কলকাতা: সোমবার ঘরের মাঠে মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে (East Bengal vs Mumbai City FC) দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর দল দুর্দান্ত লড়ে ঘুরে দাঁড়ালেও এই দলের লড়াই খুশি করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসির কোচ অস্কার ব্রুজোনকে (Oscar Bruzon)। তাঁর মতে, দল শুরু থেকে ঠিকমতো খেললে এই লড়াইয়ের প্রয়োজনই পড়ত না।
দ্বিতীয়ার্ধে মেজাজ পাল্টে ঘুরে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত ২-৩-এ হেরে শূন্য হাতেই মাঠ ছাড়তে হয় লাল-হলুদ বাহিনীকে। হারের পর স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ স্প্যানিশ কোচ বলেন, 'প্রথমার্ধে আমাদের দল খুবই খারাপ খেলেছে। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের দল। কিন্তু শেষের দিকের এক দুর্ভাগ্যজনক ভুলেই আমরা ম্যাচটা হেরে গেলাম। আসলে মাঝমাঠ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। ডানদিকেও সমস্যা হচ্ছে আমাদের। ওই দিকে ফুলব্যাক পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে রক্ষণও দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং প্রতিপক্ষরা ওই দিক দিয়েই বারবার আক্রমণে উঠছে। আজ প্রথমার্ধে তা-ই হয়েছে'।
প্রথমার্ধে দু’গোল হজম করার পর পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে যে ভাবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল তারা, এ দিনও সে ভাবেই ঘুরে দাঁড়ায় এবং ৬৬ মিনিটের মাথায় সাহিল পানওয়ারের নিজ গোল ও ৮৩ মিনিটের মাথায় ডেভিড লালনসাঙ্গার গোলে সমতা এনে ফেলে তারা। প্রথমার্ধে যেখানে প্রতিপক্ষের বক্সে ছ’বার বল ধরে তারা, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে বক্সে ২৪বার বল ছোঁয় লাল-হলুদ খেলোয়াড়রা। প্রথমার্ধে ২৮বার ফাইনাল থার্ডে প্রবেশ করে যে দল, সেই ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয়ার্ধে ৩৬বার ফাইনাল থার্ডে ঢোকে। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে গ্রিক ফরোয়ার্ড কারেলিসকে আটকাতে না পারার মাশুল দিতে হয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। খালি হাতে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
দ্বিতীয়ার্ধে দলের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেও দলের সমস্যার কথা তুলে ধরে অস্কার বলেন, 'দ্বিতীয়ার্ধে ছেলেরা অনেক উজ্জীবিত ফুটবল খেলেছে। মনের চেয়ে হৃদয় দিয়ে বেশি খেলেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেকগুলো গোলের সুযোগও তৈরি করেছি আমরা। ক্লেটন, মহেশরা সহজ সুযোগ মিস করেছে। এটাই এখন আমাদের দলের বাস্তব অবস্থা। যথেষ্ট খেলোয়াড় নেই, চোট সমস্যা, এগারোজন বাছতে সমস্যা হচ্ছে, পরিবর্তন করতে সমস্যা হচ্ছে। দলের একাধিক খেলোয়াড়কে তাদের অনভ্যস্ত জায়গায় খেলাতে হচ্ছে'।
এই মাসেই তাদের সামনে আরও চার-চারটি কঠিন ম্যাচ। শনিবার পরবর্তী ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান এসজি-র মুখোমুখি হতে হবে তাদের। এর পরেও এফসি গোয়া, কেরালা ব্লাস্টার্স ও ফের মুম্বইয়ের ঘরের মাঠে তাদের মুখোমুখি হতে হবে অস্কার-বাহিনীকে। এই ম্যাচগুলি নিয়ে যে বেশ চিন্তায় রয়েছেন স্প্যানিশ কোচ, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। তাঁর মতে, এ ভাবে খেললে আইএসএলের মতো কঠিন লিগে পয়েন্ট টেবলের ওপরের দিকে ওঠা যাবে না।
তিনি বলেন, 'আমরা আসলে হৃদয় দিয়ে বেশি খেলছি। যখন আমরা পিছিয়ে থাকি বা ড্র করি, তখন আমরা বেশি ভাল খেলি। কিন্তু যখন এগিয়ে থাকি, তখন ততটা ভাল খেলতে পারি না, নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারি না। এই ধরনের কঠিন লিগে এ ভাবে পয়েন্ট টেবলের ওপর দিকে থাকা যায় না। আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে'।
সোমবারের ম্যাচেও এমনই হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, 'সমতা আনার পরেও খেলাটাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন ছিল আমাদের, যেটা আমরা পারিনি। আত্মতুষ্টিকে এর জন্য কিছুটা দায়ী করা যেতে পারে। খেলায় নিয়ন্ত্রণ না রেখে যদি দ্রুত আক্রমণে উঠি, তা হলে সমস্যা তো হবেই। ডিসেম্বরে আমরা একটা ভাল জায়গার দিকে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এই সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আমরা আবার আগের জায়গাতেই ফিরে গিয়েছি। যেটা আমি আশা করিনি'।
এই হারের ফলে ১৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবলের ১১ নম্বরেই রয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল। সেরা ছয়ের দৌড়ে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে তারা। দলের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত কোচ বলেন, 'আমাদের দলে এই মুহূর্তে যথেষ্ট খেলোয়াড় নেই, যাদের নিয়ে আমরা একটা ঠিকঠাক এগারোজনের দল গড়তে পারি। এক পজিশনের খেলোয়াড়কে অন্য পজিশনে খেলাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মাঝমাঠে। তাদের নিয়ে গবেষণা করতে হচ্ছে। লিগের এই পর্যায়ে এসে যা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। তবে আশা করি, যখন সবাই ফিরে আসবে, তখন আমরাও ছন্দে ফিরে আসব'। আপাতত এই আশাতেই রয়েছেন লাল-হলুদ কোচ।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বদলে যেতে পারে অনেক হিসেবনিকেশ, নতুন বছরে কলকাতার তিন প্রধান কাদের কাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে?