কলকাতা: আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আইএসএলের কাপ জয়ের (ISL Final) যুদ্ধে নামবে দু’বারের লিগশিল্ড জয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও চার বারের ফাইনালিস্ট বেঙ্গালুরু এফসি (Mohun Bagan Super Giant vs Bengaluru FC)। দুই দলেই এক ঝাঁক দক্ষ ও অভিজ্ঞ তারকা। দুই দলের মধ্যে যেমন তুমুল লড়াই হবে, তেমনই মাঠের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট যুদ্ধও দেখা যাবে, যেগুলি হবে ব্যক্তিগত যুদ্ধ। যারা গ্যালারিতে বসে খেলা দেখবেন, তাদের অনেকেরই নজর থাকবে সেইসব ব্যক্তিগত দ্বৈরথের দিকে, যেগুলি নিয়ে এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হচ্ছে।
জেসন কামিংস বনাম চিঙলেনসানা সিং
এ মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট আক্রমণে অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেসন কামিংস। ফাইনালেও তাঁর ওপর যথেষ্ট ভরসা করবে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ছ’টি গোল করে ও ছ’টি করিয়ে নিজেকে অন্যতম সেরা কার্যকরী ফুটবলার হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কাপ ফাইনালেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মরিয়া চেষ্টা করবেন কামিংস। তাঁকে আটকাতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হবে বেঙ্গালুরুর রক্ষণকে। তাই কামিংসকে আটকানোর কাজটা হয়তো চিঙলেনসানা সিংকেই নিতে হতে পারে। তাদের রক্ষণে দুই স্তম্ভ রাহুল ভেকে ও চিঙলেনসানা। কিন্তু চোটের কারণে এই ম্যাচে রাহুল নাও খেলতে পারেন বা পরের দিকে নামতে পারেন। তা যদি হয়, তা হলে কামিংসকে আটকানোর বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে চিঙলেনসালাকে। ২৪টি ম্যাচের মধ্যে ১৯টিতে শুরু থেকে খেলেছেন চিঙলেনসানা। পাঁচটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছেন ও ১৯টি ব্লক করেছেন। ৭২ বার বল ক্লিয়ার করেছেন তিনি। তাঁর পাসিং অ্যাকিউরেসি ৮৭ শতাংশ। এবং ইন্টারসেপশনের সংখ্যা পাঁচ।
শুভাশিস বসু বনাম রায়ান উইলিয়ামস
শুভাশিস বসু মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর রক্ষণে এক শক্তপোক্ত স্তম্ভ। রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণেও যথেষ্ট দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। ২৪ ম্যাচে ছ’টি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। এরিয়াল ডুয়েলে তিনি যেমন সফল, তেমনই রক্ষণে নির্ভরযোগ্য। তাঁর ট্যাকল ও ডুয়েল জয়ের হার নজরকাড়া। এই মরশুমে তিনি ৪৬টি ইন্টারসেপশন করেছেন—যা লিগে তৃতীয় সর্বোচ্চ—এবং ৪৪টি সফল ট্যাকল করেছেন, যা লিগে চতুর্থ সর্বোচ্চ। রায়ান উইলিয়ামসের সঙ্গে তাঁর লড়াই দেখা যেতে পারে ফাইনালে। দ্রুতগতির এই উইঙ্গার বেঙ্গালুরু এফসি-কে যথেষ্ট ভরসা জুগিয়েছেন। ২১ ম্যাচে সাতটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তাঁর গতির ঝলক ও ক্ষুরধার ড্রিবলিংয়ের জন্য পরিচিত উইলিয়ামস প্রতিপক্ষের রক্ষণে লাগাতার চাপ তৈরি করেন এবং উইং দিয়ে দ্রুত উঠে সবুজ-মেরুন ডিফেন্সকে চাপে ফেলতে চাইবেন। তিনি এখন পর্যন্ত ৩৩টি সুযোগ তৈরি করেছেন এবং ট্যাকলেও ভাল রেকর্ড রয়েছে তাঁর, যা বেঙ্গালুরুর আক্রমণে ভারসাম্য এনে দিয়েছে। শুভাশিসের ওভারল্যাপে ওঠা এবং রক্ষণে সঠিক জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা উইলিয়ামসকে থামানোর ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
আপুইয়া বনাম আলবের্তো নগুয়েরা
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট-এর হয়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ প্লেমেকার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন অনিরুদ্ধ থাপা—১৭টি ম্যাচে তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। এই মিডফিল্ডার ৮১% পাসিং অ্যাকিউরেসির পাশাপাশি ১৮টি কী পাস এবং ২১টি সুযোগ তৈরি করেছেন। তাঁর ৫৫টি রিকভারি ও ১৫টি ইন্টারসেপশন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আক্রমণ ও রক্ষণে দায়বদ্ধতার মধ্যে দারুণ ভারসাম্য বজায় রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে, আলবার্তো নগুয়েরা বেঙ্গালুরু এফসি-র মাঝমাঠ সামলেছেন ২৫ ম্যাচে। সবচেয়ে বড় কথা, পাঁচটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট করে, তিনি ফাইনালে নামতে চলেছেন দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে। এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার এখন পর্যন্ত প্লে-অফের সব ম্যাচেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ধারাবাহিক ড্রিবলিং এবং কঠোর ট্যাকলিংয়ের কারণে তিনি মাঠের দুই প্রান্তেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। থাপার মিডফিল্ড কন্ট্রোল এবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে নগুয়েরার এই ফর্ম ও ধারাবাহিকতার সামনে। দুই দলই মাঝমাঠ দখলে রাখার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে।
সুনীল ছেত্রী বনাম আলবার্তো রড্রিগেজ
বেঙ্গালুরুর আক্রমণে অন্যতম প্রধান ভরসা সুনীল ছেত্রী, যিনি এ পর্যন্ত ১৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল তাঁরই। দু’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তাঁর শেষ মুহূর্তের গোলেই জামশেদপুরকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বেঙ্গালুরু এফসি। প্রতিপক্ষের বক্সে ১০০ বার বল ছুঁয়েছেন তিনি। সফল পাস দিয়েছেন ৩১৮। ১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন সুনীল। তাঁর ৪৯টি শটের মধ্যে ২৭টিই ছিল লক্ষ্যে। যে কোনও সময় খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন যে খেলোয়াড়, তাঁকে আটকানোর দায়িত্ব নেওয়া উচিত দলের সবচেয়ে দক্ষ ডিফেন্ডারেরই। আলবার্তো রড্রিগেজকেই হয়তো এই মূল দায়িত্ব দেবেন মোহনবাগান কোচ মোলিনা। ১৪টি ক্লিন শিট রাখা এই সেন্টার ব্যাক ৯টি ব্লক করেছেন, ৯২টি ক্লিয়ারেন্স করেছেন ও ১৮টি ইন্টারসেপশন আছে তাঁর খতিয়ানে। ১৩টি সফল ট্যাকল করেছেন এই স্প্যানিশ ও ৭০টি ডুয়েল জিতেছেন। এমনকী উঠে গিয়ে পাঁচটি গোলও করে এসেছেন। এমন একজন ডিফেন্ডারের সঙ্গে সুনীল ছেত্রীর লড়াই জমে উঠতে পারে।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)