বেঙ্গালুরু: মরশুমের বদলালেও ছবিটা যেন সেই এক। বিগত চারবারে হয়নি, এবারেও প্রথম ম্যাচে জয় অধরাই রয়ে গেল। আইএসএলের (ISL 2024-25) শুরুটা একেবারেই ভালভাবে হল না ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal)। বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে ০-১ স্কোরলাইনে পরাজিত হল কার্লেস কুয়াদ্রাতের দল। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আবার লাল কার্ডও দেখলেন লাল হলুদের লালচুঙনুঙ্গা।

  


এ দিন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই তাদের চাপে রাখেন বেঙ্গালুরুর অ্যাটাকাররা। তবে প্রায়ই প্রতি আক্রমণে উঠেছে কলকাতার দল। দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাদি তালালকে নামানোর পর তাদের আক্রমণে ধার আরও বাড়ে। ম্যাচের শেষ দিকে একসঙ্গে প্রায় সাতজন আক্রমণাত্মক ফুটবলারকে নামিয়েও সমতা আনতে পারেননি লাল-হলুদ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত।    


দুই বিদেশী সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহের ও হেক্টর ইউস্তেকে দিয়ে শুরু করানোর ফলে তালালকে বেঞ্চে রেখে প্রথম এগারো বাছেন কুয়াদ্রাত। মাঝমাঠে রাখেন সল ক্রেসপোকে ও সামনে রাখেন নন্দকুমার, দিয়ামান্তাকস ও মহেশকে। অন্য দিকে সুনীল ছেত্রী, এডগার মেনদেজ ও ভিনিথ ভেঙ্কটেশকে সামনে রেখে ৪-৩-৩-এ দল সাজান বেঙ্গালুরুর কোচ গেরার্ড জারাগোজা।  


শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল বেঙ্গালুরু এফসি। তবে নিজেদের গোল এলাকায় খেলোয়াড় বাড়িয়ে বারবার তাদের প্রতিহত করে ইস্টবেঙ্গল। গুটিকয়েক কাউন্টার অ্যাটাকের সুযোগ পেলেও ইস্টবেঙ্গল তা কাজে লাগাতে পারেনি। ১২ মিনিটের মাথায় প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে যে দুর্দান্ত গোলমুখী শটটি নেন জিকসন সিং, তা গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু অনবদ্য সেভ না করলে তখনই এগিয়ে যেত ইস্টবেঙ্গল। এর পাঁচ মিনিট পরে বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডগার মেনদেজের দূরপাল্লার শট পোস্টের সামান্য বাইরে চলে যায়। 


নাগাড়ে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে চাপে রাখার ফল বেঙ্গালুরু এফসি পায় ২৫ মিনিটের মাথায়, যখন তরুণ মিডফিল্ডার ভিনিথ ভেঙ্কটেশ দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। বক্সের মাথায় সুনীল ছেত্রীর পা থেকে বল পেয়ে বক্সের ভিতর ডানদিকে ভিনিথকে দেন মেনদেজ। তিনি সামনে প্রায় ফাঁকা জায়গা পেয়ে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে বল গোলে ঢোকাতে ভুল করেননি (১-০)। তিনজনই কার্যত অরক্ষিত ছিলেন। 


ইস্টবেঙ্গল তাদের প্রথম ইতিবাচক আক্রমণটি তৈরি করে ম্যাচের ৩২ মিনিটের মাথায়, যখন বাঁ দিক দিয়ে ওঠা লালচুঙনুঙ্গার ক্রস গুরপ্রীতের গায়ে লেগে বক্সের মাঝখানে শৌভিক চক্রবর্তীর কাছে পৌঁছয়। কিন্তু শৌভিকের শট বারের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। 


বেঙ্গালুরু অবশ্য সময় নষ্ট না করে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং বক্সের ঠিক সামনে ভিনিথ একটি ফ্রি কিকও আদায় করে নেন। কিন্তু সেই ফ্রি কিক থেকে নেওয়া সুনীলের বাঁক খাওয়ানো শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ইস্টবেঙ্গল সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং একাধিক সুযোগও তৈরি করে। কিন্তু কোনওটিই গোলে পরিণত করতে পারেনি। 


দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ছবিটা খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। প্রথমার্ধের মতোই বেঙ্গালুরু আক্রমণাত্মক মেজাজেই ছিল। তবে তাঁদের দখল থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে নন্দকুমার যে দূরপাল্লার নীচু শটটি নিয়েছিলেন, তা গুরপ্রীত কোনও রকমে না বাঁচালে হয়তো সমতা এনে ফেলত ইস্টবেঙ্গল। পরবর্তী মিনিটেই মেনদেজের দূরপাল্লার জোরালো গোলমুখী শট অসাধারণ সেভ করে দলকে বাঁচান প্রভসুখন গিল 


দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ১২ মিনিট গড়িয়ে যাওয়ার পরে দিয়ামান্তাকসের জায়গায় মাদি তালালকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। ক্রেসপো ও তালাল জুটির বোঝাপড়াকে সম্ভবত কাজে লাগাতে চান তাদের কোচ কুয়াদ্রাত। তালালকে ওপরেই খেলতে দেখা যায়। 


বিরতির পরই ভিনিথের জায়গায় শিবশক্তি নারায়নণকে নামায় বেঙ্গালুরু। ৬০ মিনিটের মাথায় একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করে তারা। সুনীল, মেনদেজ ও জোভানোভিচকে তুলে নেন কোচ জারাগোজা। মাঠে নামেন তাদের নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার জর্জ পেরেইরা দিয়াজ। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ওপর চাপ বাড়ানোই ছিল উদ্দেশ্য। মাঠে আসার দশ মিনিটের মধ্যে তিনি প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েও দেন। কিন্তু তিনি অফসাইডে থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। 


পাল্টা বেঙ্গালুরুর ওপর চাপ বাড়াতে ৭১ মিনিটের মাথায় ক্লেটন সিলভা এবং দুই তরুণ আক্রমণাত্মক ফুটবলার ও আমন সিকে ও পিভি বিষ্ণুকে নামান কুয়াদ্রাত। হিজাজি, রকিপকে তুলে নেন। তালাল মাঠে নামার পরে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে কিছুটা গতি আসে। এই গতি বাড়াতেই ক্লেটনদের তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ৭৫ মিনিটের মাথায় বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শটও নেন বিষ্ণু। কিন্তু তা সোজা গুরপ্রীতের হাতে। ৮৫ মিনিটের মাথায় ক্লেটনের শট অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এর পরে ডেভিড লালনসাঙ্গাও নামেন।  ম্যাচের শেষ দিকে লাল-হলুদ বাহিনীর  সাতজন আক্রমণাত্মক ফুটবলারকে মাঠে দেখা যায়।   


কিন্তু  ৮৭ মিনিটের মাথায় রায়ান উইলিয়ামসকে ফাউল করে ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখেন লালচুঙনুঙ্গা। ফলে তাদের রক্ষণের শক্তি অনেকটাই কমে যায়। এগারো মিনিটের বাড়তি সময়-সহ প্রায় ১৪ মিনিট দশ জনে খেলতে হয় লাল-হলুদ বাহিনীকে। তবুও তাঁরা শেষ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বজায় রাখে। কিন্তু অন্তত এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য যা প্রয়োজন ছিল তাদের, সেই মহার্ঘ্য গোল পায়নি তারা।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: দলীপ ট্রফিতে বাংলার ঈশ্বরণের দুরন্ত সেঞ্চুরি সত্ত্বেও কম্বোজের ৫ উইকেটে চাপে ইন্ডিয়া 'বি'