কলকাতা: যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ভরা গ্যালারি ও সেখানকার শব্দব্রহ্মের সঙ্গে অপরিচিত নন পিটার ক্রাতকি ও তাঁর দলের ফুটবলাররা। তিন সপ্তাহ আগেই এই পরিবেশে খেলে গিয়েছেন রাহুল ভেকে, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরা। তাই শনিবার আইএসএল  (ISL) ফাইনালে তাঁদের এই পরিবেশে নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলেই মনে করেন মুম্বই সিটি এফসি-র (Mumbai City FC) কোচ। বরং হাজার ষাটেক মোহনবাগান সমর্থকের চিৎকার থেকে নিজেদের উজ্জীবিত করার মন্ত্র শেখাচ্ছেন তিনি।



যে যুবভারতীতে যে মোহনবাগানের কাছে হেরে লিগশিল্ড হাতছাড়া হয়েছে তাদের, শনিবার সেই যুবভারতীতেই সেই মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই কাপ জয়ের লড়াইয়ে নামছে গতবারের শিল্ডজয়ীরা। অনেকেরই মনে হচ্ছে কাজটা তাদের পক্ষে কঠিন। কিন্তু কোচ ক্রাতকি পরিস্থিতি সহজ ও স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করে চলেছেন অনবরত।

শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিক সন্মেলনে তিনি বলেন, “ভর্তি গ্যালারির সামনে খেলাটা চাপের নয়। আমাদের খেলোয়াড়রা তো ভরা গ্যালারির সামনেই খেলতে চায়। বরং এ থেকে ওরা আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে। এজন্যই তো আমরা ফুটবল খেলি। আমরা এখানে ফুটবল খেলতেই এসেছি এবং নিজেদের মতো করে খেলতে এসেছি। যেখানে ফোকাস করা দরকার, সেখানে যদি ফোকাস করতে পারি, তা হলে সবাই তা উপভোগ করবে”।

শনিবার যে ‘অন্যরকম’ খেলা দেখাবে তাঁর দল, সে রকমই ইঙ্গিত দিয়ে ক্রাতকি বলেন, “যেহেতু এটা ফাইনাল, তাই আমাদের একটু অন্যরকম খেলতে হবে। (মোহনবাগান এসজি-র বিরুদ্ধে) গত ম্যাচ থেকে আমরা কিছু জিনিস শিখেছি। আগেও বলেছি, গত ম্যাচে আমরা যে ভাবে শুরু করতে চেয়েছিলাম, তার চেয়ে একটু অন্যরকম শুরু করেছিলাম, যার মাশুল দিতে হয় আমাদের। তাই এখানে কাল শুরু থেকেই আমরা নিজেদের ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলব বলে ঠিক করেছি। আমাদের কাল ম্যাচটা জিততে হবে এবং ৯০ মিনিটেই জিততে হবে। তার পরেও যদি খেলতে হয়, তা হলেও ছেলেরা তৈরি আছে”।

‘নিজেদের ব্র্যান্ড’ বলতে তিনি ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন? “নিজেদের স্বাভাবিক খেলাই খেলব। মোহনবাগান কত ভাল দল, কী মানের দল, তা ওরা আমাদের গতবারের মুখোমুখিতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। ওদের প্রচুর গোল করার ক্ষমতা আছে এবং খুবই বিপজ্জনক দল। তাই আমাদের রক্ষণ ও আক্রমণ, দু’দিকেই সেরা পারফরম্যান্স দিতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী”।

ফাইনালের আগে যে তিনি চাপে নেই, তেমনই দাবি করে ক্রাতকি বলেন, “না, চাপে ভুগছি না। কারণ, আমার দলের ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে এবং এই মুহূর্তগুলো আমি উপভোগ করছি। আমরা ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের ছেলেরা শারীরিক ভাবেও খুব ভাল জায়গায় আছে। সেই জন্যই চাপে নেই আমি। হয়তো পরে চাপ নিতে হবে। কিন্তু আপাতত নয়। আমাদের ফুটবলাররা প্রমাণ করে দিয়েছে, কতটা দক্ষ ওরা”।

মুম্বইয়ের দলের ডাচ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ইওল ফান নিফ কার্ড সমস্যার জন্য ফাইনালে খেলতে পারবেন না। তাঁর অভাব নিয়ে কোচ বলেন, “এক্ষেত্রে আমরা যা করে থাকি, সেটাই করব। আমাদের বেঞ্চে এমন একাধিক খেলোয়াড় আছে, যারা সুযোগ পেলে দারুন পারফরম্যান্স দেখাতে সবসময় তৈরি। ফান নিফ অবশ্যই যথেষ্ট ভাল খেলোয়াড়। কিন্তু ওর জায়গায় খেলার মতো ভাল ভাল ফুটবলার আমাদের হাতে আছে। গোয়ায় আমরা যে ম্যাচটা খেলি সম্প্রতি (সেমিফাইনালের প্রথম লেগ), সেই ম্যাচে যে আমরা মাত্র একজন বিদেশী নিয়ে খেলেছিলাম, তা তো দেখেছেনই। ভারতীয় খেলোয়াড়রাই ম্যাচটাকে এক অন্য স্তরে নিয়ে চলে গিয়েছিল”। শুধু ফান নিফ নন, চোটের জন্য ডিফেন্ডার আকাশ মিশ্রও যে খেলতে পারবেন না, তাও জানিয়ে দেন মুম্বই কোচ।

লিগশিল্ড জিততে না পারলেও দলের খেলায় যে তিনি খুশি, তা জানিয়ে ক্রাতকি বলেন, “এ মরশুমে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। লিগশিল্ড জিততে না পারায় খারাপ লেগেছে ঠিকই। তবু বলব এই দলটা আজ যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে, সেই জায়গায় তাদের নিয়ে আসতে পেরে আমি ধন্য। এই ফুটবলারদের সঙ্গে কাজ করাটা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। সব মিলিয়ে আমার কাছে এটা এক সফল মরশুম”।


শনিবার দিমিত্রি পেত্রাতস, জেসন কামিংস, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংদের আক্রমণ সামলাতে হবে তাদের। যা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মুম্বই সিটি এফসি-র অধিনায়ক রাহুল ভেকে। সারা লিগে দাপট দেখিয়ে যাওয়া এই আক্রমণ বিভাগ নিয়ে রাহুল বলেন, “এ মরশুমে আমরা তিন-তিনবার ওদের মুখোমুখি হয়েছি। ফলে আমরা জানি ওরা কী রকম। দুই দলের পক্ষেই ম্যাচটা কঠিন হতে চলেছে। ওদের (মোহনবাগান) পক্ষেও যে কাজটা সহজ হতে চলেছে, তা একেবারেই নয়। আমরা প্রস্তুত হয়েই এসেছি। গত ম্যাচের মতোই, ডিফেন্ডার হিসেবে আমার লক্ষ্য থাকবে, যাতে কোনও গোল আমরা না খাই। ম্যাচটা বেশ কঠিন হবে ঠিকই। তবে আমরা কোনও গোল খাব না”।

দলের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আলবার্তো নগুয়েরাও অধিনায়কের সুরে বলেন, “এটা ফাইনাল, তাই অন্যরকম ম্যাচ হবে। দুই দলের কাছেই ম্যাচটা কড়া চ্যালেঞ্জের হতে চলেছে। এটা ঠিকই যে ওদের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে আমরা হেরেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদেরই বোঝাতে হবে, আমরা কতটা যোগ্য ও দক্ষ। এর আগেও বলেছি, আমরা তৈরি, জেতার জন্য ঝাঁপাব আমরা। ফাইনাল মানেই ৫০-৫০। কাল দেখা যাবে কী হয়”।

প্রাক্তন মোহনবাগানী মিডফিল্ডার জয়েশ রানে বলেন, “মোহনবাগানের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল সন্মানের। কিন্তু আমি এখন মুম্বইয়ে। দুই দলের কাছেই কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে এটা। তবে ফুটবলার হিসেবে আমরা এখানে ট্রফি জিততেই এসেছি”। (তথ্যসূত্র: ISL Media)


আরও পড়ুন: কেন টি-২০ বিশ্বকাপের দলে নেই রিঙ্কু? কারণ ব্যাখ্যা করে দিলেন সৌরভ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।