গোয়া: তাঁর জোড়া গোলে এফসি গোয়া হারিয়েছিল মোহনবাগান এসজি-কে। এ বার সেই সেই ব্রাইসন ফার্নান্ডেজের গোলেই হারতে হল কলকাতার আর এক দল ইস্টবেঙ্গল এফসি-কেও (FC Goa vs East Bengal)। রবিবার ২৩ বছর বয়সি গোয়ানিজ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ব্রাইসনের একমাত্র গোলেই জয় ফেরে এফসি গোয়া। গত দুই ম্যাচে ড্রয়ের পর এ দিন তারা চলতি লিগের আট নম্বর জয়টি তুলে নিয়ে বেঙ্গালুরু এফসি, জামশেদপুর এফসি-কে টপকে পয়েন্ট টেবলের দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেল। এই নিয়ে টানা এগারো ম্যাচে অপরাজিত রইল তারা।
এ দিন গোয়ার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে হোম টিম জিতলেও প্রথমার্ধে কোণঠাসা হয়ে থাকার পরও দ্বিতীয়ার্ধে যে ভাবে লড়াইয়ে ফিরে আসে ইস্টবেঙ্গল, তাতে একবারও মনে হয়নি, তাদের প্রথম দলের প্রায় অর্ধেক খেলোয়াড় এ দিন মাঠে নামতে পারেননি। প্রায় নতুন কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নেমে দ্বিতীয়ার্ধে প্রচুর সুযোগ তৈরি করে তারা, আধ ডজন শট নেয় গোলে। এক ডজন গোলের সুযোগ তৈরি করেও প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি।
অথচ এফসি গোয়া পাঁচটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তাদের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন এ দিন দলের রক্ষণকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দেন ও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটি জিতে নেন।
ইস্টবেঙ্গল হারলেও ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস এ দিন সমর্থকদের মনে যথেষ্ট আশা জাগানোর মতোই খেলেন। মাত্র এক সপ্তাহ আগে ভারতে এসে এ দিন প্রথম মাঠে নেমে শুরুর দিকে স্বচ্ছন্দে খেলতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে নিজের দক্ষতার ঝলক দিয়ে রাখলেন ২৮ বছর বয়সি এই ফরোয়ার্ড। ভারতে আসার আগে গত দেড় মাসে যে তিনি ফুটবলের মধ্যে ছিলেন না, তা তাঁর দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্স দেখে বোঝা যায়নি। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে একটিও গোল পাননি তিনি। প্রতিপক্ষের বক্সে পাঁচবার বলে পা লাগান তিনি। মোট ছ’টির মধ্যে তিনটি শট গোলে রাখেন এবং আটটি ক্রসও দেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এ দিন প্রতিপক্ষের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থেকেই গোয়ার মাঠে নামে চোট ও কার্ড সমস্যায় জর্জরিত ইস্টবেঙ্গল এফসি। চার ব্যাকে খেললেও চারজন বিশেষজ্ঞ ডিফেন্ডারকে নামাতে পারেনি তারা। নন্দকুমার শেকরকে সাইড ব্যাকের ভূমিকায় খেলতে দেখা যায়। লালচুঙনুঙ্গাকে সেন্টার ব্যাকের ভূমিকা পালন করতে হয় হিজাজি মাহেরের সঙ্গে, যা সম্ভবত এক বছর আগে শেষ দেখা গিয়েছিল। নাওরেম মহেশকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের জায়গায় দেখা যায়। দলের খেলোয়াড়রা অনভ্যস্ত জায়গায় খেলায় লাল-হলুদ বাহিনীর নতুন কম্বিনেশন সচল হতে অনেকটা সময় লেগে যায়।
এই সুযোগে তাদের শুরু থেকেই চাপে রাখে এফসি গোয়া এবং ১৩ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন তরুণ স্ট্রাইকার ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ, যিনি মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেছিলেন মাসখানেক আগেই। ডানদিক থেকে শর্ট কর্নারের পর বক্সের মধ্যে হাওয়ায় ভাসানো ক্রস পাঠান বোরহা হেরেরা, যিনি চোট সারিয়ে এই ম্যাচে নামেন। তাঁর এই ক্রসেই দুর্দান্ত হেড ফ্লিক করে বল জালে জড়িয়ে দেন ব্রাইসন, এ মরশুমে যাঁর গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়। যখন লাফিয়ে উঠে হেড করেন ব্রাইসন, তখন তিনি সম্পুর্ণ অরক্ষিত ছিলেন।
শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়ায় অবশ্য পুরোপুরি দমে যায়নি ইস্টবেঙ্গল। সমতা আনার চেষ্টা শুরু করে তারা। সে জন্য নন্দকুমারকে প্রায়ই ওভারল্যাপ করে উঠতে দেখা যায় প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায়। ২৬ মিনিটে তাঁর ক্রস থেকেই গোলের সামনে গোলের সুযোগ পেয়ে যান দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস, যে সুযোগ বানচাল করে দেন গোয়ার ডিফেন্ডার ও অধিনায়ক ওদেই ওনাইন্দিয়া জাবালা।
এর পাঁচ মিনিট পরেই ফের গোলের সামনে বল পেয়ে যান দিমি, এ বার বক্সের সামনে থেকে তাঁকে বল বাড়ান মহেশ। কিন্তু গোলে শট নেওয়ার আগেই গোলকিপার হৃত্বিক তিওয়ারিকে ফাউল করে বসায় আর সে সুযোগ পাননি তিনি।
তবে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও পায় এফসি গোয়া এবং ৩৫ মিনিটের মাথায় ইকের গুয়ারৎজেনার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলও গোলের দিকে ঠেলেন, কিন্তু দুর্দান্ত সেভ করেন প্রভসুখন গিল। ইস্টবেঙ্গল মাঝে মাঝে আক্রমণ হানলেও প্রতিপক্ষকে তারা নাগাড়ে চাপে রাখতে পারেনি, যে চেষ্টা সমানে করে যায় এফসি গোয়া। রক্ষণে এ দিন তৎপর ছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা।
এ দিন ভারতের মাঠে প্রথম খেলতে নামা রিচার্ড সেলিসকে শুরুর দিকে তেমন আহামরি মনে না হলেও প্রথমার্ধের শেষ দিকে মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে উঠে যে ভাবে বক্সের মধ্যে গোলের বল বাড়াতে দেখা যায় তাঁকে, তাতে তাঁর দক্ষতার ইঙ্গিত ছিল। তবে গোলের সুযোগ তৈরিতে ব্যর্থ হন বিষ্ণু। প্রথমার্ধে মাত্র ৩৭ শতাংশ বল ছিল ইস্টবেঙ্গলের দখলে। তবে পাঁচটি শটের মধ্যে একটিও গোলে রাখতে পারেনি তারা। গোয়াও চারটি শট নেয়, যার মধ্যে দু’টি ছিল লক্ষ্যে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণাত্ম মেজাজে পাওয়া যায় কলকাতার দলকে। পঞ্চম মিনিটেই অসাধারণ এক গোলের সুযোগ তৈরি করে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ-ত্রয়ী। ডানদিক থেকে বিষ্ণু ক্রস পাঠালে তা দ্রুত ব্যাকহিল করে গোলে পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন দিমি। বল দ্বিতীয় পোস্টের সামনে চলে এলে সেখান থেকে তা গোলে ঠেলেন সেলিস। কিন্তু তাঁর সামনে থাকা বরিস সিং তা ব্লক করেন। আক্রমণে দল আগের চেয়ে ভাল ছন্দে চলে আসায় ডেভিডের জায়গায় ক্লেটন সিলভাকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেটন আসার পরে ঘন ঘন আক্রমণে ওঠে তারা।
ম্যাচের ৬৭ মিনিটের মাথায় বিষ্ণুর ক্রস থেকে বুক দিয়ে বল নামিয়ে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে গোলে শট নেন সেলিস। কিন্তু প্রায় অবধারিত গোল বাঁচান হৃত্বিক। পরবর্তী মিনিটেই নন্দর ক্রসে হেড করে ফের গোলের দিকে বল পাঠান ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশী। তবে এবারও বলের দখল নেন গোলকিপার। ৭৯ মিনিটের মাথায় প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে সেলিসের কাট ব্যাক থেকে বল পেয়ে গোলে শট নেন মহেশ, যা জাবালার পায়ে লেগে গোলকিপারের হাতে চলে যায়। এই শটের পরেই অবশ্য মহেশকে ডেকে নেন কোচ, বদলে নামান মার্ক জোথানপুইয়াকে।
ইস্টবেঙ্গলের ঘন ঘন আক্রমণের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে দেখে ৭০ মিনিটের মাথায় রক্ষণে লোক বাড়ান গোয়ার কোচ মানোলো মার্কেজ। মহম্মদ ইয়াসিরকে তুলে রাওলিন বোর্জেসকে মাঠে নামান তিনি। এর মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টায় ৫৮ মিনিটের মাথায় গুয়ারৎজেনার গোলমুখী শট জিকসনের পায়ে লেগে ফের পোস্টে লাগে। ৭৪ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে ব্রাইসনের মাপা ক্রসে যেখানে গোলের সামনে থেকে ঠিকমতো টোকা দিলেই গোলে বল ঢুকে পড়ত, সেখানে শট নিতে গিয়ে বল গোলের বাইরে পাঠান গোয়ার দলের সর্বোচ্চ স্কোরার আরমান্দো সাদিকু।
শেষ দশ মিনিটে লড়াই জমে ওঠে এবং বক্স টু বক্স খেলা শুরু হয়। ৮৫ মিনিটের মাথায় সাদিকুর গোলমুখী শট বোরহার পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। দু’মিনিট পরেই ফের সেলিসের দেওয়া পাস থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন দিমি।
সাত মিনিটের সংযুক্ত সময় ছিল ঘটনাবহুল। হিজাজি মাহেরকে ঘাড় ধরে মাটিতে ফেলে দেওয়ায় দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখেন সাদিকু, যার ফলে শেষ কয়েক মিনিট দশজনে খেলতে হয় গোয়ার দলকে। তার কয়েক মিনিট আগেই ইস্টবেঙ্গলের তরুণ ফরোয়ার্ড সায়ন ব্যানার্জি নামেন আক্রমণে তীব্রতা বাড়ানোর জন্য। কিন্তু সেলিসের পায়ের পেশীতে টান ধরে যাওয়ায় সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। ফলে সমতা আর আনতে পারেনি তারা।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: