গুয়াহাটি: বিশ্বের ১৫৮ নম্বর ফুটবলখেলিয়ে দেশ আফগানিস্তানের কাছে হার, তাও ৬৯ মিনিট পর্যন্ত দাপুটে ফুটবল খেলে এক গোলে এগিয়ে থাকার পর। দলের এই ফল সহজে মেনে নিতে পারছেন না ভারতীয় দলের (Indian Football Team) কোচ ইগর স্তিমাচ। ভারতীয় দলের ফুটবলারদের ছোট ছোট ভুলই যে তাদের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে ডুবিয়ে দিল, এমনই ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তিনি। তবে পাশাপাশি আশ্বাসও দিচ্ছেন, জুনে যখন ফের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শেষ দু’টি ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত, তখন তাদের সম্পুর্ণ অন্য চেহারায় দেখা যাবে। বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে উঠে নতুন ইতিহাস গড়া নিয়েও এখনও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ক্রোয়েশিয়ান কোচ।
মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে ভারতীয় ফুটবলারদের সেই পুরনো রোগই তাদের ফের ব্যর্থতার অন্ধকারে ঢেকে দেয়। একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে আফগানদের কাছে হারতে হয় তাদের। ঘরের মাঠে যে ম্যাচ অন্তত তিন গোলে জেতা উচিত ছিল, সেই ম্যাচ ১-২-এ হেরে মাঠ ছাড়েন স্তিমাচের দলের ফুটবলাররা।
দেশের হয়ে দেড়শোতম ম্যাচ খেলা সুনীল ছেত্রীর ৩৮ মিনিটের গোলে ৬৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পর ৭০ মিনিটে রহমত আকবরি ও ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে শরিফ মুখম্মদের গোলে অপ্রত্যাশিত ভাবে এই ম্যাচ জিতে নেয় আফগানিস্তান।
এই হতাশাজনক ফল নিয়ে সাংবাদিকদের কোচ স্তিমাচ বলেন, “এই ফল মেনে নেওয়াটা শুধু কঠিন নয়, বিরক্তিকরও। দলের স্টাফ ও খেলোয়াড়দের সামনে ‘সরি’ বলতেই হবে আমাকে। অনেক ভাল কিছু যেমন করেছি আমরা, ভুলও করেছি অনেক। তারই খেসারত দিতে হল আমাদের। বেশিরভাগ ম্যাচটাই নিয়ন্ত্রণে রাখার পর দু-দু’টো গোল খেলাম আমরা! তবে আমরাই ওদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি। ৫-৬ মিনিটের জন্য আমাদের পুরো দলটা যেন দাঁড়িয়ে পড়েছিল”।
এই হারের ফলে অবশ্য চার পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের এশীয় বাছাই গ্রুপে দু’নম্বরেই রয়ে গিয়েছে ভারত। চার ম্যাচে আফগানিস্তানেরও চার পয়েন্ট। কিন্তু গোলপার্থক্যে ভারতের (-৩) চেয়ে পিছিয়ে (-১০) থাকায় তিন নম্বরে উঠে এসেছে তারা। গ্রুপের অপর ম্যাচে (ভারতীয় সময়ে বুধবার রাত ১২.৩০-এ) কুয়েতকে ২-১-এ হারিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে জায়গা পাকা করে নিয়েছে কাতার। ফলে তিন পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের একেবারে নীচে রয়েছে কুয়েত। ভারতকে এই রাউন্ডের গণ্ডী পেরোতে গেলে জুনের প্রথম সপ্তাহে ঘরের মাঠে কুয়েতের বিরুদ্ধে জিততেই হবে। কাতারের বিরুদ্ধেও ভাল খেলতে হবে তাদের।
এর আগে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভারত কখনও তৃতীয় রাউন্ডে ওঠেনি। কিন্তু এ বার নতুন ইতিহাস গড়ার সংকল্প নিয়ে কাজ করছেন প্রাক্তন ক্রোয়েশিয়ান বিশ্বকাপার। মঙ্গলবারের হারে পরেও তিনি এই লক্ষ্যপূরণ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। বলেন, “অবশ্যই এখনও আমরা তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে পারি। আমি আগেও বলেছি, দীর্ঘ শিবিরের পর এই দলটাকে একেবারে অন্য রকম দেখাবে। দলের অর্ধেক খেলোয়াড়ই তাদের খেলায় সেই গভীরতা আনতে পারছে না, যা তাদের প্রয়োজন। এটা পাঁচ দিনে বদলানো যায় না। আফগানিস্তান তো কুয়েত বা লেবাননের চেয়ে ভাল দল নয়। আমরা এর চেয়েও ভাল দলকে হারিয়েছি”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ম্যাচের চাপ সামলাতে গেলে পারফরম্যান্সে যে তীব্রতার প্রয়োজন হয়, তার অভাব হচ্ছে। আশা করি, মে-জুনে আমরা আরও ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারব। তখন সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া এখান থেকে বেরোবার কোনও পথ নেই। এখন ঠিক জায়গায় পৌঁছনোটাই আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ। কারণ, শুধু তৃতীয় রাউন্ডে ওঠা নয়, সেখানে পৌঁছে আমরা কী করব, সেটাও প্রশ্ন। এই হার থেকে পাওয়া শিক্ষাকে জুনের ম্যাচে কাজে লাগাতে হবে”।
মঙ্গলবারের ম্যাচে দলের ফুটবলারদের যে রকম নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেগুলি তারা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেননি বলে মনে করেন ভারতীয় দলের কোচ। বলেন, “যে কারণে আমরা আজ শেষ হয়ে গেলাম, সেই সম্পর্কে আগে থেকেই ছেলেদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিপক্ষের একজন খেলোয়াড় যখন সমানে একই অস্ত্রে বাজিমাত করার চেষ্টা করে, তখন তাকে সামলাতে না পারার কারণ কী? ওরা যে অনেকগুলো পাস খেলে আক্রমণে উঠছিল, তা কিন্তু নয়। ওরা পিছন থেকে লং বল পেয়ে ৯০ শতাংশ আক্রমণে ওঠে। ওদের এই পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য কী করতে হবে, তা বলে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের ছেলেরা তা পারেনি। এগুলো আমাদের শিখতে হবে”।
এ ছাড়াও, আরও সমস্যার কথা বলেন স্তিমাচ। তিনি বলেন, “ম্যাচের শুরুতেই আমরা যে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করি, তার মাশুলও দিতে হয়েছে। তার পরেও পেনাল্টি থেকে আমরা গোল করে এগিয়ে যাই। এর পরে তো আত্মবিশ্বাস লাফিয়ে বেড়ে যাওয়া উচিত ছিল। মাঠে এমন আচরণ করা উচিত ছিল, যা প্রতিপক্ষকে মানসিক ভাবে আরও দুর্বল করে দেয়। ওই সময় যদি একের পর এক সহজ পাসগুলো প্রতিপক্ষের পায়ে তুলে দেওয়া শুরু করি, তা হলে তো ওরা ভাল খেলবেই। আমাদের ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে”।
এই সমস্যার আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে কোচ বলেন, “প্রতিপক্ষের এলাকায় গিয়ে যখন আমাদের গোলের সামনে ক্রস পাঠানোর কথা বা গোলে শট নেওয়ার কথা, তখন আমরা ব্যাকপাস করছি! অর্থাৎ, আমরা গোলের সুযোগ পেয়েও পালিয়ে যাচ্ছি! গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যা ভুগিয়ে চলেছে আমাদের ছেলেদের। বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেওয়ার মতো বেশি ছেলে আমাদের দলে নেই”।
কোচের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তিনি তা মানতে রাজি নন। বলেন, “কৌশলে আমাদের কোনও সমস্যা ছিল না। কোনও একজনের ভুলে যদি কোনও দল গোল খায়, তা হলে কৌশলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বেশিরভাগ সময়ই আমরা ম্যাচটা নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা ছাড়া, পেনাল্টিটা তো আমাদের ভুলেই ওরা পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা অনেক বার পড়েছি। কী ভাবে এ রকম পরিস্থিতি সামলাতে হয়, সে অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক আছে। এ ধরনের পেনাল্টি দেওয়া ও তা থেকে গোল খাওয়া তো ঠিক নয়”।
মঙ্গলবারের ম্যাচ ভারত জিততে পারত বলে মনে করেন স্তিমাচ। তাঁর মতে, “আজ আমরা গোল করার অনেক সুযোগ তৈরি করেছি। যেগুলো কাজে লাগিয়ে ম্যাচটা জিততে পারতাম। কিন্তু পারিনি। আমি তো আর মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের হয়ে গোল করে দিয়ে আসতে পারি না। আমরা সুযোগ তৈরি করতে না পারলে মেনে নিতাম যে কৌশলে ভুল ছিল। দল ভাল ফুটবল না খেললে আমি তার দায় নিজের ঘাড়েই নিতাম। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বাজে গোল খেলেও আমার কিছু বলার থাকত না। কিন্তু আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও বাজে গোল খাব আমরা”!
তবে ব্যর্থতার দায় নিয়ে এখনই দায়িত্ব ছাড়তে রাজি নন স্তিমাচ। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “আমি এখানে একটা লক্ষ্য নিয়ে এসেছি, যা জুনে পূরণ হতে পারে। তাই জুন পর্যন্ত দায়িত্ব ছাড়া নিয়ে কোনও কথা বলব না। জুনে আমাকে আমার কাজটা শেষ করতে দিন। তার পরে দেখা যাবে, কী হয়”। (তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ধোনিদের কাছে ম্যাচ হেরে ১২ লক্ষ টাকা জরিমানাও গুনতে হচ্ছে শুভমনকে
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে