কলকাতা: ঘরের মাঠে প্রথম জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছেও তা অর্জন করতে পারল না মহমেডান এসসি (Mohammedan SC vs Punjab FC)। তবে দুর্দান্ত লড়াই করল তারা। সোমবার কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২-২-এ ড্র করে মাঠ ছাড়ে কলকাতার সাদা-কালো বাহিনী। লড়াই করে গোলে ফিরে এলেও তাদের প্রথম আইএসএলে একটিও হোম ম্যাচে জয় না পাওয়াটা তাদের কাছে অবশ্যই হতাশাজনক।
পাঞ্জাব এফসি এ দিন যে ভাবে শুরু করেছিল, তাতে মনে হয় এ দিন তারাই জয়ের হাসি নিয়ে লিগ শেষ করবে। ন’মিনিটের মাথায় নর্বের্তো ভিদালের গোলে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৫৩ মিনিটের মাথায় লুকা মাজেন দ্বিতীয় গোল করার পর হয়তো তারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ে এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খেলায় ফিরে আসে মহমেডান এবং দু’টি গোলই শোধও করে তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে মহমেডানের রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা দু’জন ফুটবলার মার্ক স্মেরবক ৫৮ মিনিটে এবং রবি হাঁসদা ৬৬ মিনিটে গোল করে সমতা আনেন। জয়সূচক গোল করার জন্য অনেক সময় পায় দুই দলই। তবে কোনও পক্ষই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।
মহমেডান এ দিন সারা ম্যাচে মোট ন’টির মধ্যে সাতটি শটই প্রতিপক্ষের গোলের লক্ষ্যে রাখলেও দুটির বেশি গোল করতে পারেনি। অন্যদিকে, পাঞ্জাব এফসি-র দশটি শটের মধ্যে চারটি শট ছিল গোল। প্রথমার্ধে দাপুটে ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমশ খেলা থেকে হারিয়ে যাওয়ারই মাশুল দিতে হল লুকা মাজেনদের। এই ড্রয়ের ফলে মহমেডান সর্বশেষ স্থানে থেকেই লিগ শেষ করল এবং পাঞ্জাব এফসি আপাতত আট নম্বরে।
এ দিন শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে পাঞ্জাব এফসি। প্রথম ৪৫ মিনিট ধরে আকর্যণীয় ফুটবল খেলে তারা। দ্রুত পাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মহামেডান এসসি-র মাঝমাঠকে বারবার ছত্রভঙ্গ করে দেয়, যা সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যায় সাদা-কালো বাহিনী।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ন’মিনিটের মাথাতেই এগিয়ে যায় আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নর্বের্তো ভিদালের গোলে। বাঁ দিক থেকে চমৎকার ভাবে ফাঁকা জায়গায় প্রবেশ করে একটি দ্রুত বুদ্ধিদীপ্ত পাস বাড়ান হাঙ্গেরিয়ান ফরোয়ার্ড আসমির সুলজিচ। সেই পাস থেকেই বল জালে জড়িয়ে পাঞ্জাব এফসিকে এগিয়ে দেন ভিদাল (১-০)। ৫৩ মিনিটের মাথায় এই ভিদালই পাঞ্জাব এফসির দ্বিতীয় গোলের মূল কারিগর ছিলেন।
তিনি মহামেডান এসসি-র রক্ষণভাগ চিরে একটি নিখুঁত থ্রু বাড়ান লুকা মাজেনের উদ্দেশ্যে, যিনি বক্সের মাথায় ছিলেন। ডিফেন্ডার জুডিকা তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন। সেই সুযোগে বল পেয়ে তা জালে জড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মাজেন (২-০)।
দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসে মহামেডান এবং দ্রুত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। বাঁ দিক থেকে মনবীর সিং একটি তীক্ষ্ণ ক্রস বাড়ান, যেখানে একাধিক সতীর্থ বক্সের খুব কাছাকাছি ছিলেন বলটি গোলে পাঠানোর জন্য। গোলমুখে ভিড় জমে যায়। বিপক্ষের খেলোয়াড়দের বাধা সত্ত্বেও তখন বাঁ পায়ে অনায়াসে বলটি গোলে ঠেলে ব্যবধান কমান বিরতির পর পরিবর্ত হিসেবে নামা অস্ট্রিয়ান ফরোয়ার্ড মার্ক শ্মেরবক (২-১)।
আরও পড়ুন: কবে অবসরের পরিকল্পনা রয়েছে রোহিত শর্মার? জানিয়ে দিলেন ছোটবেলার কোচ
সমতা আনতে মরিয়া মহমেডান এসসি এরপর তাদের অনুকূলে গতি আনার চেষ্টা শুরু করে এবং সফলও হয়। ফলে পাঞ্জাব এফসির রক্ষণভাগ কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে এক দৃষ্টিনন্দন দৌড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেদ করে ঢুকে পড়েন মহমেডানের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড কার্লোস ফ্রাঙ্কা। তিনজন পাঞ্জাব এফসি খেলোয়াড় তাঁকে বাধা দিয়ে এগিয়ে এলে, তিনি নিখুঁত সময়ে বাংলার ফরোয়ার্ড রবি হাঁসদার উদ্দেশ্যে একটি মাপা পাস বাড়ান। গোলের উল্টো দিকে মুখ করে থাকা রবি এক সেকেন্ডের মধ্যে গোলের দিকে ঘুরে এক জোরালো শটে বল জালে পাঠিয়ে সমতা এনে ফেলেন (২-২)।
এর পর তৃতীয় গোলের লক্ষ্যে আক্রমণ শুরু করে দুই দলই। ফ্রাঙ্কা একাধিকবার গোলের সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেন। অন্যদিক থেকে শ্মেরবকও তাঁর দ্বিতীয় গোলের চেষ্টা করেন। বদলি হিসেবে নেমে তিনি এ দিন ছটি পাসের মধ্যে পাঁচটি নিখুঁত ভাবে দেন। একটি ট্যাকল করেন, দুটি ক্রস বাড়ান এবং একটি গোল করেন। তবে ফ্রাঙ্কার একাধিক চেষ্টা বিফলে যায়। অন্যদিকে, লুকা মাজেনও একটি সহজ সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেন। ফলে কোনও দলই এর বেশি এগোতে পারেনি।
মহমেডান এসসি দল (৪-৩-৩): পদম ছেত্রী (গোল), জুডিকা, জো জোহেরলিয়ানা, ফ্লোরেন্ট অজিয়ে, আদিঙ্গা, মির্জালল কাসিমভ, লালরিনফেলা, অমরজিৎ সিং কিয়াম (বিকাশ সিং-৪৫), কার্লোস ফ্রাঙ্কা (ইরাফিল দেওয়ান-৯৫), মনবীর সাইনি (রবি হাঁসদা-৬২), মকান চোঠে (মার্ক স্মেরবক-৪৫)।
পরিসংখ্যানে ম্যাচ
বল পজেশন: মহমেডান এসসি ৫৪.৬% - পাঞ্জাব এফসি ৪৫.৪%, সফল পাসের হার: ৭৪%-৭১%, গোলে শট: ৭-৪, ফাউল: ৯-১৭, ইন্টারসেপশন: ১১-১২, ক্রস: ১০-১৮, কর্নার: ২-৭, হলুদ কার্ড: ১-১।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: কার্লোস ফ্রাঙ্কা (মহমেডান এসসি) (সৌ: ISL মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ক্রিকেট ও সুন্দরী! WPL ফাইনালের আগে মাঠ মাতাবেন নোরা ফতেহি, সঙ্গে একঝাঁক নামী শিল্পী