ভুবনেশ্বর: জয় দিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপ (Kalinga Super Cup) অভিযান শুরু করল কলকাতার দুই দল ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal) ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant)। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরে ইস্টবেঙ্গল এফসি হারায় আইএসএলেরই অপর দল হায়দরাবাদ এফসি-কে এবং সন্ধ্যায় মোহনবাগান এসজি হারায় আই লিগ থেকে আসা শ্রীনিধি ডেকান এফসি-কে।
এ দিন দুপুরে ইস্টবেঙ্গল ৩-২-এ জেতে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে। দু’বার সমতা আনার পরেও শেষ পর্যন্ত ৮০ মিনিটের মাথায় সল ক্রেসপোর সুযোগ সন্ধানী গোলে হারতে হয় হায়দরাবাদ এফসি-কে। এই ম্যাচে জোড়া গোল করে দলের জয়ের ভিত তৈরি করে দেন তাদের ব্রাজিলিয়ান তারকা ফরোয়ার্ড তথা লাল-হলুদ অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা লাল-হলুদ বাহিনী ম্যাচের অষ্টম মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়, যখন হেড করে নন্দকুমার শেখরকে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন ক্লেটন। কিন্তু নন্দকুমারের শট ক্রস বারে লাগে। এর দু’মিনিট পরেই বোরহা হেরেরার কাছ থেকে পাওয়া বল বারের ওপর দিয়ে পাঠান ক্লেটন। অবশেষে ৩৩ মিনিটের মাথায় অসাধারণ এক গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক।
তবে লড়াকু হায়দরাবাদ এফসি প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে সমতা এনে ফেলায় চাপে পড়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলে এখন পর্যন্ত একটিও ম্যাচে জিততে না পারা হায়দরাবাদের রামলুনচুঙ্গা যখন বক্সের মধ্যে থেকে গোল করেন। তবে দমে না গিয়ে দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকে আক্রমণ শুরু করে দেয় কার্লস কুয়াদ্রাতের দলের ফুটবলাররা এবং ফের ক্লেটনই দলকে নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করেন। ৫৪ মিনিটের মাথায় তাঁর গোলেই ফের এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। গোলের ৩০ গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর অসাধারণ ও মাপা ফ্রি কিক হাওয়ায় গতিপথ বদলে সোজা প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়ে যায়।
এর পরেও অবশ্য লড়াই ছাড়েনি হায়দরাবাদ। ৭৯ মিনিটের মাথায় তারা পেনাল্টি আদায় করে নেয় এবং সেই স্পট কিক থেকে গোল করে ফের সমতা আনেন নিম দোরজি তামাং। ইস্টবেঙ্গলের মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী বক্সের মধ্যে গোলমুখী রামলুনচুঙ্গাকে ফাউল করায় পেনাল্টি দেন রেফারি। কিন্তু শেষমেশ খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হল নিজামের শহরের দলকে।
অপর ম্যাচে জেসন কামিংস ও আর্মান্দো সাদিকুর গোলে ২-১-এ জয় পায় মোহনবাগান এফসি। ২৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ডেকানের উইলিয়াম আলভেস অলিভিয়েরা। কিন্ত সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি তারা। ৩৯ মিনিটে কামিংস ও ৭১ মিনিটে সাদিকু গোল করে দলকে তিন পয়েন্ট এনে দেন। তবে ম্যাচের শেষ আট মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) সবুজ-মেরুন বাহিনীকে দশজনে খেলতে হয়। কারণ, ৮৬ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মোহনবাগানের তরুণ মিডফিল্ডার অভিষেক সূর্যবংশীকে। তা সত্ত্বেও ম্যাচের শেষ পর্যন্ত লিড ধরে রাখতে সক্ষম হয় মোহনবাগান।
ম্যাচে শুরু থেকেই দুই দলই আক্রমণাত্মক মেজাজে থাকলেও ম্যাচের রাশ ক্রমশ নিজেদের হাতে নেওয়া শুরু করে ডেকান। ১৭ মিনিটের মাথায় লালরোমাউইয়ার দূরপাল্লার শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়। ২৭ মিনিটের মাথায় এই লালরোমাউইয়াকেই বক্সের মধ্যে ফাউল করেন মোহনবাগানের ডিফেন্ডার সুমিত রাঠি। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করেননি এবং অলিভিয়েরাও এই সুযোগ কাজে লাগাতে কোনও ভুল করেননি।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ডেকান তাদের রক্ষণকে আরও আঁটোসাঁটো করে তোলে। ফলে মোহনবাগানের আক্রমণ বিভাগকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে ৩৯ মিনিটের মাথায় তাদের রক্ষণের মুহূর্তের ভুলকে কাজে লাগিয়ে সমতা এনে ফেলেন অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড কামিংস। প্রথমে বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন অভিষেক, যা বারে লেগে ফিরে আসে। বল অনুসরণ করে গোলের সামনে চলে আসা কামিংস এই ফিরতি বলে টোকা দিয়ে সমতা আনেন। ১-১ অবস্থাতেই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর খেলা শুরু হতেই ফের গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কলকাতার দল। ৫০ মিনিটের মাথায় সাদিকুর দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে পেত্রাতোসের আধিপত্য ছিল বেশি। তাঁকে রুখতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খায় ডেকানের রক্ষণ।
তাদের এই দুর্ভেদ্য রক্ষণে শেষ পর্যন্ত ফাটল ধরান সাদিকু। ৭১ মিনিটে তাঁর গোলেই শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্টের হদিশ পায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। হুগো বুমৌসের কাছ থেকে লম্বা পাস পান আশিস রাই। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে ধোঁকা দিয়ে ডান দিক দিয়ে উঠে ক্রস দেন গোলের সামনে, যেখানে ঠিক সময়ে পৌঁছে যান আলবানিয়ান ইউরো কাপার এবং এক টোকায় বল জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি।
এদিন ম্যাচে প্রথম হলুদ কার্ড দেখেছিলেন অভিষেক। ৮৬ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে পিছন থেকে মারাত্মক ট্যাকল করায় ফের হলুদ কার্ড দেখেন তিনি, যা লাল-কার্ডে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এর ফলে তাঁকে ম্যাচের শেষ দিকে মাঠ ছাড়তে হয়।
এই জয়ের ফলে কলকাতার দুই প্রধানই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করল। কলকাতার দুই দলেরই পরবর্তী ম্যাচ আগামী রবিবার। দুপুরে মোহনবাগান এসজি খেলবে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে এবং সন্ধ্যার ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে মুখোমুখি হতে হবে ডেকানের।
(তথ্য সৌজন্যে: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও পড়ুন: লিগ কাপের সেমিফাইনালে চেলসির হার, এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে পৌঁছল ম্যাঞ্চস্টার ইউনাইটেড