আবীর দত্ত, কলকাতা: মহিলা। অধিকার। প্রতিবাদ। এই শব্দ গুলো বিশ্বকে যেন এই বিশ্বকাপে দ্বন্দ্ব রাগ ক্ষোভের থেকে আলাদা করে একত্রিত করে দিয়েছে। কখনও জাতীয় সঙ্গীতের সময় প্রতিবাদ। কখনও গ্যালারিতে প্রতিবাদ। সরব দর্শক। একটাই বার্তা, মহিলা পারেনা এমন কিছু নেই। আর মহিলাদের অধিকারের আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার দেখা যাবে গোটা ৯০ মিনিট সেন্টার থেকে গোলপোস্ট দৌড়ে চলেছেন একজন মহিলা। ২২ জন পুরুষ ফুটবলার যখন নিজের দেশকে জেতাতে ঝাঁপাবে তখন একজন মহিলা যেন নিরপেক্ষতার পতাকা নিয়ে দৌড়ে চলেছেন। আর বিশ্ববাসী মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখছে, বুঝছে। ম্যাচ পরিচালনা নয় তিনি যেন বিশ্ব কে বার্তা দিচ্ছেন মনে হবে। আর সারা গ্যালারি হাততালিতে গমগম করে উঠবে। যেন পৃথিবী স্যালুট জানাচ্ছে। সেই মহিলাই ম্যাচের পরিচালনার দায়িত্বে, তিনি রেফারি। সঙ্গী রেফারিরাও মহিলা। এটাই বিশ্বকাপ। বিশ্বের জবাব।
বিশ্বকাপে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলেছে সারা পৃথিবী। ৩ জন মহিলা রেফারি ম্যাচ পরিচালনা করবেন বৃহস্পতিবার। জার্মানি আর কোস্তারিকার মরণ বাঁচন ম্যাচে। এমনি ছবি দেখতে পাবে সারা বিশ্ব। মহিলা রেফারিদের উপস্থিতিতে অন্য মাত্রা পাবে বিশ্বকাপ।
যারা থাকবেন তাঁরা হলেন ফ্রান্সের স্টেপেনি ফ্রাপারট, ব্রাজিলের নেওজা ব্যাক, মেক্সিকোর কারিনা ডিয়াজ। স্টেপেনি থাকবেন রেফারি আর বাকিরা সহকারী রেফারি। ২০০৯ সাল থেকে ফিফার রেফারি স্টেফেনি। লিগ ওয়ান, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। এই বিশ্বকাপে ফ্রান্সের বাসিন্দা স্টেফেনির বাজানো বাঁশিতে শুরু হবে জার্মানি-কোস্তারিকা ম্যাচ। ২০১৫ ফিফা মহিলাদের বিশ্বকাপেও ম্যাচ খেলিয়েছেন তিনি। ২০২০, ২০২১, ২০১৯ তিনি সেরা মহিলা রেফারি নির্বাচিত হন।
মহিলাদের অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ইরানের ফুটবলাররা। জাতীয় সঙ্গীত না গেয়ে তাঁরা তাঁদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে ইরানের ফুটবলাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছিল বিভিন্ন মাধ্যমে। এবার সেই বিশ্বকাপেই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ফিফার। নাভাসদের কোস্তারিকার বিরুদ্ধে যখন নামবে মাঠে জার্মানি। তখন বাঁশি হাতে স্টিফেনি দৌড়াবে এমাথা থেকে ওমাথা। ট্যাকেল থেকে ফাউল। পেনাল্টি থেকে ভি এ আর। সব পরিচালনা করবেন তিনি। প্রয়োজনে দেখাবেন হলুদ কার্ড আর লাল কার্ড। গিনাবড়ি, মুলার, রুদিগা হাভার্টসদের জিততেই হবে সেই ম্যাচে। নয়তো সেরা ষোলোতে জায়গা হবে না জার্মানির। আর স্পেনের কাছে ৭ গোলের ধাক্কা সামলে জাপানের সঙ্গে ড্র কিছুটা হলেও কোস্তারিকার একটা সুযোগ দিল ঘুরে দাঁড়ানোর। তারাও চাইবে জার্মানিকে হারিয়ে পয়েন্টের হিসেবে দ্বিতীয় হয়ে সেরা ১৬ তে জায়গা পাকা করতে।
কিন্তু এই ছবি দেখার জন্য অপেক্ষায় যেমন সারা বিশ্ব একই ভাবে এই ছবি একটা বিরাট বার্তা দেবে বলে মত পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন লিনা গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি বলছেন, ''২৫ নভেম্বর অ্যান্টি ভায়োলেন্স ডে ছিল। আর ডিসেম্বরের শুরুতেই এই ছবি দেখব। ভীষণ ভাল লাগছে। বিরাট প্রভাব পড়বে মহিলাদের অধিকার প্রমাণিত হবে আরও একবার। কোথাও অযোগ্য নয় মহিলারা। খেলার মাধ্যমে বিশ্ব দেখবে মহিলারা নিজেদের যোগ্যতায় ঐ জায়গায়।''