কলকাতা: মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে প্রায় ৭৫ মিনিট ন’জনে মিলে লড়াই করার পর গোলশূন্য ড্র করাটা যে ইস্টবেঙ্গলের নৈতিক জয়, শনিবারের ম্যাচের দুই যুযুধান দলের কোচই এই ব্যাপারে একমত হয়েছেন। এই লড়াই যে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, তা নির্দ্বিধায় বলছেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা ফুটবলাররা। শনিবার প্রথমার্ধে দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার ও নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর প্রায় ৭৫ মিনিট ন’জনে মিলে লড়াই করে দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে ইস্টবেঙ্গল এবং নিজেদের গোল অক্ষত রাখে। চলতি লিগের প্রথম পয়েন্ট তারা অর্জন করে নেয় এই ম্যাচেই। পুরো দল নিয়ে মহমেডান নাগাড়ে আক্রমণের পরেও গোল পায়নি।
আইএসএলে যে চারটি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কোনও খেলোয়াড় স্কোর সমান থাকাকালীন লাল কার্ড দেখেছেন, সেই ম্যাচগুলিতে কখনও তারা হারেনি। লড়াইয়ের এমন দৃষ্টান্ত সাধারণত পাওয়া যায় না। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই ম্যাচের গোলপ্রহরী প্রভসুখন গিলের কাছে দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ম্য়াচের পর আইএসএল মিডিয়াকে তিনি বলেছেন, ''ম্যাচের ২৮ মিনিটের পর থেকে ন’জনে এই লড়াই আমি কখনও ভুলব না। আর কোনও আইএসএল ম্যাচে এমন হয়েছে বলে মনে হয় না। আর কোনও লিগেও এমন হয়েছে কি না, সন্দেহ আছে। সল্টলেক স্টেডিয়ামের মতো এত বড় মাঠে ২৮ জন মিলে একটা পয়েন্টের জন্য লড়াই করা অসাধারণ ব্যাপার। ছোট মাঠেও এমন লড়াই করা দুর্দান্ত ব্যাপার।''
এই লড়াইয়ের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে দেশের ফুটবল মহলে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন বহু ফুটবলপ্রেমী, সমর্থকরা। এই লড়াইয়ের কৃতিত্ব শুধু নিজেরা নেননি ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার। এ জন্য সমর্থকদেরও কৃতিত্ব দেন তিনি। বলেন, ''যখন আমরা সে দিন বিরতিতে যাই, তখন আমাদের যে ব্যাপারটা বেশি উজ্জীবিত করে, তা ছিল, এখন পর্যন্ত লিগে আমরা একটাও জয় পাইনি। তখন আমাদের মাথায় একটাই কথা ঘুরছিল, আমাদের একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। আমরা তখন ৯ জনে খেলছিলাম। কিন্তু অসাধারণ সমর্থকদের জন্য একবারও তা মনে হয়নি আমাদের। পুরো একশো মিনিট সমান ভাবে আমাদের জন্য গলা ফাটিয়েছে ওরা। আমরা সৌভাগ্যবান যে, এমন সমর্থকদের পেয়েছি।''
দলের বাঙালি মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তী বলছেন, ''এতক্ষণ ন’জনে খেলা আমাদের কাছে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওই পরিস্থিতিতে এক পয়েন্ট অর্জন করা বেশ কঠিন ছিল। সে জন্য ভাল লাগছে। তবে এই লড়াইয়ের ফলে আমাদের টিম স্পিরিট অবশ্যই বাড়বে। এগারোজনের বিরুদ্ধে ২৮ মিনিটের পর থেকে ন’জনে খেলা যে কত কঠিন, তা নিশ্চয়ই সবাই জানেন। এই লড়াই-ই আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। ক্লিনশিট বজায় রাখা খুবই জরুরি ছিল। বহুদিন আমরা নিজেদের গোল অক্ষত রাখতে পারিনি।''
মাঝমাঠে শৌভিকের বিদেশী সঙ্গী সল ক্রেসপোও আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ''আমরা জানি যে আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু দু’জন খেলোয়াড়কে ছাড়াই পয়েন্ট অর্জন করাটা এক পয়েন্টের চেয়েও বেশি মূল্যবান। আমরা একটা দল হিসেবে, একটা পরিবারের মতো লড়াই করেছি। খুব কঠিন ছিল লড়াইটা। এ ভাবে খেলতে পারলে আমরা অনেক ম্যাচ জিততে পারব।'' তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল মিডিয়া