জামশেদপুর: হারের হ্যাটট্রিকের পর বিদায় নিয়েছেন কার্লেস কুয়াদ্রাত। জামশেদপুর ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) টাচ লাইনে ছিলেন বিনো জর্জ। তবে কোচ বদল হলেও বদলাল না ভাগ্য। খালিদ জামিলের জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ০-২ স্কোরলাইনে পরাজিত হল লাল হলুদ। পেনাল্টি নষ্ট থেকে একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার খেসারত দিল ইস্টবেঙ্গল। নাগাড়ে চার হারে আইএসএলের (ISL 2024-25) লিগ তালিকায় আপাতত সবার নীচে ইস্টবেঙ্গল। আর খালিদ জামিলের জামশেদপুর এফসি গত ম্যাচে হারের পর এই ম্যাচে জয়ে ফিরেই লিগ তালিকার তিন নম্বরে উঠে এল। কলকাতা ডার্বির আগে লাল হলুদ শিবিরে যে উদ্বেগ বাড়ল, তা বলাই বাহুল্য।
মোট ২৪টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও এ দিন একবারও বিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি লাল-হলুদ ব্রিগেড। বিপক্ষের বক্সে ৩৩ বার বলে পা ছুঁয়েও কিছু করতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় পেনাল্টি পেয়েও সেই সুযোগও হাতছাড়া করে তারা। তুলনায় জামশেদপুর ১১টি সুযোগ পেয়ে তার মধ্যে দু’টি কাজে লাগিয়ে নেয়।
প্রথমে ২১ মিনিটের মাথায় ইস্পাতনগরীর দলের জাপানি মিডফিল্ডার রেই তাচিকাওয়া গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ৭০ মিনিটের মাথায় লাল চুঙনুঙ্গার নিজগোল লাল-হলুদ বাহিনীর হার নিশ্চিত করে। তবে অথচ সারা ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল কলকাতার দল। এমনকী গোলের লক্ষ্যে নেওয়া শটের সংখ্যাতেও প্রতিপক্ষের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে হাফ ডজন শট গোলে রাখে তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেন সল ক্রেসপো।
এ দিন দলে তিনটি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ বিনো জর্জ। ডিফেন্ডার প্রভাত লাকরা, লাল চুঙনুঙ্গা ও মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো নামেন জিকসন সিং, মার্ক জোথানপুইয়া ও হিজাজি মাহেরের জায়গায়। জামশেদপুর এফসি দু’টি পরিবর্তন করে ঘরের মাঠে নামে। ৪-৩-৩ ছকে শুরু করা ইস্টবেঙ্গল শুরু থেকেই বল দখলে রেখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখার চেষ্টা শুরু করে। প্রথমার্ধে ৭১ শতাংশ বল তাদের দখলেই ছিল। তাদের উন্নত পারফরম্যান্স দেখে মনে হয় নিজেদের ভুল শুধরে জয়ে ফিরতে মরিয়া তারা। পরপর কয়েকটি গোলের সুযোগও তৈরি করে তারা।
কিন্তু নিজেদের খেলায় বাড়তি গতি ও আগ্রাসন আনলেও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে ভুল করার অভ্যাস পাল্টায়নি তাদের। ১১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে থেকে প্রায় ফাঁকা গোল পেয়েও বল বাইরে পাঠান মাদি তালাল। এর তিন মিনিট পরেই ক্লেটনের গোলের পাসে দুর্বল শট নেন তিনি।
বল তাদের পায়ে কম থাকলেও অল আউট যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ফাঁক দিয়ে বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের গোল এলাকায় ঢুকে পড়েন জামশেদপুরের অ্যাটাকাররা। ১৭ মিনিটের মাথায় ছ’গজের বক্সের মাথা থেকে নেওয়া জর্ডন মারের শট দেবজিৎ ঘোষ শরীর দিয়ে না আটকালে ইস্টবেঙ্গল তখনই পিছিয়ে পড়ত। কিন্তু তাদের পিছিয়ে দিতে আর বেশি সময় নেয়নি ইস্পাতনগরীর দল। ২১ মিনিটের মাথাতেই দলকে এগিয়ে দেন জাপানি মিডফিল্ডার রেই তাচিকাওয়া।
বক্সের মাথা থেকে প্রথমে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন মহম্মদ শনন। তা ব্লক করেন হেক্টর ইউস্তে, যাঁর পায়ে লেগে বল ছিটকে আসে শননের পিছনে জাপানি তারকার পায়ে। কিন্তু তাঁকে আটকাতে যাননি কোনও ডিফেন্ডার। সামনে অনেকটা জায়গা ও সময় পেয়ে নিখুঁত ভাবে জালে বল জড়িয়ে দেন তাচিকাওয়া। গোলকিপারের কিছুই করার ছিল না (১-০)। এই গোল করার মিনিট দশেক পর অবশ্য চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাচিকাওয়াকে। তাঁর জায়গায় নামেন হাভিয়ে সিভেরিও, যিনি গত মরশুমের মাঝখানে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে জামশেদপুর শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন।
গোল খাওয়ার পরও সমতা আনার একাধিক সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। ৩২ মিনিটের মাথায় ছ’গজের বক্সের কোণ থেকে নেওয়া ক্লেটনের শট অবিশ্বাস্য ভাবে বারের ওপর উড়ে যায়। ৩৬ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান ক্লেটন। কিন্তু ছ’গজের বক্সের সামনে থেকে সোজা গোলকিপারের হাতে বল তুলে দেন তিনি। বাঁ উইং থেকে মহেশ অসাধারণ ক্রস দিয়েছিলেন ক্লেটনকে। ৪৪ মিনিটের মাথায় ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলকিপারের গায়ে শট মারেন তালাল। এত গোলের সুযোগ পেয়েও গোল করতে না পারার খেসারত দিতে হয় তাদের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও একাধিক গোলের সুযোগ পায় লাল-হলুদ বাহিনী। ৪৭ মিনিটের মাথায় তালালের দুর্বল শট ধরতে অসুবিধা হয়নি আলবিনোর। ৫১ মিনিটের মাথায় চুঙনুঙ্গার ক্রস থেকে গোলের সামনে বল পেয়েও তা গোলে ঠেলতে পারেননি ক্লেটন। ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ আটকে বারবার পাল্টা আক্রমণে উঠতে দেখা যায় জামশেদপুর এফসি-কে। ৫৩ মিনিটের মাথায় ইমরান খানের ক্রস পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৫৮ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে শননের দূরপাল্লার শট বারের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
আক্রমণের তীব্রতা বাড়াতে ৬০ মিনিটের মাথায় মহেশকে তুলে বিষ্ণুকে নামান লাল-হলুদ কোচ বিনো জর্জ। তিনি নেমেই বক্সের মধ্যে গোলের বল পেয়ে গেলেও দীর্ঘদেহী নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার তাঁকে বাধা দেওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া হয় তাঁর। সেই বল ছিটকে আসার পর নন্দকুমার কাট ব্যাক করেন ক্লেটনকে। ক্লেটন গোলে শট নিতে যাওয়ার আগেই তাঁকে পিছন থেকে আঘাত করেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ এবং রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দেরি করেননি।
এ দিনের ম্যাচে যে জয়ভাগ্য ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ছিল না, তা ফের প্রমাণ হয় সল ক্রেসপোর পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায়। ক্রেসপোর কম গতির পেনাল্টি কিক আটকাতে অসুবিধা হয়নি আলবিনোর। আইএসএলে এই নিয়ে পঞ্চম পেনাল্টি আটকালেন তিনি। লিগে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি সেভ করার কৃতিত্ব তাঁরই। আরও একটি অবধারিত গোলের সুযোগ ক্লেটন হাতছাড়া করেন ৬৬ মিনিটের মাথায়। গোলকিপার এগিয়ে আসায় গোল ফাঁকা হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ক্লেটনের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
কিন্তু ৭০ মিনিটের মাথায় যে ঘটনাটি ঘটে, তা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে ছিল অভাবনীয়। বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে ক্রস দেন জর্ডন মারে, যা বক্সের বাঁ দিকে পৌঁছলে তা ফের মারের কাছে পাঠানোর জন্য ফিরতি ক্রস দেন ইমরান। কিন্তু মারের পায়ে বল পৌঁছতে না দেওয়ার জন্য তা আটকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেদের গোলেই বল ঠেলে দেন চুঙনুঙ্গা (২-০)।
এর পরেও গোলের চেষ্টা ছাড়েনি ইস্টবেঙ্গল। ৭২ মিনিটের মাথায় ক্রেসপোর ক্রসে হেড দিয়ে গোলের দিকে বল পাঠান ইউস্তে। কিন্তু এ বারও তা বারে লেগে ফিরে আসে। ৭৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে ক্রেসপোর শট ফের বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৮২ মিনিটের মাথায় প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া তালালের শট দুর্দান্ত সেভ করেন আলবিনো। এ দিন অসাধারণ ফর্মে ছিলেন জামশেদপুরের গোলকিপার। ৮৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে সুবিধাজনক ও পছন্দের জায়গায় ফ্রিকিক পেলেও তা গোলে রাখতে পারেননি ক্লেটন।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: ম্যাগুয়ারের শেষ মুহূর্তের গোলে ড্র ১০ জনের ম্যান ইউনাইটেডের, স্পার্সের ১০০ শতাংশ রেকর্ড অক্ষত