কলকাতা, আবীর দত্ত: চলতি বিশ্বকাপে (FIFA WC 2022) ওয়েলশকে হারিয়ে ইরান (Iran Football Team) প্রমান করে দিয়েছে এশিয়ান দলগুলিও বিশ্বকাপে নিজেদের ছাপ ছাড়ার ক্ষমতা রাখে। লড়াইটা কঠিন হলেও, নক আউটে পৌঁছনোর দক্ষতা তাঁদেরও আছে। ইরানের এই সাফল্যই স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতীয় দলের ফুটবলারদের। বিশ্বকাপে ইউরোপ আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলির একাধিপত্যে আগেই আফ্রিকান দেশগুলি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে দিয়েছে। এবার কি তাহলে এশিয়ার পালা? কাতার যেন এশিয়ার দেশগুলোর উত্থানের পরিচয়বাহক। ইরানের জয়ে খুশি ভারতীয় ফুটবলাররাও।
ইরান মোট ছয়বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে গ্রুপপর্ব থেকে এখনও পর্যন্ত নক আউটে পৌঁছাতে পারেনি। এবার ওয়েলশকে হারিয়ে সেই ইতিহাস বদলে ফেলার হাতছানি ইরানের সামনে। আর যারা এই অসম্ভবকে সম্ভব করল, তাঁরা অনেকেই ভারতের বিরুদ্ধে ইরানের হয়ে ২০১৬ সালে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন। সেই ইরান দলে খেলা সের্দার আজমুন, জাহানবাক্স, এবারের বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাচ্ছেন। ওয়েলশের বিরুদ্ধে ইরানের গোলদাতা রেজাইয়ান রামীনও ছয় বছরে আগের সেই ম্যাচের অংশ ছিলেন।
স্বপ্ন দেখাচ্ছে ইরান
সেই ম্যাচে চোটের কারণে মাঠে নামতে পারেননি সুনীল ছেত্রী। ছেত্রীহীন ভারত অবশ্য চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। তা সত্ত্বেও চার গোলে সেই ম্যাচ হারতে হয়েছিল ভারতকে। সেদিন ইরানের গতি আর জয়ের খিদে ছিল চোখে পড়ার মতো। এই ইরানের দলের সিংহভাগ খেলোয়াড়রাই প্রায় এক দশক ধরে একসঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে খেলছেন। দলে এই বিশ্বকাপের জন্য তেমন কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।
'আমিরশাহিতে একই হোটেলে ছিলাম আমরা। ম্যাচের আগে আমাদের শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন রেজাইয়ান রামীন।' স্মৃতির পাতা উল্টে জানান ভারতের রক্ষণভাগের অন্য়তম স্তম্ভ প্রীতম কোটাল (Pritam Kotal)। তিনি জানান, 'আমি বন্ধুদের আগেই বলেছিলাম যে ইরান এবার প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছবে। অনেকে আমার কথা শুনে হেসেছিল। কিন্তু আজ আমার ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হওয়ার পথে। কাতার যেমন সুযোগ পেল একদিন ওমান ও তেমন সুযোগ পাবে। আর এসব পারফরম্যান্স দেখে আমার বিশ্বাস যে আমরাও একদিন বিশ্বকাপে খেলব। খেলবই।;
আরেক ভারতীয় ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডল (Arnab Mondal) জানাচ্ছেন, 'ইরান আমাদেরকেও স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা যদি ছোট থেকে বিদেশি লিগে খেলার সুযোগ পাই, তাহলে আমদের দেশের ফুটবলাররাও এমন উন্নতি করতে পারবে।' প্রথম ম্যাচে ৬-২ স্কোরলাইনে বিরাট হারের পরেও দমে না গিয়ে দুরন্তভাবে জবাব দিলো ইরান। বিশ্বকাপে ব্যাপক ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন আজমুনরা। ইংল্যান্ডের সঙ্গে লজ্জাজনক হারের পরেই ভৌগোলিক অবস্থানে ইংল্যান্ডের পাশে থাকা ওয়েলশের সঙ্গে সারা ম্যাচে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করে ম্যাচ শেষের ঠিক আগে পর পর দু'টো গোল করে জয় ছিনিয়ে নেয় ইরান।
শেষ মুহূর্তে জোড়া গোল
একটা সময় মনে হচ্ছিল ম্যাচ হয়তো ড্রয়েই শেষ হবে। বারবার সুযোগ পেয়েও কোনও দলই গোলের দরজা খুলতে পারছিল না। ইরানের দু'টি শট বারে লেগে ফিরে আসে। ওয়েলশকে একটা সময় ইরানের দাপটে কার্যত দিশেহারা দেখাচ্ছিল। দলের তারকা ফুটবলার গ্যারেথ বেল ম্যাচে একদমই নজর কাড়তে পারেননি। বক্সের বাইরে ফাউল করে দ্বিতীয়ার্ধে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন ওয়েলসের গোলকিপার ওয়েন হেনাসি। তারপর শেষ মুহূর্তে জোড়া গোল। প্রথমে সৌদি আরব তারপর জাপান। শক্তি প্রদর্শন করেছে সন হিউং-মিনের কোরিয়া রিপাবলিকও। এবার ইরানের গর্জন শুনল কাতার।
আরও পড়ুন: মেক্সিকোর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেই অনন্য কৃতিত্ব গড়ে ফেলবেন মেসি