কলকাতা: আন্তর্জাতিক বিরতির জন্য দলের ছন্দ নষ্ট হবে না বলেই মনে করেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (MBSG) কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের সহকারী মানুয়েল পেরেজ। রবিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন এমনই জানিয়ে দিলেন তিনি।


প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে (১৩ মার্চ) কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলার পর ভারতীয় দলের ম্যাচ থাকায় আইএসএল সাময়িক ভাবে বন্ধ ছিল। সেই অবকাশের পর শনিবার থেকেই ফের লিগের খেলা শুরু হয়েছে। রবিবার তাদের ১৯তম ম্যাচ খেলতে নাঠে নামবে সবুজ-মেরুন বাহিনী, যাদের আটজন ফুটবলার ভারতীয় শিবিরে গিয়েছিলেন।


অবকাশের পর পুরো দল নিয়ে শুক্রবারই প্রথম অনুশীলন হয়েছে বলে জানালেন পেরেজ। অসুস্ধ দলের হেড কোচ হাবাস। তাই শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে তাঁর সহকারী বলেন,  “আন্তর্জাতিক ফুটবলের অবকাশ সর্বত্রই হয়। দেশের হয়ে খেলার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই হতে পারে না। গতকাল আমরা পুরো দল নিয়ে অনুশীলন করেছি। আজ আবার হবে এবং কাল আমরা তিন পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে নামব”।


ম্যাচ না থাকলেও এই ক’দিন অনুশীলন হয়েছে তাদের। ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা তো ম্যাচের মধ্যেই ছিলেন। তবে এর মধ্যেও চোট-আঘাত সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান মোহনবাগানের সহকারী কোচ। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে যিনি দুর্দান্ত খেলেছিলেন, তিনটি গোলেই অ্যাসিস্ট করেছিলেন, সেই সাহাল আব্দুল সামাদ যে রবিবারের ম্যাচে অনিশ্চিত, তা স্বীকার করে নেন তিনি।


এই প্রসঙ্গে পেরেজ বলেন,  “২-৩জন খেলোয়াড়কে নিয়ে আমাদের এখনও জানার বাকি আছে। সাহাল আছে, জনির (কাউকো) একটু সমস্যা হচ্ছিল। এখন ও ঠিক আছে। এখনও আমাদের চারটে ম্যাচ বাকি আছে। কাল আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়াটাও খুব জরুরি। এ সব কথা মাথায় রাখতে হবে। মেডিক্যাল স্টাফের সঙ্গে কথা বলব। তার পরে সিদ্ধান্ত নেব”।


তবে সাহাল না খেলতে পারলেও কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন পেরেজ। বলেন, “সাহাল কাল খেলবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে সাহাল যদিও নাও খেলতে পারে, তা হলে তার জায়গায় খেলার মতো ভাল খেলোয়াড় আমাদের দলে রয়েছে। দলের সবার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা দল হিসেবে খেলি। সবার ওপরেই ভরসা আছে। কোনও একজনের ওপর বেশি নির্ভরশীল নয়। কাল আমাদের দলের কে সেরা হবে, তা তো এখনই কেউ বলে দিতে পারবে না”।


সাহাল, কাউকো অনিশ্চিত হলেও রবিবার হাবাস যে দলের সঙ্গে মাঠে যাবেন ও সাইডলাইনে থাকবেন, তা জানিয়ে দেন পেরেজ। বলেন, “হেড কোচের জ্বর হয়েছে। তাই উনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। তবে কালকের ম্যাচে থাকবেন। সে রকম গুরুতর কিছু হয়নি”।


প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি লিগ টেবলের এগারো নম্বরে থাকলেও তাদের যথেষ্ট দক্ষতা আছে বলেই মনে করেন পেরেজ। এই ব্যাপারে হাবাসের সুরেই তাঁর সহকারী কোচ বলেন, “যে কোনও দলের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট পাওয়াটাই আমাদের কাছে সমান। চেন্নাইনের এখন ১৮ পয়েন্ট ওরা কাল জিতলে ২১ হবে, বেঙ্গালুরু আর পাঞ্জাবের মতো। ওদের এখনও সেরা ছয়ে যাওয়ার আশা আছে। চেন্নাইন আইএসএলের অন্যতম বড় দল। ওদের কয়েকজন ভাল খেলোয়াড় আছে। ওদের যথেষ্ট অভিজ্ঞ একজন কোচ আছেন। ওদের প্রতি শ্রদ্ধা আছে”।


জাতীয় দল থেকে ফেরা খেলোয়াড়দের ফের ক্লাবের স্টাইল ও সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে অসুবিধা হবে না বলেই মনে করেন মোহনবাগানের সহাকারী কোচ। তিনি বলেন, “আমাদের যে খেলোয়াড়রা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়েছিল, তারা ভাল খেলোয়াড় বলেই ওখানে গিয়েছিল। ওরা যথেষ্ট স্মার্ট ও বুদ্ধিমান। ফলে ওদের যে কোনও পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। ইগর স্টিমাচের ফরমেশন, স্টাইল আলাদা। হাবাসের স্টাইল আলাদা। তবে দুই কোচের অধীনেই ভাল খেলার মতো ক্ষমতা দীপক টাঙরিদের আছে। তাই ওদের নিয়ে কোনও অসুবিধা হবে না”।


মানুয়েল পেরেজের পাশেই বসা দীপক নিজেও এই ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত নন। বলেন, “জাতীয় দলের ব্যাপারটা আলাদা। যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে। এখন ক্লাবের কথাই ভাবছি। ক্লাবের জন্য একশো শতাংশ দিতে হবে। সময়ের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মানিয়ে নিতে হয়। ভারতের ম্যাচে হার অবশ্যই কঠিন ছিল। কিন্তু এখন ক্লাবের জন্য খেলছি। ক্লাবের খেলাতেই ফোকাস করছি। যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলব, তখন আবার সেখানেই ফোকাস করব। তাই জাতীয় দলের হারের প্রভাব এখানকার পারফরম্যান্সে পড়বে না”।


হাবাস তাঁর ওপর যথেষ্ট আস্থা রাখছেন বলে তাঁর আত্মবিশ্বাসও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করেন মোহনবাগানের মিডফিল্ডার। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  “কোচ যে আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছেন, আমার ওপর ভরসা করছেন, এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছেই এটা গুরুত্বপূর্ণ। কোচ আমার প্রতি আস্থা রাখলে আমাকেও একশো শতাংশ দিতেই হবে। উনি চান প্রতি অনুশীলনেই আমি আরও উন্নতি করি। এটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি”।


প্রায় প্রতি ম্যাচেই কার্ড দেখতে হয় দীপক টাঙরিকে। চলতি লিগে ১২টি ম্যাচে সাতবার হলুদ কার্ড দেখতে হয়েছে তাঁকে। আইএসএল কেরিয়ারে মোট ১৮বার হলুদ কার্ড ও একবার লাল কার্ড দেখেছেন তিনি। এ মরশুমেই কার্ড সমস্যায় মাঠেও নামতে পারেননি। তবে কার্ডের ভয়ে চাপে থাকতে রাজি নন দীপক। বলেন, “কার্ড নিয়ে আমি বেশি ভাবি না। কারণ আমার খেলার স্টাইলই এ রকম। কোচ যা করতে বলেন আমাকে, সেটাই করি। তবে অবশ্যই কার্ডের ব্যাপারে আমার সতর্ক থাকা উচিত। ক্রমশ ব্যাপারটা আমি রপ্ত করার চেষ্টা করছি”।


তথ্যসূত্র: আইএসএল মিডিয়া


আরও পড়ুন: ভারতীয় ক্রিকেট পেয়ে গেল নতুন উপহার, আইপিএলে আগুনে গতিতে তাক লাগালেন ময়ঙ্ক


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে