কলকাতা: গত ইন্ডিয়ান সুপার লিগে কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে ১৩টি গোল করে সেরা গোলদাতার সন্মান অর্জন করে নেন যে গ্রিক ফরোয়ার্ড, সেই দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস (Dimitrios Diamantakos) এ বার ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal) যোগ দিয়েছেন। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে একটি ম্যাচ খেলা হয়েও গিয়েছে তাঁর। সোমবার ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে নামেন তিনি এবং গোলও পান।


গত মরশুমে ভাল খেললেও বেশি গোল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলে তারা ২৭টি গোল করে। গোল করার দিক থেকে তাদের পিছনে ছিল মাত্র তিনটি দল। এ বার তাই আক্রমণ বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। তাঁর পরামর্শে ক্লেটন সিলভার সঙ্গে দিয়ামান্তাকস, মাদি তালালদের (Madih Talal) মতো বিদেশি অ্যাটাকারদের জুড়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। তাই এ বার গোলের সংখ্যা অনেক বাড়বে বলে আশা সমর্থকদের।


সোমবার, ৩০ জুলাই ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) ম্যাচে তারই এক ঝলক দেখা গিয়েছিল। সে দিন দিয়ামান্তাকস ও মাদি তালাল নেমেছিলেন মাঠে। তালাল শুরু থেকে খেললেও ইস্টবেঙ্গলের ‘দিমি’ নামেন দ্বিতীয়ার্ধে। দিয়ামান্তাকস নামার পরেই দলের চেহারা পাল্টে যায় এবং ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের বিরুদ্ধে জয় নিশ্চিত করে ফেলে তারা। বিরতিতে ১-১ অবস্থায় সাজঘরে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে ধার আরও বাড়ে দিয়ামান্তাকস নামার পরেই। তাঁর সঙ্গে তালালও আক্রমণে উঠে আসেন, সঙ্গে পিভি বিষ্ণুও। মাঝমাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান ম্যাচের সেরা তালাল। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন শৌভিক চক্রবর্তী।


যে উদ্দেশ্যে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দিয়ামান্তাকসকে নামান লাল-হলুদ কোচ কুয়াদ্রাত, সেই উদ্দেশ্য সফল হয় ৬১ মিনিটের মাথায় দিয়ামান্তাকসের হেডে। বাঁ দিক থেকে তাঁকে মাপা ক্রস বাড়ান জোথানপুইয়া। গোলের সামনে থেকে দুর্দান্ত হেডে জালে বল জড়িয়ে দেন গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা।


এই গোলে এগিয়ে গিয়ে আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল দল এবং আরও একটি গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো। এই গোলটিতেও দিয়ামান্তাকসের অবদান ছিল। ৬৮ মিনিটের মাথায় বক্সের সামনে থেকে সল ক্রেসপোকে কোণাকুনি পাসে বল পাঠান দিয়ামান্তাকস। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গোলে শট নেন ক্রেসপো, যা পোস্টের ভিতরে লেগে গোলে ঢুকে যায়। ৩-১-এ জয়ের পর এবং তালাল ও দিয়ামান্তাকসের পারফরম্যান্স দেখে সমর্থকেরা পুরো মরশুম নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী।


কোচ কুয়াদ্রাতও এই দুই তারকাকে নিয়ে বলেছেন, 'দু’জনেই (দিয়ামান্তাকস ও তালাল) সত্যিই ভাল খেলেছে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ হিসেবে যথেষ্ট ভাল। দিমিত্রিয়স আমাদের সঙ্গে সপ্তাহখানেক অনুশীলন করেছে। কিন্তু শারীরিক কারণে ও বেশ কয়েকটা ডুয়েলে সফল হয়েছে। তবে ও যে সত্যিই সেরা স্কোরার, তা সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এর আগে ও দুবার খুব কম সময়ের জন্য মাঠে নেমেছিল এবং একটা প্রস্তুতি ম্যাচে গোল করেছিল। তাই বলতেই হবে, দারুণ পারফরম্যান্স ওর'।


গত মরশুমে পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে খেলার পর এ বছর ইস্টবেঙ্গলে আসা তালালের প্রশংসাও করেন কুয়াদ্রাত। বলেন, 'তালাল সৃষ্টিশীল ফুটবলার। খুবই ভাল খেলোয়াড়। মাঠে নামলে ও খুব বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলে। বল নিয়ে কী করবে, না করবে, তা দ্রুত ভেবে নিতে পারে'। সে দিন তালালই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন। তালালের প্রশংসা শোনা গেল দিয়ামান্তাকসের মুখেও। তিনি বলেন, 'তালাল অসাধারণ খেলোয়াড়। আমাদের সঙ্গে ভাল বোঝাপড়া তৈরি করে নিয়েছে ও। সে জন্যই সফল হতে পারছি আমরা। তবে শুধু তালাল নয়, দলের সবাই ভাল খেলছে'।


ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচেই গোল পেয়ে খুশি দিয়ামান্তাকস বলেন, 'গোল করতে পারলে খুবই আনন্দ পাই আমি। দলকে জিততে সাহায্য করেছি, ভাল লাগছে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আরও ম্যাচ জিতব'। সমর্থকদের দেখে মুগ্ধ গ্রিক ফরোয়ার্ড বলেন, 'আমাদের জেতানোর জন্য স্টেডিয়ামে যে পরিবেশ তৈরি করেছে সমর্থকেরা, সে জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ। আমি চাই, প্রত্যেক ম্যাচে সমর্থকেরা সবাই আসুক। আমরা ওদের জন্য সর্বস্ব উজাড় করে দেব'।


দিয়ামান্তাকস আইএসএলে প্রথমে কেরল ব্লাস্টার্সে যোগ দেন ২০২২-এ এবং গত দুই মরশুমে ৩৮টি ম্যাচে ২৩টি গোল করেছেন। ছ’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। আইএসএলে প্রথম মরশুমে দশটি গোল করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আরও এক মরশুম থাকলে তিনি দলকে আরও সাফল্য এনে দিতে পারেন। মাঠের মধ্যে তাঁর ক্যারিশমা তো সারা দুনিয়া দেখেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে, ড্রেসিংরুমে দলনেতা ও রোল মডেল হয়ে ওঠার যে ক্ষমতা দেখিয়েছেন দিয়ামান্তাকস, তাও প্রশংসনীয়।


গ্রিসের জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন এই সফল ফরোয়ার্ড। ২০১২-য় উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স আপ গ্রিক দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি। নিজের দেশ ছাড়াও জার্মানি, ক্রোয়েশিয়া ও ইজরায়েলের ক্লাব ফুটবলেও খেলেছেন তিনি।


গত মরশুমের অনেকটা সময়ই ব্লাস্টার্সের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি আদ্রিয়ান লুনা। অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। সেই সময়েও যে ভাবে দলকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন এই গ্রিক ফরোয়ার্ড, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। যে ভাবে প্রায় প্রতি ম্যাচে বিপক্ষের গোল এরিয়ায় সবচেয়ে বড় ত্রাস হয়ে ওঠেন তিনি, তার কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। নিজের জন্য যেমন জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন, তেমনই প্রতিপক্ষের গোলের সামনে সতীর্থদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বারবার। গোলের নিখুঁত পাসও বাড়িয়েছেন অনেক। এ বার ইস্টবেঙ্গলও তাঁর এই জাদুর ছোঁয়া লাগতে শুরু করে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: মোহনবাগানের হয়ে লিগ শিল্ডজয়ী তারকাকেই ষষ্ঠ বিদেশি হিসাবে সই করাল ইস্টবেঙ্গল