কলকাতা: টানা তিনটি ম্যাচে জয়ের পর গত ম্যাচে ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে আটকে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে মোহনবাগান শিবির (Mohun Bagan Super Giant)। তার ওপর চোট-আঘাতের সমস্যা রয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনীতে। কোচের কপালে ভাঁজ পড়ারই কথা। কিন্তু মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা (Jose Molina) স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি এই নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। কারণ, তাঁর দলে যথেষ্ট ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছেন। প্রতিটি পজিশনের জন্য যোগ্য বিকল্প রয়েছে তাঁর হাতে।
জাতীয় দলে ডাক পেয়েও খেলতে পারেননি সবুজ-মেরুন শিবিরের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলার অনিরুদ্ধ থাপা ও আশিস রাই। স্কটিশ তারকা গ্রেগ স্টুয়ার্টের হাঁটুতে চোট সেই ১০ নভেম্বরের ম্যাচের আগে থেকেই। স্টুয়ার্ট ও থাপা তাও অনুশীলনে ফিরেছেন। আশিস সেই অবস্থায় নেই। শনিবার জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে তাঁরা মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।
কিন্তু এই নিয়ে খুব একটা চিন্তায় নেই মোলিনা। জানিয়ে দিলেন, 'আশা করি, থাপা খেলবে। আশিস হয়তো খেলতে পারবে না। তার বিকল্প কাউকে খেলাব। দীপেন্দুকে খেলাতে পারি। গ্রেগ এখনও খেলার জায়গায় আসেনি। ওর হাঁটুর চোট এখনও পুরোপুরি সারেনি। গ্রেগ থাকলে যা পাওয়া যায়, ও না থাকলে হয়তো তা পাওয়া যায় না। তবে আমি এই নিয়ে চিন্তিত নই। ফুটবলে চোট, সাসপেনশন হতেই পারে। এগুলো নিয়েই চলতে হয়। এ সবের জন্য বিকল্প তৈরি রাখতে হয়। আমাদের দলে যথেষ্ট ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে বিকল্প বেছে নিতে আমার অসুবিধা হয় না। প্রথম এগারো বাছতে বা পরিবর্তন করতে আমার অসুবিধা হয় না'।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এমন এক দলের বিরুদ্ধে খেলবে মোহনবাগান, যারা গত দুই ম্যাচে দশ গোল খেয়েছে। প্রথম পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জেতার পর জামশেদপুর গত দু’টি ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে ০-৫ ও চেন্নাইন এফসি-র কাছে ১-৫-এ হারে।
তাই বলে প্রতিপক্ষকে কম গুরুত্ব দেওয়ার মতো চরম ভুল করতে নারাজ মোলিনা। তাঁর বিশ্বাস, ইস্পাতনগরীর দল এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যাবতীয় চেষ্টা করছে। বলেন, 'জামশেদপুর গত দুই ম্যাচে দশ গোল খেয়ে নিশ্চয়ই খুশি নয়। আমি নিশ্চিত, ওরা এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে পড়লে যে কোনও দলই তা করে। এর মধ্যে একটা ম্যাচে তো ওরা লাল কার্ড দেখেছিল, দশ জনে খেলেছিল। গোল করা যদিও কখনওই সোজা কাজ নয়। আশা করি, আমাদের খেলোয়াড়রা কাল গোল করবে, যেমন প্রতি ম্যাচে করে'।
মোহনবাগানের চোট-আঘাত সমস্যার সুযোগ নিয়ে তা কাজে লাগানোর মরিয়া চেষ্টা করতে পারে জামশেদপুর, এ কথা জানার পর সবুজ-মেরুন বাহিনীর কোচ বলেন, 'এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা যেমন প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করি, আমাদের প্রতিপক্ষও সেটাই করে। ওরা যদি মনে করে আমাদের নির্দিষ্ট কোনও দিক দিয়ে (আশিস রাইয়ের বদলে যদি দীপেন্দু বিশ্বাস খেলেন) ওরা বেশিরভাগ আক্রমণ করবে, তা হলে তা-ই করবে। আশা করি, ওদের উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং ওরা ওদের সেরাটা দিতে পারবে না। আমাদের রক্ষণ ভাল খেলবে। আক্রমণেও ভাল করব আমরা। ওদের চেয়ে বেশি গোল করব। নিজেদের নিয়েই বেশি ভাবছি আমরা'।
ওড়িশার বিরুদ্ধে তারা শেষ ম্যাচ খেলেছে ১২ দিন আগে। এই অবকাশের জন্য অনেকে দলের ছন্দ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করলেও বাগান-কোচের তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই। বলেন, 'দল তৈরিই আছে। ছেলেরা সবাই জানে তাদের কী করতে হবে। প্রচুর পরিশ্রম করার মতো যথেষ্ট বিশ্রামও জরুরি। আমরা যথাযথ অনুশীলন করেছি। যা করার দরকার, সবই করেছি। পরের ম্যাচের জন্য তাই আমরা তৈরি। আশা করি, কাল ভাল খেলব আমরা এবং ম্যাচটা জিতব'।
দিমিত্রিয়স পেট্রাটস গত দুই মরশুমে যতটা ভরসা জুগিয়েছিলেন দলকে, ততটা ভরসা এ বার জোগাতে পারছেন না তিনি। সাতটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতে প্রথম এগারোয় ছিলেন তিনি। একটি গোল করেছেন, দু’টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। গ্রেগ স্টুয়ার্টের চোটের জন্য গত ম্যাচে তিনি শুরু থেকে খেলেন। ভাল খেললেও, প্রত্যাশার স্তর ছুঁতে পারেননি। তাঁর পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে স্বদেশীয় সতীর্থ জেমি ম্যাকলারেনের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াও এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়ে ওঠেনি।
তবে ছন্দ হারিয়েছেন দিমি, এই অভিযোগ মানতে রাজি নন কোচ। বলেন, 'গত দুই মরশুমে দিমি দলের খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিল। এখনও সে গুরুত্বপূর্ণ। গত মরশুমের মতো এ মরশুমে হয়তো সে নিয়মিত প্রথম এগারোয় থাকছে না। এ বছর দিমি ছাড়াও আমাদের দলে ম্যাকলারেন ও গ্রেগ রয়েছে। একসঙ্গে এতগুলো দুর্দান্ত খেলোয়াড় একই দলে থাকলে তারা একসঙ্গে মাঠে নামতে পারে না। রক্ষণেও আমাকে বিদেশী খেলোয়াড়দের রাখতে হয়। দলের পক্ষে যেটা ভাল হয়, সেটাই করি আমি। দিমি অবশ্যই প্রতিভাবান। যথেষ্ট ভাল করছে। মনে হয় না, ওর ছন্দ হারিয়ে গিয়েছে'।
তবে দলের ফরোয়ার্ডরা যে গোল করতে পারছেন না, তা মেনেই নেন কোচ। মোহনবাগানের মোট ১২ গোলের মধ্যে পাঁচটি গোলই করেছেন রক্ষণের খেলোয়াড়রা। গোলদাতাদের তালিকায় এখন এক নম্বরে শুভাশিস বোসের নাম, যিনি তিনটি গোল করেছেন। আরও দুই ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ ও দীপেন্দু বিশ্বাসও একটি করে গোল করেছেন। জোড়া গোলদাতা জেমি ম্যাকলারেন আছেন দু’নম্বরে। মনবীর সিংয়েরও খাতায় দু’টি গোল। কিন্তু পেট্রাটস, স্টুয়ার্ট, কামিংস, যাদের কাছ থেকে প্রতি ম্যাচেই গোল চান সমর্থকেরা, তাঁরা এ পর্যন্ত একটির বেশি গোল করতে পারেননি।
তবে মোলিনা আশাবাদী, ফরোয়ার্ডরা গোল পাবেন। বলেন, 'ফরোয়ার্ডরা গোল করতে পারছে না, এটা ঠিকই, কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরি করছে অনেক। এটাও কম বড় ব্যাপার নয়। আমি ওদের পারফরম্যান্সে খুশি। কোনও ম্যাচেই গোল করা সোজা নয়। তবে আমি নিশ্চিত, আগামী কয়েক ম্যাচে ওরা গোল করবে। দলের কম গোল নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই'।
গোলহীন তারকাদের তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছেন লিস্টন কোলাসো। গত মরশুমে চারটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্টের মালিক এই উইঙ্গার এখনও গোলও পাননি, একটিও অ্যাসিস্টও করতে পারেননি। তবে পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। তাঁর আটটি শট গোলে থাকলেও একটিও প্রতিপক্ষের জালে জড়ায়নি।
তবে নিজের পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছেন বলে জানান কোলাসো। বলেন, 'দলের জয়টাই বড় কথা। কোচ তো বলেই দিলেন, তিনি সবার পারফরম্যান্সে খুশি। দলের পক্ষেও এটা ভাল। জানি সমর্থকেরা আমাদের কাছ থেকে আরও ভাল কিছু আশা করে। আমরাও সেই চেষ্টাই করি, যাতে প্রতি ম্যাচে খেলায় উন্নতি করা যায়। আমার কাছে আমিই সেরা। আমার কাছে আমার পারফরম্যান্সই সেরা। আরও ভাল খেলার চেষ্টা করছি'।
সম্প্রতি জাতীয় দলে থাকলেও হায়দরাবাদে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত খেলার সুযোগই পাননি তিনি। ম্যাচের শেষে বাড়তি সময়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় তাঁকে নামান ভারতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কেজ। তার আগে ছ’দিনের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দেন অবশ্য। ম্যাচ খেলতে না পারায় এতদিন পর মাঠে ফিরে কোনও সমস্যা হবে বলে মনে করেন না কোলাসো।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জাতীয় শিবিরে আমরা সাত দিন অনুশীলন করেছি। তাতে কোনও সমস্যা হবে না। আমাদের সব রকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকতে হয়। ক্লাবের হয়ে বা জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য তৈরি থাকি সব সময়। অনুশীলনে পরিশ্রম করে যাওয়াটাই আসল কথা'।
টানা দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারা জামশেদপুর এফসি নিয়ে কোলাসো বলেন, 'যে কোনও দল যখন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নামে, তখন তারা মনে করে এটাই তাদের কাছে লিগের সেরা ম্যাচ। আমার মনে হয়, ওরা কাল পুরো প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে। দু-তিনটে ম্যাচ হেরে যাওয়াটা কোনও দলের কাছেই বিশাল ব্যাপার নয়, কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলা সবার কাছেই বড় ব্যাপার'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: চোখে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন, পরবর্তী ছেত্রী নয়, নিজের পরিচিতি গড়তে তৎপর তরুণ ফরোয়ার্ড বিক্রম