নয়াদিল্লি: আই লিগ জিতে উঠে এসে যারা গতবার প্রথম আইএসএলে খেলেছিল, শুক্রবার সেই পাঞ্জাব এফসি মুখোমুখি হবে এ বার প্রথম আইএসএলে খেলা মহমেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting)। গতবার যে অবস্থায় ছিল পাঞ্জাব এফসি, এ বার অনেকটা সেরকমই অবস্থা মহমেডানেরও।

পাঞ্জাবকে দেখে অবশ্য প্রেরণা পেতে পারে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। কারণ, গতবার শুরুটা বেশ খারাপ করলেও ধীরে ধীরে যে ভাবে নিজেদের শক্তিশালী করে তোলে পাঞ্জাবের দল, যে ভাবে দ্বিতীয় মরশুমে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছে তারা, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে সাদা-কালো ব্রিগেডের। শুক্রবার সেই দলের বিরুদ্ধেই জয়ে ফেরার লড়াই মহমেডানের।

প্রথম চারটি ম্যাচের মধ্যে যারা তিনটিতেই জিতেছিল, সেই পাঞ্জাব এফসি পরের চারটি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে জিতেছে। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে দু’টিতে জিতেছে তারা। অন্য দিকে মহমেডান শেষ ছয় ম্যাচে জয়হীন। একটিমাত্র ড্র করেছে তারা। বাকি সব ম্যাচে হার। এই ম্যাচে তাই জয়ে ফেরার কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে কলকাতার দলকে।

প্রথম আইএসএলের শুরুটা বেশ আশা জাগিয়ে করেছিল মহমেডান স্পোর্টিং। একটি ম্যাচে জয় ও একটিতে ড্র তাদের তিন ম্যাচেই চার পয়েন্ট এনে দেয়। চেন্নাইয়ে গিয়ে সেখানকার দলকে হারিয়ে আসে রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভের দল। কিন্তু তার বেশি আর এগোতে পারেনি তারা। প্রতি ম্যাচের শুরুটা আশা জাগিয়ে করলেও ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে তারা। মনে হচ্ছে ৯০ মিনিট সমান তীব্রতায় খেলার ক্ষমতাই নেই দলটার।

প্রথম তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট পাওয়ার পর গত ছ’টি ম্যাচে যে ভাবে ১৪ গোল খায় সাদা-কালো ব্রিগেড, তা একেবারেই প্রত্যাশিত ছিল না। ন’জনে খেলা ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় তারা, তাও কম অপ্রত্যাশিত ছিল না। দুর্বল ইস্টবেঙ্গলকে সামনে পেয়েও তাদের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি সাদা-কালো বাহিনী। তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা গোল করতে না পারা।

এ পর্যন্ত ৯০টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে মহমেডান। কিন্তু গোল করতে পেরেছে মাত্র পাঁচটি থেকে। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলা তাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। এমনকী দু’টি পেনাল্টিও মিস করেছেন তাদের দুই বিদেশী ফুটবলার সিজার মানজোকি ও কার্লোস ফ্রাঙ্কা। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ফিনিশ করতে না পারার রোগ তাদের সব ম্যাচেই ভোগাচ্ছে। এই সমস্যা দূর করতে না পারলে শুক্রবারও জয়ে ফেরা কঠিন হবে মহমেডানের।

কোচ চেরনিশভের ধারণা, এটি দলের খেলোয়াড়দের মনস্তাত্বিক সমস্যা। গোলের সামনে গিয়ে বারবার ঘাবড়ে যাচ্ছেন তাঁর দলের ছেলেরা। দু-একটা গোল করলে এই সমস্যা কাটতে পারে বলে তাঁর ধারণা। কিন্তু সমস্যা শুধু একটা নয়। দলটার মধ্যে লড়াকু মনোভাব রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই লড়াই তারা ৬০-৭০ মিনিটের বেশি করতে পারছে না। ফলে শেষ দিকে তাদের প্রতিপক্ষরা খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় গোলও তুলে নিচ্ছে।

তাদের গত ম্যাচে যেমন প্রথমার্ধ গোলশূন্য রেখেছিল সাদা-কালো বাহিনী। দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি গোল করে জয়ের দিকে এগিয়ে যায় জামশেদপুর এফসি। ৭৯ মিনিটের মাথায় ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় তারা। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে দলকে সান্ত্বনা গোল এনে দেন মহম্মদ ইরশাদ। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান আরও কমানোর সুযোগ তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ফ্রাঙ্কা। ফুটবলের সবচেয়ে জরুরি বিষয়ই যে দলের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা, সেই দলের সাফল্যে ফেরা মোটেই সোজা কাজ না।

এ দিক থেকে পাঞ্জাব এফসি ঠিক উল্টো প্রান্তে। তারা আটটি ম্যাচে ৮৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করে তার মধ্যে ১৪টি কাজে লাগিয়ে নিয়েছে। তাদের রক্ষণও বেশ কঠিন। এ পর্যন্ত ন’টি গোল হজম করেছে তারা। সেরা ছয়ে থাকা দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে মোহনবাগান এসজি (৮)। তার পরেই তারা। বাকি ১১টি দলই দশটির বেশি গোল খেয়েছে। সে দিক থেকে দেখলে বোঝাই যায় পাঞ্জাবের রক্ষণে ফাটল ধরানো মোটেই সোজা না। অর্থাৎ মহমেডানকে আক্রমণে তীব্রতা ও ধার অনেক বাড়াতে হবে। গত ম্যাচেও তিন গোল খাওয়া একটা দলের পক্ষে তা কতটা সম্ভব, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

চলতি লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় প্রথম পাঁচে পাঞ্জাবের কেউ নেই ঠিকই, তবে তাদের স্লোভেনিয়ান ফরোয়ার্ড লুকা মাজেন পাঁচ ম্যাচে চারটি গোল করে আট নম্বরে রয়েছেন। চারটি গোলের পাশাপাশি দু’টি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। গোলের ব্যাপারে দলের প্রধান ভরসা তিনিই। তবে বসনিয়ান ফরোয়ার্ড আসমির সুলজিক (২ গোল), ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ফিলিপ মরজলিয়াক (২), আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড নর্বের্তো ভিদাল (২) গোল করে দলকে সাহায্য করেছেন।

সাধারণত ৪-২-৩-১-এ দল সাজান পাঞ্জাবের কোচ পানাগিয়তিস দিমপেরিস। গত ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র ঘরের মাঠে তাদের বিরুদ্ধে ৩-০-য় জেতা ম্যাচে মাজেনকে সামনে রেখে ও তাঁর পিছনে ম্রজলিয়াক, ভিদাল ও সুধীশকে রেখে দল সাজান তিনি। মাঝমাঠে রিকি সাবং ও নিখিল প্রভূ ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে যাচ্ছেন। রক্ষণে ক্রোয়েশিয়ান ইভান নোভোসেলেক, লিয়ন অগাস্টিন, সুরেশ মিতেই ও অভিষেক মিতেইদের দেখা যেতে পারে। গত ম্যাচের জয়ের কম্বিনেশন নাও ভাঙতে পারেন কোচ দিমপেরিস। বেশিরভাগ ম্যাচে এঁরাই রক্ষণ পাহাড়া দিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।


(সৌ: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: ম্যাচ জেতার দক্ষতা নেই দলে! পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে দাবি খোদ মহামেডান কোচ চেরনিশভের