নয়াদিল্লি: ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) যা কখনও করতে পারেনি তারা, এ বার সেটাই করতে পেরেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal)। কাজটা যদিও বিশাল কিছু নয়, পরপর দুই ম্যাচে জয়। কিন্তু গত তিনবারে এটাও তারা করতে পারেনি কখনও। সে দিক থেকে দেখতে গেলে উন্নতি তো হয়েছেই লাল-হলুদ বাহিনীর পারফরম্যান্সে। বুধবার আর একটা প্রথম ‘কীর্তি’-র সামনে কার্লস কুয়াদ্রাতের দল, জয়ের হ্যাটট্রিক। সেটাও করে ফেলতে পারলে তার পরের কীর্তি-র দিকেও এগিয়ে যেতে পারে তারা, প্লে-অফে পদার্পন।


এতগুলো ঘটনা পরপর সাজানো আছে তাদের সামনে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সেগুলো পাওয়া সম্ভব হবে কি না, তা পুরোপুরি তাদের হাতে নেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল (২১ ম্যাচে ২৪) লিগ টেবলের ছয় নম্বরে থাকলেও রাতে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ২-১-এ হারিয়ে সেই জায়গাটা দখল করে এই দৌড়ে তাদের কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়েছে চেন্নাইয়িন এফসি (২১ ম্যাচে ২৭)। এই ম্যাচে হেরে যাওয়ায় ছ’নম্বরের দৌড় থেকে ছিটকে গেল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-ও (২১ ম্যাচে ২৩)। ফলে ছ’নম্বর জায়গার দৌড়ে আপাতত লড়াই শুধু ইস্টবেঙ্গল এবং চেন্নাইয়িন এফসি-র মধ্যে।


শেষ ম্যাচে জিতলে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করবে লাল-হলুদ বাহিনী। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে যদি চেন্নাইয়িন এফসি ড্র-ও করে, তা হলে তারা ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্ব শেষ করবে। সেক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলের যাত্রা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি বুধবার ইস্টবেঙ্গল জেতে এবং চেন্নাইয়িন তাদের শেষ ম্যাচে হারে, তা হলে দুই দলের হেড টু হেড পরিসংখ্যানের বিচারে ইস্টবেঙ্গলই প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।


তাই বুধবার জিতলেও রবিবার চেন্নাইয়িনের ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে ক্লেটন সিলভাদের। তার আগে নিজেদের কাজটা অবশ্য করতেই হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে এবং তা হল বুধবার পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে জয়। মাদি তালাল, উইলমার জর্ডনদের হারাতে না পারলে সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে তাদের। তবে গত দু’টি ম্যাচে যে রকম খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের তারকারা, তা সমর্থকদের যথেষ্ট আশাবাদী করে তোলার মতোই।


বুধবারের ম্যাচে চিন্তার বিষয় একটাই। গোলকিপার প্রভসুখন গিল ও মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীর অনুপস্থিতি। দু’জনেরই কার্ড সমস্যা। ফলে কেউই এই ম্যাচে মাঠে নামতে পারবেন না। মাঝমাঠ যে ভাবে সামলান শৌভিক, যে ভাবে প্রতিপক্ষের সবচেয়ে কার্যকরী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে অকেজো করে দেন শৌভিক, তা দলের অন্য এখনও কেউ করে দেখাতে পারেনি। এর আগে শৌভিকের জায়গায় অজয় ছেত্রী খেলেছেন। এই ম্যাচে তাঁকেই খেলানো হবে, নাকি সদ্য দলে আনা শ্যামল বেসরাকে পরখ করে দেখবেন কোচ কুয়াদ্রাত, সেটাই দেখার।


সাতটি ক্লিন শিট রাখা ও ৫৪টি সেভ করা গোলকিপার গিল এ পর্যন্ত দলের বহু অবধারিত হার বাঁচিয়েছেন। কিন্তু চলতি লিগে তাঁর জায়গায় এক মিনিটের জন্যও গোল সামলাননি দলের অন্য কোনও গোলরক্ষক। দলে কমলজিৎ সিংয়ের মতো অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আছেন, যিনি গত মরশুমে ১৭টি ম্যাচ খেলে ৫৪টি সেভ করেছিলেন। কিন্তু এই মরশুমে একটি ম্যাচেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। এ ছাড়াও তিন তরুণ গোলরক্ষক আদিত্য পাত্র, জুলফিকার গাজি ও রণিত সরকার রয়েছেন দলে। বুধবার ক্রসবারের নীচে কাকে দেখা যাবে, সেটাই দেখার।


জানুয়ারির অবকাশের আগে ও পরে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্সের খতিয়ানে খুব একটা তফাৎ হয়নি। অবকাশের আগে তারা দশটি ম্যাচে ১১ পয়েন্ট অর্জন করে। জিতেছিল মাত্র দুটি ম্যাচ, পাঁচটিতে ড্র করে। অবকাশের পর তারা চারটি ম্যাচে জিতলেও একটিতে ড্র করে ও ছ’টি ম্যাচে হেরে ১৩ পয়েন্ট অর্জন করে। জানুয়ারির অবকাশের পর হারের সংখ্যা বাড়লেও এই প্রথম আইএসএলে টানা দুটি ম্যাচে জিতেছে ইস্টবেঙ্গল।


এক সপ্তাহ আগে কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-২-এ হারায় ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো ও নাওরেম মহেশ সিং। তাঁদের গোলে ফেরাটা দলের পক্ষে অবশ্যই ইতিবাচক ইঙ্গিত ছিল। গত ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে দলের সেরা গোলস্কোরার ক্লেটন সিলভাও গোলের ফেরেন তার আগের ছ’টি ম্যাচে গোল না পাওয়ার পর। সেই ২-১ জয়ে আর একটি গোল করেন ক্রেসপো। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধেও গোল পেয়েছিলেন ক্রেসপো। এ মরশুমে চারটি গোল করে ফেলেছেন তিনি।


ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করার আগে মহেশ লিগের তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে গোল পান, অর্থাৎ সেই ২১ অক্টোবর শেষ গোল করেছিলেন তিনি। তার পরে ১৫টি ম্যাচে কোনও গোল পাননি ভারতীয় দলের তারকা উইঙ্গার। সব মিলিয়ে মাত্র চারটি গোল করলেও ৩২টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে দলের প্লে-অফ সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।


দলের তরুণ ব্রিগেডের ভাল পারফরম্যান্সও আশাবাদী করে তুলতে পারে সমর্থকদের। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সায়ন ব্যানার্জি, ফরোয়ার্ড পিভি বিষ্ণু এবং গত ম্যাচে নজর কাড়া আমন সিকে-র ওপর কোচ যে ভরসা রাখতে পারেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছে এঁরা। সদ্য রিজার্ভ দল থেকে আনা ফরোয়ার্ড মহীতোষ রায়কে হয়তো বুধবার সিনিয়র দলের হয়ে খেলতে দেখা যাবে। মঙ্গলবার কুয়াদ্রাতের সাংবাদিক বৈঠকে তিনিও থাকায় সে রকমই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।


গত মরশুমে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের এক নম্বর লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে পাঞ্জাব এফসি। কিন্তু আইএসএলের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ধাতস্থ হতে অনেক সময় লেগে যায় তাদের। তবে এশিয়ান কাপের জন্য অবকাশের পর ঘুরে দাঁড়ায় তারা।


লিগ শুরুর পর থেকে টানা ১৩৫ দিন টেবলের নীচে তিনটি দলের মধ্যে ছিল গ্রিক কোচ স্টাইকোস ভার্গেটিসের দল। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৩-১-এ হারানোর পর তারা ন’নম্বরে উঠে আসে। শেষ তিন থেকে সেই প্রথম বেরিয়ে আসে তারা। অবকাশের পর ন’টি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জিতে ও একটি ড্র করে ১৩ পয়েন্ট অর্জন করে তারা। কিন্তু গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হারায় ও একটিতে ড্র করায় তারা আবার শেষ তিনে ঢুকে পড়ে এবং গত ম্যাচে মোহনবাগানের কাছে হেরে তাদের প্লে অফে খেলার সম্ভাবনাও কার্যত শেষ হয়ে যায়।


ঘরের মাঠে তাদের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। চলতি লিগে যে পাঁচটি ম্যাচে তারা জিতেছে, তার মধ্যে মাত্র দু’টি ছিল ঘরের মাঠে। নিজেদের মাঠে এ পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচে হেরেছে তারা। শনিবার মোহনবাগানের কাছে ০-১-এ হারলেও বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। অবধারিত গোলের সুযোগও হাতছাড়া হয় তাদের। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চাপমুক্ত হয়ে হয়তো তারা আরও ভাল খেলবে।


লুকা মাজেন (২১ ম্যাচে ৭ গোল), উইলমার জর্ডন (১৪ ম্যাচে ৬ গোল), মাদি তালাল-ই (২১ ম্যাচে ৫ গোল) এই দলের প্রধান ভরসা। হুয়ান মেরাও মাঝমাঠের ভরসা। মোহনবাগান এঁদের ওপর যে রকম কড়া পাহাড়া রেখেছিল, ইস্টবেঙ্গলকেও সে ভাবেই এঁদের আটকাতে হবে। না হলে এ বারেও প্লে অফে ওঠার স্বপ্ন অধরা থেকে যেতে পারে তাদের।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: লাল কার্ড দেখে রেফারিকে মারতে উদ্যত ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! ভাইরাল ভিডিও