কলকাতা: সদ্যসমাপ্ত আইএসএলের ২০২৩-২৪ মরশুমে বেশিরভাগ ম্যাচই দর্শকদের উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দিয়েছে চরমে। অনেক ম্যাচে প্রথম থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা বজায় থেকেছে। আর বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা যখন তাদের প্রিয় দুই প্রধানের খেলা দেখেন, তখন তো তাদের উন্মাদনার কোনও সীমা থাকে না।


মোহনবাগান এসজি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি (২-২)


ম্যাচের শুরুতেই গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জীবনে প্রথম ডার্বিতে নামা মণিপুরী তরুণ অজয় ছেত্রী। ১৭ মিনিটের মাথায় সমতা আনেন মোহনবাগানের আলবানিয়ান ইউরো কাপার আরমান্দো সাদিকু। বিরতিতে ১-১ থাকার পর ৫৫ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ফের এগিয়ে দেন লাল-হলুদ অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা। তবে তাদের জয়ের সম্ভাবনায় জল ঢেলে ফের সমতা আনেন মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেত্রাতস। ফুটবলের যুদ্ধ ছাড়াও সে দিন দু’পক্ষের খেলোয়াড়দের পরষ্পরের মধ্যে দ্বন্দ্বও বাধে দফায় দফায়। সারা ম্যাচে মোট ২২টি ফাউল হয় এবং রেফারি দশবার হলুদ কার্ডও দেখান, দুই দলের পাঁচ জন করে খেলোয়াড়কে।


কেরালা ব্লাস্টার্স বনাম মোহনবাগান (৩-৪)


ম্যাচের শুরুতে চতুর্থ মিনিটেই গোল করে দলকে এগিয়ে দেন আলবানিয়ার ফরোয়ার্ড আরমান্দো সাদিকু। সেই গোলেই এগিয়ে থেকে বিরতিতে যান তাঁরা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যা হয়, তাকে সাইক্লোন বললেও বোধহয় কম বলা হবে। গোলের ঝড় শুরু হয়। বিরতির পর ১৪ মিনিটের মধ্যে পরপর চারটি গোলে ম্যাচের ছবিটা পুরো বদলে যায়।


উত্তেজনায় কাঁপতে থাকা স্টেডিয়ামে প্রথমে ৫৪ মিনিটে মোহননের গোলে সমতা আনে ব্লাস্টার্স। ৬০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ফের ব্যবধান তৈরি করেন সাদিকু। ৬৩ মিনিটে ফের সমতা আনেন ব্লাস্টার্সের গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস। তার পাঁচ মিনিট পরেই কর্নার থেকে হেডের গোলে মোহনবাগানকে ফের এগিয়ে দেন দীপক টাঙরি। ম্যাচের শেষে স্টপেজ টাইমের শেষ মুহূর্তে ফের গোল করে ব্যবধান বাড়ান রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা জেসন কামিংস। তারও পরে শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান কমান দিয়ামান্তাকস। 


মোহনবাগান বনাম চেন্নাই (২-৩)


প্রথমার্ধে জনি কাউকোর গোলে এগিয়ে যাওয়া মোহনবাগান ৭২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল হজম করে। জর্ডন মারের এই গোলের পর ৮০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন বিদেশী ডিফেন্ডার রায়ান এডওয়ার্ডস। স্টপেজ টাইমের চতুর্থ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতা এনে দেন পেট্রাটস। কিন্তু একেবারে শেষ মিনিটে জয়সূচক গোল করে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিকে নিস্তব্ধ করে দেন চেন্নাইনের পরিবর্ত ফরোয়ার্ড ইরফান ইয়াডওয়াড।


কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল এফসি (২-৪)


কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে হলুদ ও লাল-হলুদ বাহিনীর লড়াইয়ে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৪-২-এ হারিয়ে ১১ নম্বর থেকে সাত নম্বরে উঠে আসে ইস্টবেঙ্গল। জোড়া গোল করেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো ও নাওরেম মহেশ সিং।


ম্যাচের মোড় ঘোরে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে, যখন ৪৫ মিনিটের মাথায় ভারতীয় দলের ফুটবলার জিকসন সিং ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান। স্টপেজ টাইমে আরও বড় ভুল করেন তাদের গোলকিপার করণজিৎ সিং। গোলমুখী বিষ্ণুকে বক্সে অবৈধ ভাবে বাধা দিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি ‘উপহার’ দেন তিনি, যা থেকে গোল পান ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সল ক্রেসপো। জিকসনের পর ৭৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন নাওচা সিং, যিনি বল ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলের আমন সিকে-র মুখে বিপজ্জনক ভাবে ঢুঁসো মারেন। আঘাত পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আমন। নাওচাকে লাল কার্ড দেখানোর সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় নেননি রেফারি। ন’জন নিয়েই অবশ্য তুমুল লড়াই চালিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। কিন্তু ঘরের মাঠে শেষরক্ষা করতে পারেনি তারা।


মোহনবাগান এসজি বনাম মুম্বই সিটি এফসি (২-১) 


যুবভারতীর ভরা গ্যালারির সামনে আইএসএল ২০২৩-২৪-এর লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-কে ২-১-এ হারিয়ে লিগ সেরার খেতাব জিতে নেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ম্যাচের ২৮ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসোর গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান এসজি। ৮০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস। সারা ম্যাচে গোলের জন্য মরিয়া মুম্বই সিটি এফসি-কে অবশেষে ৮৯ মিনিটর মাথায় গোল এনে দেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। এই ম্যাচ ড্র করলেই লিগশিল্ড উঠত মুম্বইয়ের ফুটবলারদের হাতে। কিন্তু ম্যাচের শেষ ১০ মিনিট দশ জনে খেলেও মুম্বইকে সেই আকাঙ্খিত গোলটি করতে দেয়নি মোহনবাগানের দুর্ভেদ্য রক্ষণ।        তথ্য: আইএসএল