কলকাতা: একটি জয়। শুক্রবার থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে একটি জয় পেলেই সরাসরি এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে পড়বে ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু এই জয় বোধহয় অতটা সহজ হবে না। প্রতিপক্ষ লেবাননের নেজমেহ এসসি এমন এক দল, যারা গত দুই ম্যাচেই জিতে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে। ন’টি ম্যাচ পরে জয়ে ফেরা ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সেই দলকে হারানো বোধহয় সোজা হবে না।
লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ হলেও এটি অবশ্য প্রায় নক আউটের মর্যাদা পাবে দুই দলের খেলোয়াড়-কোচ ও সমর্থকদের কাছে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে ম্যাচটা মরণ-বাঁচন লড়াই। জিতলে তারা সরাসরি উঠবে কোয়ার্টার ফাইনালে আর এই ম্যাচে হারলে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নির্ভর করবে অনেক যদি-কিন্তু এবং অন্যান্য গ্রুপের একাধিক ম্যাচের ফলের ওপর। নেজমেহ-র চাপ একটু কম। কারণ, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য ড্রয়ের রাস্তাও খোলা আছে তাদের সামনে। যে উপায় ইস্টবেঙ্গলের নেই।
টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপ পর্যায়ের পর আটটি দল কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছবে। গ্রুপ এ থেকে সি-র বিজয়ী এবং পশ্চিম এশিয়ার এই তিন গ্রুপের মধ্যে সেরা রানার্স-আপ দল শেষ আটে প্রবেশ করবে। এছাড়া গ্রুপ ডি এবং ই-র বিজয়ী ও রানার্স-আপও কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। শুক্রবার নেজমেহ-কে হারিয়ে এই আট দলের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল জায়গা করে নিতে পারে কি না, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ভুটানের পারো এফসি-র বিরুদ্ধে ২-২ ড্র হলেও তেমন দাপুটে ফুটবল খেলতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। সেই ম্যাচে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মাদি তালাল। মিনিট তিনেক পরেই পোনাল্টি থেকে গোল শোধ করে লড়াইয়ে ফেরে পারো এফসি। বিরতির ঠিক আগে এগিয়ে যায় ভুটানের দল। অনেক চেষ্টা ও ব্যর্থতার পর ৬৯ মিনিটের মাথায় দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস সেই গোল শোধ করেন।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের দৌড়ে টিকে থাকে তারা। সে দিন রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে ৪-০-য় জেতে কলকাতার দল। ম্যাচের ৩৩ মিনিটের মধ্যেই দিয়ামান্তাকস, শৌভিক চক্রবর্তী, নন্দকুমার শেকর ও আনোয়ার আলি-রা চার গোল দিয়ে জয় সুনিশ্চিত করে নেয়। অনেক দিন পর ইস্টবেঙ্গলের এমন দাপুটে পারফরম্যান্স দেখা যায়। তবে এটাও ঠিক যে সে দিন বসুন্ধরা রীতিমতো ছন্নছাড়া ও ছন্দহীন ফুটবল খেলে। যার সুযোগ নিয়ে বড় জয় ছিনিয়ে নেয় লাল-হলুদ শিবির। তবে এই জয় যে তাদের ভরপুর আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শুক্রবার এই আত্মবিশ্বাসই তাদের কাজে লাগবে নেজমেহ-র বিরুদ্ধে, যারা প্রথম ম্যাচে বসুন্ধরার আত্মঘাতী গোলে জেতে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানের পারো এফসি-কে ২-১-এ হারায়। ৮৬ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে স্টপেজ টাইমে এক গোল শোধ করে ব্যবধান কমায় পারো।
এই টুর্নামেন্টে এই নেজমেহ-ই ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ। তাই গত ম্যাচের চেয়েও ভাল খেলতে হবে তাদের। বসুন্ধরার মতো ছন্দহীন ফুটবল তো তারা খেলবেই না, বরং লাল-হলুদ বাহিনীকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে তারা। এই চ্যালেঞ্জ সামলানো মোটেই সোজা হবে না দিয়ামান্তাকসদের পক্ষে। তবে শুরুতেই যদি গোল করে দিতে পারে, তা হলে অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে তারা।
তাদের দেশের লিগে মাত্র একটি ম্যাচ খেলে এএফসি-র এই টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছে নেজমেহ। সেই ম্যাচে তারা ৩-০-য় জেতে। গত মরশুমে তারা দু’নম্বরে থেকে লিগ শেষ করে। শীর্ষে থাকা আল আহেদের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হলেও গোলপার্থক্যের বিচারে তারা চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে পিছিয়ে যায়।
মেহদি জেইন, হাসান কুরানি, কাসেম এল জেইন, আলি সাবে-র মতো তাদের নির্ভরযোগ্য ফুটবলাররা গত তিন বছর ধরে একসঙ্গে এই দলে খেলছেন। ফলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই ভাল। জাতীয় দলের তারকা হুসেন মনজেরও তাদের শিবিরে রয়েছেন। তথ্য: আইএসএল মিডিয়া