কোচি: বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ালেও কোচিতে আর পয়েন্ট খোয়াতে চান না ইস্টবেঙ্গল এফসি-র (East Bengal FC) কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। এ বছর এপ্রিলের মতো কেরল ব্লাস্টার্সকে হারিয়ে পুরো তিন পয়েন্ট নিয়েই কলকাতায় ফিরতে চান তিনি ও তাঁর দল। শনিবার কোচিতে সাংবাদিকদের সে রকমই জানিয়ে দিলেন কুয়াদ্রাত।
রবিবার সন্ধ্যায় চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে লাল-হলুদ বাহিনী। বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচে এক গোলে হার নিয়ে তেমন হা-হুতাশ করছেন না স্প্যানিশ কোচ। বলছেন, মরশুমের শুরুতে এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি দলের কাছ থেকে আরও ভাল ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ফুটবল খেলা আশা করছেন।
এ দিন কুয়াদ্রাত বলেন, “কাল আমরা পুরো পয়েন্টের জন্যই লড়ব। ভাল খেলতে হবে আমাদের। সবে মরশুম শুরু করেছি আমরা। গত ম্যাচে পয়েন্টের খুব কাছাকাছি ছিলাম। ৮৫ মিনিটের মাথায় গোলের খুব সহজ সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি সুযোগও তৈরি করেছি আমরা। তবে মরশুমের শুরুতে এটা স্বাভাবিক। এই সময়ে সব দলই তাদের সেরা কম্বিনেশনের খোঁজে থাকে। তবে দলের ফুটবলারদের মানসিকতা ও পারফরম্যান্সের তীব্রতায় আমি খুশি। ওরা আমাদের সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আশা করি, এখান থেকে আমরা তিন পয়েন্ট নিয়েই কলকাতায় ফিরতে পারব”।
রবিবার ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ কেরল ব্লাস্টার্সও প্রথম ম্যাচে হেরেছে। ম্যাচ শেষে বাড়তি সময়ে গোল খেয়ে পাঞ্জাব এফসি-র কাছে হারে তারা। তাই ব্লাস্টার্সও এই ম্যাচে জয়ে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে। তাই এই ম্যাচে ভাল লড়াই হবে বলে মনে করছেন লাল-হলুদ কোচ। তিনি বলেন, “কালকের ম্যাচে সমানে সমানে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, দুটো দলই ভাল। সমর্থকদেরও ভূমিকা এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিয়েও আমরা একটু চিন্তায় আছি। কারণ, মানিয়াপ্পাডা ফ্যানদের সামনে জিততে হলে আমাদের সত্যিই ভাল খেলতে হবে। কেরল ব্লাস্টার্সও বেশ চাপে থাকবে। ওদেরও পুরো পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে হবে। আমরাও এখান থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে চাই”।
কুয়াদ্রাতের বিশ্বাস, লিগ যত এগোবে, তাঁর দল তত ভাল খেলবে। তাঁর মতে, “আমরা আমাদের কাজ ঠিকই করে যাচ্ছি। লিগ যত এগোবে, যত ম্যাচ খেলব আমরা, ততই আমরা উন্নতি করব। এখনও নিখুঁত কম্বিনেশন গড়ে তুলতে পারিনি আমরা। এগুলো নির্ভর করে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। তা ছাড়া এই দলের ফুটবলাররা এর আগে একসঙ্গে কখনও খেলেনি। তবু বলব, আমাদের ছেলেরা ভাল খেলছে। আমরা ক্রমশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি”।
ব্লাস্টার্স ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে হারায় তাদের বিরুদ্ধে বাড়তি চাপে থাকতে পারে। এ কথা শুনে ইস্টবেঙ্গল কোচ বলেন, “ফুটবলে সব সময়ই চাপ থাকে। বিশেষ করে কেরলর মতো রাজ্যে, যেখানে সমর্থকেরা খুবই আবেগপ্রবণ হয়, দলের ভাল-মন্দ নিয়ে তাদের অনেক মতামত থাকে। তারা চায় প্রতি ম্যাচে দল জিতুক। ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। আমাদের এই চাপ সামলাতেই হবে”।
কুয়াদ্রাত মনে করেন, এই ম্যাচে কঠিন লড়াই হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, কালকের ম্যাচে যথেষ্ট তীব্রতা থাকবে। কারণ, দুই দলই জয়ে ফিরতে মরিয়া। শারীরিক ভাবেও ক্রমশ তৈরি হয়ে উঠছে দুই দলই। বেঙ্গালুরুতে যেমন আমাদের ফুটবলারদের অনেক শারীরিক ফুটবল খেলতে হয়েছে, এই ম্যাচেও বোধহয় তা করতে হবে। ছোটখাটো, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে”।
গত মরশুমে কেরল ব্লাস্টার্সের হয়েই মাঠে নেমে সবচেয়ে বেশি গোল করে গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছিলেন যিনি, সেই দিমিত্রি দিয়ামান্তাকস এ বার ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলছেন। গত দু’বছর ধরে কোচির যে নেহরু স্টেডিয়াম তাঁর হোম গ্রাউন্ড ছিল, সেই স্টেডিয়ামে রবিবার তিনি প্রতিপক্ষের হয়ে নামতে চলেছেন। এই বিশেষ অনুভূতি নিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রথম প্রতিপক্ষ হিসেবে এই মাঠে নামতে চলেছি। এখানে যে ভালবাসা পেয়েছি, সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে এখন যেহেতু আমি অন্য ক্লাবের হয়ে খেলি, তাই অবশ্যই চাইব আমার বর্তমান দলকে জেতাতে। আমি আমার দলের হয়ে গোল করার চেষ্টা করব। এই ম্যাচের জন্য ভাল প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। কাল আমরা তিন পয়েন্টের জন্য লড়ব”।
আরও পড়ুন: চাই না বাচ্চারা আমাকে নকল করুক, বাংলাদেশকে ছারখার করে বলছেন বুমরা
ব্লাস্টার্সের সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “গত দুবছরে এখানকার সমর্থকেরা আমাকে অনেক উৎসাহ ও ভালবাসা দিয়েছেন। তবে ফুটবলে এ রকম হয়ই। মনে হয় সমর্থকেরা এই ব্যাপারটা বুঝবেন। কেরলর সমর্থকদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে আমার। এটা ৯০ মিনিটের খেলা। তার বাইরে তো কিছু নয়”।
অন্যদিকে ব্লাস্টার্সের নতুন হেড কোচ সুইডেনের মিখায়েল স্তাহরেও এই ম্যাচে জয় ছাড়া কিছু ভাবছেন না। বলেন, “গত ম্যাচে একেবারে শেষ পর্যায়ের গোলে যে ভাবে হেরেছি আমরা, তা মেনে নেওয়া কষ্টকর ছিল। এই ম্যাচে আমাদের জিততেই হবে। আমাদের হোম টিমের মতো খেলতে হবে। আমাদের সমর্থকেরা অসাধারণ। কালও গ্যালারিতে ৪০-৫০ হাজার লোক থাকবে। ওরা আমাদের ফুটবলারদের অনেক শক্তি জোগায়। সেই শক্তি আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের প্রতিপক্ষকে আরও চাপে রাখতে হবে। বল বেশিরভাগ সময় প্রতিপক্ষের এলাকায় রাখার চেষ্টা থাকবে”। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বিরল কীর্তি গড়বেন ঋষভ পন্থ? বিরাট পূর্বাভাস প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রাক্তন তারকার