ফ্রাঙ্কফুর্ট: দিয়েগো কোস্টা ততক্ষণে টাইব্রেকারের প্রথম দুটো গোল সেভ করে দিয়েছেন। গোটা ম্য়াচে প্রথমবার তখন মনে হচ্ছিল যে এখান থেকে এবার পর্তুগালই হয়ত জয় ছিনিয়ে নেবে। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্যামেরার তাঁর দিকে তাক করতেই হালকা হাসি। বলা ভাল তাঁর মুখ দেখে তখন মনে হচ্ছে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। নইলে এবারের ইউরো কাপে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন ১২০ মিনিট তার আগেই কাটাতে হয়েছে তাঁকে। গোটা ম্য়াচে একাধিক সুযোগ এসেছিল, কিন্তু কোনওটা থেকেই গোলমুখ খুলতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সবকিছুর ঊর্ধ্বে পেনাল্টি মিস। রোনাল্ডো তাঁর কেরিয়ারে গোনা গুন্তি কিছু পেনাল্টি মিস করেছেন এখনও পর্যন্ত। তার মধ্যে গতকালেরটাও যোগ হয়ে গেল। আর এই প্রথমবার রোনাল্ডোর পেনাল্টি শটে একবারেই সেই পুরনো ধার লক্ষ্য করা গেল না। ইয়ান ওবালক, যিনি স্লোভেনিয়ার তেকাঠির নীচে গোটা ম্য়াচে চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি বাঁদিকে ঝাপিয়ে আটকে দেন সহজেই। সি আর সেভেন কিছুতেই যেন মানতে পারছিলেন না বিষয়টা। 


ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে তিনিও আছেন। তিনি থাকবেনও। কিন্তু ৩৯-র রোনাল্ডোকে দেখে মনে হতেই পারে, তাঁর সেরা সময়ের রোনাল্ডোর ছায়া মাত্র। পর্তুগাল দলে এখন অনেক তরুণ ফুটবলার উঠে এসেছেন। ফ্রান্সিসকো কোয়েন্সিয়াও, রাফায়েল লিয়াও, পালিনহা, ভিতিনহা অনেকেই। এছাড়া আছেন বার্নার্ডো সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্ডেজরাও। কিন্তু গোটা দলের প্রাণভোমরা একজনই। তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেই রাশিয়া বিশ্বকাপের পর থেকেই বারবার প্রশ্ন উঠেছে এবার হয়ত শেষ। কিন্তু তিনি সবাইকে ভুল প্রমাণ করে বারবার প্রমাণ করেছেন যে না, বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। এখনও সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল খেলার ক্ষমতা রাখেন তিনি। কাতারে স্যান্তোসের একাদশে তাঁর জায়গা সেভাবে হয়নি। কিন্তু মার্তিনেজের পর্তুগাল দলে প্রথম থেকেই খেলছেন। প্রতি ম্য়াচেই ধারাবাহিক সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু আগের সেই চেনা রোনাল্ডো কোথায়? যিনি পায়ে বল পেলেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার, গোলরক্ষকরা আতঙ্কে ভুগতেন। ৩০ গজ এমনকী তার দূর থেকেও জোরালো শটে জালে বল জড়াতেন যিনি। সবকিছুই এখন অতীত। জর্জিয়ার বিরুদ্ধে ৬৫ মিনিটে রোনাল্ডোকে তুলে নিয়েছিলেন কোচ। বাঁচিয়ে রেখেছিলেন প্রি কোয়ার্টারে যাতে সি আর সেভেনের সেরাটা বের করে আনতে পারেন। কিন্তু স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই একের পর এক সুযোগ মিস। যে হেডে গোল করার জন্য রোনাল্ডো বিখ্য়াত, তাও করতে পারলেন না সতীর্থদের সহযোগিতা সত্ত্বেও। গতিও কমেছে। ডিফেন্ডাররা একটু চেপে ধরলেই বক্সে পরে পেনাল্টির আবেদন জানাচ্ছেন বারবার। অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি মিস করার পর তো ম্য়াচের মাঝেই হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন। বিরতিতে কোচ, সতীর্থরা এসে জড়িয়ে ধরে শান্ত্বনা দিলেন। ম্য়াচ পেনাল্টিতে গড়ালে অবশ্য পর্তুগালের হয়ে প্রথম গোলটা রোনাল্ডোই করেছিলেন। কিন্তু যা পারফরম্য়ান্স, তাতে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শেষ আটের ম্য়াচে কিন্তু চিন্তা বাড়বেই। এমনটাও হতে পারে যে ওটাই হয়ত হয়ে যাবে পর্তুগালের জার্সিতে খেলা রোনাল্ডোর শেষ আন্তর্জাতিক ম্য়াচ।