কলকাতা: এ বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যে খবরটা শুনে খুশি হতে পারেন যে কোনও ভারতীয় ফুটবলপ্রেমী, তা হল এ মরশুমে ভারতীয় ফুটবলারদের পারফরম্যান্স গত ন’বারের তুলনায় সবচেয়ে ভাল হয়েছে। আগে যে ভাবে আইএসএলে খেলতে আসা বিদেশীরাই সকলের নজর কাড়তেন, যে ভাবে তাঁদের ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা করতেন বিদেশি কোচেরা, এ বার কিন্তু ছবিটা একটু অন্যরকম। কোচেরা ভারতীয় ফুটবলারদের কথাও বলছেন এবং তাঁদের প্রশংসাও করছেন প্রায়ই। সবচেয়ে বড় কথা বহু ম্যাচের ফলের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলেছেন এই ভারতীয় তারকারা। 


লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, স্ট্রাইকার, মুম্বই সিটি এফসি 


মুম্বই সিটি এফসি-র আক্রমণের অন্যতম সেরা অস্ত্র এই মিজো তারকা, যিনি এ পর্যন্ত দশটি গোল করে দলের স্কোরারদের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছেন। ছ’টি অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। দুই প্রান্ত দিয়ে, বিশেষ করে ডান প্রান্ত, ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণে উঠে গোল করা বা সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দেওয়া রীতিমতো অভ্যাস করে ফেলেছেন তিনি। গত পাঁচটি ম্যাচেই দলকে গোল উপহার দিয়েছেন তিনি।


মনবীর সিং, উইঙ্গার, মোহনবাগান এসজি 


মুম্বইয়ের দলের উইংকে যে ভাবে সচল রাখেন ছাঙতে, সে ভাবেই মোহনবাগানের উইং থেকে আক্রমণে অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখা যায় মনবীর সিংকে। গতিময় এই উইঙ্গারকে সামলাতে হিমশিম খান যে কোনও দলের সাইড ব্যাকরাই। এ ভাবে এ পর্যন্ত দলের সাতটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন মনবীর। ফাইনালে আর একটি গোলে অ্যাসিস্ট করলে তিনিই হবেন এক মরশুমে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট দেওয়া ভারতীয় খেলোয়াড়।


বিক্রম প্রতাপ সিং, উইঙ্গার, মুম্বই সিটি এফসি 


মুম্বই সিটি এফসি-র প্রান্তিক আক্রমণের আর এক ধারালো অস্ত্র এই পাঞ্জাবি তরুণ উইঙ্গার। ছাঙতে ও বিক্রম দু’দিক দিয়ে সমান ভাবে ও নাগাড়ে আক্রমণ করে যান। যার ফলে বিপক্ষের রক্ষণে অনেক ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। সেই জায়গাগুলি কাজে লাগিয়েই দলের ফরোয়ার্ডরা শত্রু শিবিরে প্রবেশ করে গোলের মুখ খুলে ফেলেন। প্রায় নিয়মিতই দেখা যায় এই দৃশ্য। তবে উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে বিপক্ষের ডিফেন্সকে ফালাফালা করতে অনেকবারই দেখা গিয়েছে বিক্রম প্রতাপকে। এ মরশুমে আটটি গোলও করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। সঙ্গে চারটি অ্যাসিস্টও। 


লিস্টন কোলাসো, উইঙ্গার, মোহনবাগান এসজি


গত মরশুমে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স পাওয়া না গেলেও এ বার মাঝে মাঝেই চেনা ছন্দে পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। তবে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। বড় ম্যাচগুলিতে অবশ্য বারবার নিজেকে উজ্জ্বল করে তুলেছেন ২৫ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। যখনই সমর্থকদের মনে হয়েছে অনেকদিন লিস্টনকে সেরা ছন্দে পাওয়া যায়নি, তখনই তিনি ফিরে এসেছেন এবং সমর্থকদের মন ভরিয়ে তুলেছেন। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠে বক্সের পাশে গিয়ে কাট ইন করে বক্সে ঢুকে একাধিক ড্রিবল করে ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে হয় নিজেই গোলে নাকল্ শট নেওয়া, নয় সতীর্থদের গোলের বল সাজিয়ে দেওয়া, এটাই কোলাসোর ‘সিগনেচার মুভ’। 


শুভাশিস বোস, ডিফেন্ডার, মোহনবাগান এসজি


মোহনবাগান রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ ২৮ বছর বয়সী এই সাইড ব্যাক। মাঝে মাঝে প্রয়োজনে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের ভূমিকাও পালন করেন। দল যদি তিন ব্যাকে খেলে, তা হলে ডিফেন্ডারদের অনেকটা চাপ নিতে হয়। দলে ভাল ও নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার না থাকলে কোনও কোচই এই ঝুঁকি নেবেন না। বিশেষ করে মুম্বইয়ের মতো আক্রমণাত্মক দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু মোহনবাগান কোচ হাবাস দলকে সমানে তিন ব্যাকে খেলিয়ে যাচ্ছেন শুভাশিসের মতো নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আছেন বলেই।                                                                                             তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল