কলকাতা: গোলেই ফয়সালা হয় হার-জিতের। কিন্তু ইতিহাস গড়ে সেই জুটি বা ত্রয়ী, যাঁরা একসঙ্গে দুর্দান্ত খেলে দলকে সেই গোলগুলি এনে দেন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এমন অনেক মরশুম রয়েছে, যেখানে আক্রমণ বিভাগের তিনজন খেলোয়াড় একসঙ্গে দুরন্ত ছন্দে থেকে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে তছনছ করে দিয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছে আইএসএল ইতিহাসে একই মরশুমে সবচেয়ে বিধ্বংসী ও কার্যকরী আক্রমণ-ত্রয়ীরা।
স্টুয়ার্ট, দিয়াজ ও ছাঙতে (মুম্বই সিটি এফসি – ২০২২-২৩)
মোট গোল অবদান: ৫০
গ্রেগ স্টুয়ার্ট – ৮ গোল | ৮ অ্যাসিস্ট
জর্জ পেরেইরা দিয়াজ – ১১ গোল | ৭ অ্যাসিস্ট
লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে – ১০ গোল | ৬ অ্যাসিস্ট
২০২২–২৩ মরশুমে ডেস বাকিংহ্যামের প্রশিক্ষণে মুম্বই সিটি এফসির আক্রমণের তীব্রতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা ভারতীয় ফুটবলে খুব কমই দেখা যায়। সেই দুর্দান্ত সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিলেন আক্রমণ বিভাগের তিন খেলোয়াড় — গ্রেগ স্টুয়ার্ট, জর্জ পেরেইরা দিয়াজ এবং লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। এই ত্রয়ী একসঙ্গে দলের ৫০টি গোলে অবদান (গোল + অ্যাসিস্ট) রেখেছিলেন, যা আইএসএল ইতিহাসে এক মরশুমে কোনও ত্রয়ীর সর্বোচ্চ। সে বার লিগ পর্বে মোট ৫৪টি গোল করে নতুন নজির গড়ে দ্বিতীয়বারের মতো আইএসএল শিল্ড জেতে মুম্বই।
লানজারোতে, কোরো ও বুমৌস (এফসি গোয়া – ২০১৭-১৮)
মোট গোল অবদান: ৪৬
মানুয়েল লানজারোতে – ১৩ গোল | ৬ অ্যাসিস্ট
ফেরান কোরোমিনাস (কোরো) – ১৮ গোল | ৫ অ্যাসিস্ট
হুগো বুমৌস – ২ গোল | ২ অ্যাসিস্ট
সের্খিও লোবেরার অধীনে এক নতুন আক্রমণাত্মক দর্শনের সূচনা করে এফসি গোয়া, যার কেন্দ্রে ছিলেন লানজারোতে, কোরোমিনাস ও বুমৌস। লানজারোতে ছিলেন আক্রমণ তৈরির প্রাণকেন্দ্র। খেলায় ছন্দ আনা, গোল করা ও সুযোগ তৈরি করার কাজ তিনিই সামলাতেন। অভিষেক মরশুমেই তিনি ১৯ ম্যাচে ১৯টি গোল অবদান রেখে সবার নজর কেড়ে নেন।
বুমৌস, কোরো ও জ্যাকিচাঁদ (এফসি গোয়া – ২০১৯-২০)
মোট গোল অবদান: ৪৬
হুগো বুমৌস – ১১ গোল | ৯ অ্যাসিস্ট
ফেরান কোরোমিনাস (কোরো) – ১৪ গোল | ৪ অ্যাসিস্ট
জ্যাকিচাঁদ সিং – ৫ গোল | ৩ অ্যাসিস্ট
সে মরশুমেও সের্খিও লোবেরার প্রশিক্ষণে এফসি গোয়ার আক্রমণাত্মক ফুটবল অভিযান অব্যহত ছিল। ২০১৯–২০ মরশুম ছিল আধিপত্যের। সে মরশুমের কেন্দ্রে ছিল এক কার্যকরী ও বিপজ্জনক ত্রয়ী — হুগো বুমৌস, কোরো ও জ্যাকিচাঁদ সিং। বুমৌস ছিলেন মাঝমাঠের মাস্টারমাইন্ড, যিনি খেলার ছন্দ তৈরি করতেন। কোরো স্বভাবসিদ্ধ নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করে যেতেন আর জ্যাকিচাঁদ উইং থেকে গতি ও ক্ষিপ্রগতির দৌড় দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে বিপদে ফেলতেন। এই ত্রয়ীর আক্রমণভাগ ছিল মসৃণ, দ্রুত ও ধ্বংসাত্মক।
বেদিয়া, কোরো ও জ্যাকিচাঁদ (এফসি গোয়া – ২০১৮-১৯)
মোট গোল অবদান: ৪৪
এডু বেদিয়া – ৭ গোল | ৬ অ্যাসিস্ট
ফেরান কোরোমিনাস (কোরো) – ১৬ গোল | ৭ অ্যাসিস্ট
জ্যাকিচাঁদ সিং – ৪ গোল | ৪ অ্যাসিস্ট
লোবেরার দ্বিতীয় মরশুমে এই এফসি গোয়া ত্রয়ী স্টাইল ও কার্যকারিতার নিখুঁত মিশ্রণ উপহার দেয়। কোরো ছিলেন আক্রমণের মূলকেন্দ্র, তার আগের মরশুমের মতো সেবারও গোল্ডেন বুট জিতে নেন ১৬ গোল করে, সঙ্গে আরও ৭টি অ্যাসিস্টও যোগ করেন।
জিথিন, আজারেই ও আলবিয়াখ (নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি – ২০২৪-২৫)
মোট গোল অবদান: ৪৪
জিথিন এমএস – ২ গোল | ৫ অ্যাসিস্ট
আলাদিন আজারেই – ২৩ গোল | ৭ অ্যাসিস্ট
নেস্টর আলবিয়াখ – ৬ গোল | ১ অ্যাসিস্ট
ডুরান্ড কাপ জিতে আত্মবিশ্বাস নিয়েই মরশুম শুরু করেছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। সেই গতি ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাদের আক্রমণ বিভাগের ত্রয়ী — জিথিন এমএস, আলাদিন আজারেই এবং নেস্টর আলবিয়াখ। এই ত্রয়ী একসঙ্গে তৈরি করেন আইএসএলের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম রোমাঞ্চকর আক্রমণ বিভাগ, যেখানে ছিল গতি, কৌশল এবং নিখুঁত ফিনিশিং-এর দুর্দান্ত মিশেল। তথ্য: আইএসএল