নয়াদিল্লি: বারবার ভাল শুরু করেও লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়াটা এখন মহমেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting) ফুটবলারদের নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আশা জাগিয়ে শুরু করছে তারা। ফুটবলাররা অনেকেই ভাল খেলছেনও। গোলের সুযোগও তৈরি করছেন। কিন্তু সারা ম্যাচে সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছে না তারা। দলের অ্যাটাকাররা প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়েও খেই হারিয়ে ফেলছেন বারবার। এমনকী পেনাল্টি থেকে গোলের দু-দু’টি সুযোগও নষ্ট করেছেন তাদের বিদেশি ফুটবলাররা।
কেন এমন হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে বিরক্ত সমর্থকদের মধ্যে। এরই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলের প্রধান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ (Andrey Chernyshov)। শুক্রবার নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগের দিন সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'গোল করতে না পারাটা খেলোয়াড়দের মনস্তাত্বিক সমস্যা হতে পারে। গোলের সুযোগ পেয়ে ওরা হয়তো ঘাবড়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতি অনুশীলনেই আমরা গোল করার প্রস্তুতি নিই, ভিডিও দেখিয়ে খেলোয়াড়দের বোঝাই কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে গোল করতে হবে। কিন্তু ম্যাচে গিয়ে সেই জড়তা কাটাতে পারছে না তারা'।
চেরনিশভের ধারণা, গোল করতে না পারলেও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারাটা ইতিবাচক ইঙ্গিত। বলেন, 'গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারাটা ভাল ইঙ্গিত। প্রতি ম্যাচেই অন্তত তিন-চারটে করে গোলের সুযোগ পাই আমরা। একবার মনস্তাত্বিক বাধা পেরিয়ে গোল পেতে শুরু করলে ছেলেদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং তারা আরও গোল করতে পারবে। আশা করি, ভাল সময় আসবে'।
সাফল্যের জন্য দলের ছেলেদের যে প্রেরণার অভাব নেই, তা জানিয়ে চেরনিশভ বলেন, 'প্রতি ম্যাচের পরেই ছেলেদের বোঝাই কোথায় কোথায় ভুল হচ্ছে। যাতে পরের ম্যাচে সেই ভুলগুলো শুধরে নেওয়া যায়। সেই ভুলগুলো শুধরে নিয়েই পরের ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। প্রেরণা যথেষ্ট আছে। মহমেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের হয়ে নামাটাই তো বড় প্রেরণা'।
শুক্রবার তাদের প্রতিপক্ষ পাঞ্জাব এফসি-ও তাদের মতো আই লিগ জয়ের সুবাদে গতবারই প্রথম আইএসএলে খেলার সুযোগ পান। এই এক বছরেই তারা এখন যথেষ্ট ভাল দল এবং সেরা ছয়ের মধ্যেও রয়েছে। পাঞ্জাবের উদাহরণ টেনে এনে নিজের দলের ছেলেদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন রাশিয়ান কোচ। বলেন, 'পাঞ্জাবও আই লিগ জিতে আইএসএলে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে গত মরশুমে। ওরা একটা মরশুমে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেই অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগছে।
পাঞ্জাবও গত মরশুমের শুরুটা মোটেই ভাল করেনি। জানুয়ারি থেকে ওরা ভাল খেলতে শুরু করে। একটা সময়ে ওরা সেরা ছয়ের দোরগোড়াতেও চলে এসেছিল। উন্নতি করতে সময় ও অভিজ্ঞতা, দুটোই দরকার। এখন দেখুন কত ভাল খেলছে ওরা। আমরা এ মরশুমেই সবে শুরু করেছি। আমাদের এই অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কারণ, আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে, যাদের আইএসএল খেলার অভিজ্ঞতা নেই'।
নিজেদের সমস্যার কথা স্বীকার করে সাদা-কালো ব্রিগেডের কোচ বলেন, 'এই লিগে প্রতি ম্যাচই আমাদের কাছে কঠিন। তবে কয়েকটা ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি। দলের ছেলেরা দারুন খেলেছে। তবে ম্যাচ জেতার মতো দক্ষতা বোধহয় আমাদের দলে নেই। কখনও কখনও আমরা দুর্ভাগ্যের কারণে সফল হতে পারিনি। প্রচুর গোলের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের সময় লাগবে ওই জায়গায় আসতে'।
ব্যর্থতা সত্ত্বেও নিজেদের প্রতি আস্থা রাখাটা খুবই জরুরি বলে মনে করেন চেরনিশভ। বলেন, 'আমাদের পরিশ্রম করতে হবে এবং নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে, আমরা জয়ে ফিরতে পারব। প্রত্যেক ফুটবলারই প্রতি ম্যাচে জিততে চায়। আমাদের খেলোয়াড়রাও তার ব্যতিক্রম নয়। কাল আমাদের জেতার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের যে শক্তি রয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে জেতার চেষ্টা করতে হবে'।
গত ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ভাল খেলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে চেরনিশভ বলেন, 'আমরা প্রথম ৪৫ মিনিট ভাল খেলেছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে জামশেদপুর দুর্দান্ত দুটো গোল করে। ফলে আমরাও খেলা থেকে কিছুটা হারিয়ে যাই এবং আরও একটা গোল ওদের কার্যত উপহার দিই। তবে আমরা ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছি। একটা গোলও দিই। দ্বিতীয় গোলের সুযোগও পেয়েছিলাম। প্রতি ম্যাচেই এটা হচ্ছে। অনেক গোলের সুযোগ পেয়েও খুব কম গোল করতে পারছি। তবে একটা সময় আসবে, যখন আমরা গোল করা শুরু করব। এই বিশ্বাসটা নিজেদের ওপর রাখতে হবে। প্রতি ম্যাচেই নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা করতে হবে'।
জামশেদপুরে মাথায় গুরুতর চোট পাওয়ায় যে এই ম্যাচে নেই ডিফেন্ডার গৌরব বোরা, তা জানিয়ে চেরনিশভ বলেন, 'গত ম্যাচে গুরুতর চোট পাওয়ায় গৌরব বোরা এই ম্যাচে খেলতে পারবে না। ওকে আমরা কলকাতায় রেখে এসেছি। জোসেফ আজেই গত ম্যাচে চোট সারিয়ে নেমেছিল। কিন্তু গত ম্যাচে খেলার পর আবার ব্যথা অনুভব করছে। জোসেফও খেলতে পারবে বলে মনে হয় না'।
সব শেষে তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, 'সমর্থকেরা, এই কঠিন সময়ে দয়া করে আমাদের পাশে থাকুন। ভাল সময়ে সবাই আমাদের পাশে থাকে। কিন্তু হারতে শুরু করলে অনেকে থাকে না। অতীতে অনেক সাফল্য এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ক্লাবকে এবং খেতাব জিতেওছি। কথা দিচ্ছি, মহমেডান ক্লাবকে একদিন আইএসএল খেতাবও এনে দেব। কিন্তু সমর্থক ও ক্লাব কর্তাদের পাশে না পেলে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো কঠিন হয়ে যাবে। আশা করি, সবাই পাশে থাকবেন'।
(সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মাসের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে লড়াইয়ে পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারও