভর ফুটবল খেলে তারা। প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে তারা এবং ৬৪ মিনিটের মাথায় জিকসন সিংহয়ের গোলে এগিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ দিকে সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা হায়দরাবাদকে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখে আইেসএলে প্রথম জয়ের হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয় লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেন হায়দরাবাদের ডিফেন্ডার মনোজ মহম্মদ।
এ দিন দলে দু’টি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন। ডিফেন্ডার প্রভাত লাকরা ও মিডফিল্ডার প্রথম এগারোয় ফেরেন চোট পাওয়া মহম্মদ রকিপ ও কার্ড সমস্যায় খেলতে না পারা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তের জায়গায়। অন্যদিকে, তিনটি পরিবর্তন করে দল নামায় হোম টিম।
এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণের মেজাজে ছিল হায়দরাবাদ এফসি। ম্যাচ শুরুর দু’মিনিটের মধ্যে আইজ্যাক ভানমালসাওমা এবং জোসেফ সানি একসঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দেন। আইজ্যাক তাঁর পাসটি বক্সের বাইরে জোসেফের জন্য সাজিয়ে দেন। কিন্তু আরও না এগিয়ে জোসেফ দূর থেকে শট নেন, যা ব্লক হয়ে যায়।
পরবর্তী কয়েক মিনিটে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বজায় রাখে তারা। ১১ মিনিটে প্রতিপক্ষকে একটি কর্নার দিতে বাধ্য হন হিজাজি মাহের এবং সেই কর্নার থেকে বক্সের মাঝখান থেকে একটি শট নেন মনোজ, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা শুরু করতে খেলার গতি অনেকটা কমে যায় এবং দুই দলই বেশ রক্ষনাত্মক হয়ে ওঠে, যেখানে কোনও পক্ষই ইতিবাচক সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। পরপর কর্নার এবং ফ্রি-কিক হতে থাকে। কিন্তু সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেনি কেউই।
৪১তম মিনিটে আইজ্যাকের পাস থেকে গিনির ফরোয়ার্ড এডমিলসন কোরেয়া বক্সের বাঁ দিক থেকে একটি অসাধারণ শট নেন, যা ডান দিকের পোস্ট ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোলমুখী ক্লেটন সিলভাকে আটকাতে প্রায় তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হায়দরাবাদের গোলকিপার অর্শদীপ সিংহ। ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড় পেনাল্টির আবেদন জানিয়েও তাতে সাড়া পাননি।
দ্বিতীয়ার্ধের দু’মিনিটের মধ্যেই কোরেয়া ফের সক্রিয় হন এবং বক্সের মধ্যে সাই গদার্ডের একটি কোণাকুনি পাস পেয়ে যান। কিন্তু গোলপোস্টের কাছে থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট মারেন। ছন্দে না থাকা ইস্টবেঙ্গল এই সময় খেলায় ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করেও প্রতিপক্ষের চাপে সফল হতে পারেনি। তবে ক্রমশ গোলের চেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। এই দুঃসময়ে একমাত্র সেটপিসই ছিল তাদের সম্বল এবং ৬৪তম মিনিটে সেই সেটপিস থেকেই গোল পায় তারা।
বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ক্লেটন সিলভার দুর্দান্ত ও মাপা ফ্রি-কিক বারে লেগে ফিরে এলে তা দুরন্ত হেডে জালে জড়িয়ে দেন জিকসন সিংহ (১-০)। গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ফ্রি কিকটি আদায় করেন এবং সিলভা বলটি নিয়ে একটি অসাধারণ ডেলিভারি দেওয়ার পরেই গোল আসে। এই গোলের পর থেকেই ক্রমশ রক্ষণাত্মক হতে শুরু করে লাল-হলুদ বাহিনী।
সম্ভবত এটাই তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া না হয়ে উঠে রক্ষণাত্মক হতে গিয়েই বারেবারে বিপদের মুখে পড়ে তারা। হায়দরাবাদ এফসি ম্যাচে তীব্রভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে যায় প্রতিপক্ষের এই প্রবণতার জন্যই। সমতা আনার মরিয়া চেষ্টা শুরু করে তারা।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে হায়দরাবাদ এফসির লেনি রড্রিগেজ এবং দেবেন্দ্র মুরগাঁওকর বদলি হিসেবে নামেন। দুই তরতাজা ফুটবলার ক্রমশ খেলা ঘোরাতে শুরু করে। মুরগাঁওকর মাঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আব্দুল রাবির পাস থেকে একটি দূরপাল্লার শট নেন, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এতেই বোঝা যায় ঘরের মাঠে নিজেদের দর্শকদের খুশি করার জন্য কতটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছিল তারা।
মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কোরেয়ার কাছে বল পাঠান মুরগাঁওকর। পিছন থেকে ওভারল্যাপে উঠে আসা মনোজের উপর ভরসা করে বক্সের বাঁ দিকে পাস বাড়ান কোরেয়া, যেখানে মনোজ ছিলেন সম্পুর্ণ অরক্ষিত। ওই ভাবে যে বাঁ দিক থেকে তিনি উঠে আসবেন, ইস্টবেঙ্গলের কোনও খেলোয়াড় হয়তো তা বুঝতেই পারেননি। ঠাণ্ডা মাথায় বলটি গোলের ডান দিকের নীচের কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে কোরেয়ার আস্থার প্রতিদান দেন মনোজ (১-১)। এই গোলই ইস্টবেঙ্গলের পঞ্চম জয়ের সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেয়।
ইস্টবেঙ্গল অবশ্য ফের ব্যবধান তৈরির সুযোগ পেয়েছিল। ছ’মিনিটের সংযুক্ত সময়ে পরপর দু’বার কর্নার পায় তারা। দু’বারই ভাল কর্নার কিক নেন ক্লেটন। কিন্তু প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার ও গোলকিপারের তৎপরতা ও নিজেদের ভুলে গোলের সংখ্যা আর বাড়াতে পারেনি তারা।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: 'ফ্লাওয়ার নয়, ফায়ার', ব্যাট হাতে বক্সিংহ ডে টেস্ট মাতানো নীতীশ রেড্ডির সেলিব্রেশনে মজেছেন সুন্দর