কলকাতা: এক গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে প্রথম জয় পাওয়া হল না মহমেডান স্পোর্টিংয়ের। রবিবার কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কেরালা ব্লাস্টার্স এফসি তাদের ২-১-এ হারিয়ে টানা চার ম্যাচে অপরাজিত রইল। মহমেডান এসসি-র এই নিয়ে চলতি লিগে পাঁচ ম্যাচে এটি তৃতীয় হার। ফলে লিগ টেবলের ১১ নম্বরে নেমে গেল তারা। গতবার সেরা ছয়ে থাকা ব্লাস্টার্স-বাহিনী দ্বিতীয় জয় পেয়ে উঠে পড়ল পাঁচ নম্বরে।



মোহনবাগান এসজি-র কাছে তিন গোলে হারের ধাক্কা সামলে এ দিন ছন্দে ফেরা মহমেডান ম্যাচের ২৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে উজবেক মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভের গোলে এগিয়ে যায়। তার পরে ৬৬ মিনিট পর্যন্ত দুর্দান্ত রক্ষণ দক্ষতায় নোয়া সাদাউই, আদ্রিয়ান লুনা, জেসুস জিমিনেজদের মতো তুখোড় অ্যাটাকারদের প্রায় অসহায় করে তোলে সাদা-কালো ব্রিগেডের সৈনিকরা।

কিন্তু ৬৭ মিনিটের মাথায় তাদের এক মুহূর্তের অসাবধানতাকে কাজে লাগিয়ে সমতা এনে ফেলেন পরিবর্ত ফরোয়ার্ড কোয়ামে পেপরা। তার ঠিক আট মিনিট পরেই অসাধারণ এক ক্রসে হেড করে দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জিমিনেজ। ম্যাচের শেষ পর্বে মহমেডান ফুটবলারদের ক্লান্তি এ দিনও তাদের ভোগায়। ফলে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি গতবারের আইলিগ চ্যাম্পিয়নরা।

এ দিন দলে দুটি পরিবর্তন করে নামা মহমেডান স্পোর্টিং শুরু থেকে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলার চেষ্টা করলেও তাদের আক্রমণের নির্দিষ্ট দিশা দেখা যায়নি। কেরালা ব্লাস্টার্স সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। শুরু থেকেই এতটা শরীরসর্বস্ব ফুটবল খেলা শুরু করে দুই দল যে, প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে দু’পক্ষেরই খেলোয়াড়রা গুরুতর চোট পান।

উড়ন্ত বলের দখল নিতে গিয়ে আদ্রিয়ান লুনা ও জুডিকা একে অপরের মাথায় আঘাত করেন ও মাঠে লুটিয়ে পড়েন। বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ রেখে চিকিৎসা করে তাদের সামলানো গেলেও রাহুল কেপি-কে ট্যাকল করতে গিয়ে গুরুতর চোট পান মহমেডানের ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার জোসেফ আজেই। কুড়ি মিনিটের মাথায় চোটের জন্য মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আজেই। তাঁর জায়গায় নামেন নবাগত ফরাসি ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্ট ওগিয়ে।

মহমেডান মূলত উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল শুরু থেকে। তাদের দুই লাতিন অ্যাটাকার কার্লোস ফ্রাঙ্কা ও অ্যালেক্সি গোমেজ যথারীতি আক্রমণকে নেতৃত্ব দেন। এমনই এক আক্রমণে ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন ফ্রাঙ্কা। ফরাসি ডিফেন্ডার আলেকজান্দ্রে কোয়েফ তাঁকে আটকাতে না পারায় এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্রাঙ্কাকে বাধা দেন ব্লাস্টার্সের হয়ে এ দিনই প্রথম মাঠে নামা ১৯ বছর বয়সী গোলকিপার সোম কুমার। ফলে রেফারি মহমেডানকে পেনাল্টি দেন। স্পট কিকের আগে তাঁকে বেশ নার্ভাস লাগলেও জালে বল জড়াতে ভুল করেননি উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভ (১-০)।

মহমেডান গোল পেলেও তার আগে পর্যন্ত ব্লাস্টার্সের আক্রমণের তীব্রতা ছিল বেশি। গোল খাওয়ার পর সেই তীব্রতা ক্রমশ বাড়াতে থাকে তারা। ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেসুস জিমিনেজের জোরালো শট বারে লেগে ফিরে আসে। তাদের মার্কিন ফরোয়ার্ড নোয়া সাদাউই এবং উরুগুয়ের মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান লুনাও গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু মহমেডান ফুটবলারদের দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক দক্ষতায় বারবার তাঁরা আটকা পড়ে যান। বেশিরভাগ সময়েই নোয়া, লুনা, জিমিনেজদের নিজেদের গোল এরিয়ায় বেশি জায়গা দেননি আদিঙ্গা, গৌরব বোরা, জুইডিকা, ওগিয়েরা। এ ছাড়াও বরাবরের মতো তৎপর ছিলেন তাদের গোলকিপার পদম ছেত্রী। ফলে এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কলকাতার দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জুডিকার জায়গায় সামাদ আলি মল্লিককে নামায় মহমেডান। ডিফেন্সের শক্তি বাড়াতেই যে এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শুরুতেই দুই ডিফেন্ডারকে চমৎকার ড্রিবল করে গোলের উদ্দেশে শট নেন ফ্রাঙ্কা। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। ব্লাস্টার্সের আক্রমণকে কোনও ভাবে দানা বাঁধতে না দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে নামে সাদা-কালো ব্রিগেড। তাই বলে ব্যবধান না বাড়ানোর কোনও ইচ্ছাই তাদের ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে ১৩ মিনিটের মাথায় তাই বিকাশ সিংয়ের জায়গায় মকান চোঠে নামেন।

তিনি নামার পরেই দুর্দান্ত একটি আক্রমণে ওঠেন ফ্রাঙ্কা। কিন্তু ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে নিজেই বারের ওপর দিয়ে বল না উড়িয়ে যদি গোলের সামনে চোঠেকে ক্রস বাড়াতেন, তা হলে হয়তো ব্যবধান বাড়ত। তবে সমতা আনার জন্য মরিয়া ব্লাস্টার্স ৬৪ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার কোয়েফকে তুলে ঘানার ফরোয়ার্ড কোয়ামে পেপরাকে নামায়। সঙ্গে রাহুল কেপিকে তুলে হরমিপাম রুইভাকেও নামায় তারা, যাতে রক্ষণ দুর্বল না হয়ে পড়ে। মাঠে আসার তিন মিনিটের মধ্যেই সমতা এনে ফেলেন পেপরা।

মহমেডানের রক্ষণের সামান্যতম ফাঁককে কাজে লাগিয়েই দুর্দান্ত পরিকল্পনায় গোল করেন পেপরা। তাঁকে এই গোল করতে সাহায্য করেন নোয়া। ডানদিক থেকে লুনার লম্বা ক্রস পেয়ে বক্সের মধ্যে বাঁ দিক থেকে গোলের সামনে পাস বাড়ান নোয়া। গোলে বল ঠেলতে ভুল করেননি পেপরা (১-১)।

দ্বিতীয় গোলেরও সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান নোয়া, যখন প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে প্রায় ফাঁকা গোলের সামনে বল পেয়ে যান তিনি। ৭১ মিনিটের মাথায় সামাদ হেডে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় এই সুযোগ পেয়ে যান নোয়া। কিন্তু পায়ে পা জড়িয়ে যাওয়ায় বলের দখল হারান তিনি। এই সুযোগের ঠিক আগেই গোলমুখী ফ্রাঙ্কাকে বক্সের মধ্যে পিছন থেকে বাধা দেন হরমিপাম। ফ্রাঙ্কা মাঠে লুটিয়ে পড়ায় মহমেডান ফুটবলাররা পেনাল্টির জোরালো আবেদন করেন। রেফারি অবশ্য খেলা চালিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে উড়ে আসা বলেই সুযোগ পেয়েছিলেন নোয়া।

৭০ মিনিটের পর থেকেই মহমেডানের রক্ষণে ফাটল তৈরি হতে শুরু করে এবং সেই ফাটলগুলিকেই কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ব্লাস্টার্সের অ্যাটাকাররা এবং ৭৫ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলও পেয়ে যায় তারা। বাঁ প্রান্ত থেকে নাওচা সিংয়ের দুর্দান্ত এক ক্রস ভেসে আসে মহমেডানের গোলের সামনে এবং লাফিয়ে উঠে তাতে হেডফ্লিক করে বল জালে জড়িয়ে দেন জিমিনেজ (১-২)।

পেনাল্টির আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় মহমেডান সমর্থকেরা গ্যালারিতে অশান্ত হয়ে ওঠে। ফলে মিনিট পাঁচেক খেলা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন রেফারি। সে জন্য শেষ দিকে ন’মিনিটের বাড়তি সময়ও পেয়ে যায় দুই দল। ব্লাস্টার্সের দ্বিতীয় গোল হওয়ার ঠিক আগে ফ্রাঙ্কার জায়গায় ফরোয়ার্ড সিজার মানজোকিকে নামায় মহমেডান। কিন্তু ফের গোল খেয়ে যাওয়ায় ম্যাচের শেষ পর্বে চাপে পড়ে যায় তারা।

অ্যালেক্সি গোমেজও এ দিন ততটা ভাল ফর্মে ছিলেন না, মানজোকি এমনিতেই ফর্মে নেই। এই অবস্থায় ফ্রাঙ্কার অনুপস্থিতি তাদের দ্বিতীয় গোলের সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ফলে ন’মিনিটের বাড়তি সময় পেয়েও সমতা আনতে পারেনি তারা। তাও একেবারে শেষ মুহূর্তে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলের সুযোগ পেয়ে যান লালরেমসাঙ্গা ফানাই। কিন্তু চরম মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে না পেরে গোলকিপার সোমকুমারের গায়ে বল মারেন তিনি। এই গোলটি হলে মহমেডান অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: 'একাধিক বড় ম্যাচে খেলেছি, কিন্তু এই ডার্বি অসাধারণ', ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দাবি ম্যাকলারেনের