কলকাতা: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে আইএসএলের সেরা ছয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল ইস্টবেঙ্গল এফসি। রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সল ক্রেসপো ও ক্লেটন সিলভার গোলে ম্যাচ জিতে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। সুনীল ছেত্রী সমতা আনলেও শেষরক্ষা করতে পারেননি তিনি। চলতি লিগে কোনও অ্যাওয়ে ম্যাচেই জিততে পারল না তারা।
আইএসএল ইতিহাসে এই প্রথম পরপর দু’টি ম্যাচে জিতল ইস্টবেঙ্গল। রবিবারের এই জয়ের ফলে ২১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের ছ’নম্বরে উঠে এল কলকাতার দল। শেষ ম্যাচে তারা পাঞ্জাব এফসি-কে হারাতে পারলে ছ’নম্বরে থেকে তাদের লিগ শেষ করার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ছ’নম্বরের দৌড়ে আপাতত তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চেন্নাইন এফসি ও নর্থইস্ট এফসি, যারা একে অপরের মুখোমুখি হতে চলেছে মঙ্গলবার। অন্যদিকে, চলতি লিগে বেঙ্গালুরুর অভিযান কার্যত শেষ হয়ে গেল এই হারের সঙ্গে। শেষ ম্যাচে তারা জিতলেও তাদের সেরা ছয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রথম এগারোয় এদিন হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা ও ভিক্টর ভাজকেজকে রাখেন ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। গত ম্যাচের দল থেকে বাদ পড়েন আলেকজান্দার প্যানটিচ ও সায়ন ব্যানার্জি। ৪-৩-৩-এ দল সাজায় তারা। অন্যদিকে, শিবশক্তি নারায়নণ ও ডেনমার্কের ফরোয়ার্ড অলিভার দ্রস্তকে সামনে রেখে ৪-১-২-১-২ ছকে খেলা শুরু করে বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথম দলে দেখা যায়নি সুনীল ছেত্রীকে।
শুরুর দিকে মাঝমাঠ নির্ভর ফুটবল হলেও ১১ মিনিটের মাথায় প্রায় অবধারিত গোল বাঁচান ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন গিল। দ্রস্তের লব গিয়ে পৌঁছয় বক্সের ডান দিকে থাকা তরুণ মিডফিল্ডার ফানাইয়ের কাছে। তিনি স্কোয়ার পাস করেন গোলের সামনে থাকা শিবশক্তির কাছে। তিনি গোলে বল ঠেলেন কিন্তু তা গিলের মুখে লেগে গোলের বাইরে চলে যায়।
এই সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল তাদের দিতে হয় ১৮ মিনিটের মাথায়, যখন পেনাল্টি থেকে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন সল ক্রেসপো। তার আগে বক্সের মধ্যে নাওরেম মহেশকে ফাউল করেন ফানাই। ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দ্বিধা করেননি রেফারি (১-০)।
কিন্তু ২৩ মিনিটের মাথায় ফের প্রতিপক্ষকে গোলের সুযোগ কার্যত তৈরি করে দেয় লাল-হলুদ ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের। দ্রস্তের পায়ে বল তুলে দেন তিনি। তবে এই ভুলকে কাজে লাগানোর আগেই শৌভিক চক্রবর্তী তা ব্লক করে দিয়ে দলকে বাঁচান। তাঁর গায়ে লেগে বল গোলের বাইরে চলে যায়। ২৫ মিনিটের মাথায় ফের শিবশক্তিকে গোলের স্কোয়ার পাস দেন দ্রস্ত। কিন্তু তাঁর পায়ে বল পৌঁছতেই দেয়নি লাল-হলুদ ডিফেন্স।
এই সময় বেঙ্গালুরু সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এবং পরপর বেশ কয়েকটি আক্রমণ করেন শিবশক্তি, হাভিয়ে হার্নান্ডেজ ও ফানাই। কিন্তু প্রতিবারই লাল-হলুদ রক্ষণ পরিস্থিতি সামলায়। টানা চাপ সামলানোর পর কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠে তারা। সল বল বাড়ান বিষ্ণুকে এবং তিনি বল দেন ক্লেটনকে। গোলকিপার গুরপ্রীতকে ধোঁকা দিয়ে ক্লেটন কাটব্যাক করেন ফের বিষ্ণুকে। কিন্তু এ বার বলের নাগালই পাননি বিষ্ণু। তিনি বলে ঠিকমতো পা লাগাতে পারলে হয়তো দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যেত ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধের স্টপেজ টাইমে গোলের সুযোগ তৈরি করে ফেলেন হার্নান্ডেজ, যখন গোলের সামনে লো ক্রস দেন তিনি। সেখানে দ্রস্ত থাকলেও তাঁকে বলের দখল নিতে দেননি লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে রীতিমতো জমজমাট প্রথমার্ধের যখন দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয় তখন বিষ্ণুকে তুলে সায়ন ব্যানার্জিকে মাঠে নামান কুয়াদ্রাত। বেঙ্গালুরুও নামায় সুনীল ছেত্রীকে। শিবশক্তির জায়গায় নামেন তিনি। ৪৯ মিনিটের মাথাতেই রোশনের ভাসানো থ্রু থেকে বল পেয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন সুনীল। কিন্তু তাঁর গোল বাতিল হয়ে যায় তিনি অফসাইডে থাকায়। রেফারির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে হলুদ কার্ড দেখেন বেঙ্গালুরুর কোচ জেরার্দ জারাগোজা।
কিন্তু যে জন্য সুনীলকে নামানো হয়, তা তিনি করে দেখান ৫৯ মিনিটের মাথায়। বক্সের মধ্যে বাঁ দিক থেকে ক্রস বাড়াতে গিয়ে তিনি বল মারেন হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার ডান হাতে। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি এবং নিখুঁত শটে গোল করে সমতা এনে দেন সুনীল (১-১)। ঠিক দিকেই ঝাঁপালেও বলের নাগাল পাননি গিল। এই গোলের পরবর্তী মিনিটেও খাবরার হাতে বল লাগায় পেনাল্টির আবেদন জানান সুনীলরা। কিন্তু এ বার আর রেফারি সাড়া দেননি।
তবে বেশিক্ষণ বেঙ্গালুরু এফসি-কে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি ইস্টবেঙ্গল এবং ৭৩ মিনিটের মাথায় অসাধারণ গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন ক্লেটন। তবে এই গোলের অর্ধেক কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন নিশু কুমার। বাঁ দিকে উইং থেকে যে ক্রসটি বাড়ান তিনি, তা ছিল একেবারে নিখুঁত। ক্লেটনকে শুধুই মাথা ছোঁয়াতে হয় গোলের জন্য (২-১)। গত ছ’ম্যাচে গোল পাননি ক্লেটন। এ দিনই গোলে ফিরে দলকেও জেতান।