কলকাতা: প্রথম তিন ম্যাচে ভাল খেললেও চতুর্থ ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে আইএসএলের কঠিন বাস্তবটা বুঝে নিয়েছে মহমেডান এসসি (Mohammedan Sporting)। গত ম্যাচে যে ভাবে তাদের বিরুদ্ধে দাপুটে ফুটবল খেলে ৩-০-য় জেতে মোহনবাগান এসজি, তার পরে সাদা-কালো ব্রিগেডের কোচ বলতে বাধ্য হন, 'আইএসএলের মান ঠিক কতটা ভাল, তা এই ম্যাচে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে মোহনবাগান। আমাদের এই মানের ফুটবল খেলাই অভ্যাস করতে হবে এ বার'। 


ওই এক হারের ধাক্কাতেই তারা সেরা ছয় থেকে ছিটকে লিগ টেবলের নীচের দিকে নেমে গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজেদের তুলে আনতে গেলে রবিবার ঘরের মাঠে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট জিততেই হবে তাদের। লিগ টেবলে তাদের চেয়ে তিন ধাপ ওপরে থাকা ব্লাস্টার্স হার দিয়ে লিগ শুরু করলেও গত তিন ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। তাই তাদের হারানো সোজা হবে না। কিন্তু প্রথম তিন ম্যাচের লড়াকু পারফরম্যান্স যদি ফিরিয়ে আনতে পারে মহমেডান, তা হলে সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।


আই লিগ থেকে প্রোমোশন পেয়ে আসা একটা দলের সূচনা অনুযায়ী তাদের পারফরম্যান্স প্রথম তিন ম্যাচে যথেষ্ট ভাল ছিল। প্রতি ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করে তারা। কোনও ম্যাচে তাদের রক্ষণকে দেখে কখনওই ভঙ্গুর মনে হয়নি। আক্রমণ বিভাগকেও দুর্বল লাগেনি। কিন্তু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের খেলায় সে সব কিছুই দেখা যায়নি। সে দিন সারা ম্যাচে সাতটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি মহমেডান। প্রতিপক্ষের বক্সে ১১ বারের বেশি বল ছুঁতেই পারেনি তারা। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয় সে দিন তাদের কতটা চাপে রেখেছিল তাদের অন্যতম চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান। 


তবে সেই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে যে নিজেদের পারফরম্যান্সের তীব্রতা আরও বাড়ানোর কাজে মন দেবে সাদা-কালো ব্রিগেড, তেমনই জানিয়েছিলেন তাদের রাশিয়ান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ। সদ্য পাওয়া অবকাশে সেই কাজ তারা কতটা করে উঠতে পেরেছে, তা-ই বোঝা যাবে রবিবারের ম্যাচে।  


তাদের দুই বিদেশী আর্জেন্টিনার অ্যালেক্সি গোমেজ ও ব্রাজিলের কার্লোস ফ্রাঙ্কা ভাল ফর্মে থাকলেও গত ম্যাচে চাপের মুখে নতিস্বীকার করেন। উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মিরজালল কাসিমভও তাদের আক্রমণে যথাসাধ্য সাহায্য যেমন করেন, তেমনই রক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এঁদের দু’জনের ওপরই নির্ভর করছে তাদের সাফল্য। চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে শুরুর চাপ সামলে যে ভাবে পাল্টা আক্রমণ হেনে চেন্নাইন এফসিকে তাদের ঘরের মাঠে কাবু করে সাদা-কালো বাহিনী, তা প্রশংসার যোগ্য। রবিবার সে রকম পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে পয়েন্ট পেতে পারে মহমেডান। 


পাঞ্জাব এফসি-র কাছে হার দিয়ে শুরু করা কেরল ব্লাস্টার্স দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ে ফেরে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে নর্থইস্ট ও ওডিশার বিরুদ্ধে ড্র করে তারা। ওডিশার বিরুদ্ধে দু’গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি তারা। দু’টিই ছিল অ্যাওয়ে ম্যাচ। অর্থাৎ, ঘরের বাইরে বেরোলে খুব একটা স্বচ্ছন্দে খেলতে পারছে না প্রীতম কোটালের দল। 


ব্লাস্টার্সের নতুন সুইডিশ হেড কোচ মিখায়েল স্তাহরে এ বার দলের দায়িত্ব নিয়ে সই করিয়েছেন নোয়া সাদাউই ও জেসুস জিমিনেজকে। কোয়ামে পেপরা ও আদ্রিয়ান লুনার সঙ্গে এঁরাও রয়েছেন আক্রমণের দায়িত্বে। রক্ষণে মিলোস দ্রিনচিচের সঙ্গে এ বার যোগ দিয়েছেন অভিজ্ঞ ফরাসি ডিফেন্ডার আলেকজান্দ্রে কোয়েফ। গত ম্যাচে এই দু’জনেই শুরু থেকে খেলেন। আক্রমণে সাদাউই ও জিমিনেজ ছিলেন। দু’জনেই গোল করেন। পরিবর্ত হিসেবে নামেন লুনা ও পেপরা। ফলে ব্লাস্টার্সের আক্রমণের তীব্রতা সারা ম্যাচেই বজায় থাকে।   


পরিসংখ্যান বলছে এর আগে আইএসএলে যে সাতটি দলের বিরুদ্ধে প্রথম খেলেছে কেরল ব্লাস্টার্স, তার মধ্যে মাত্র একটি দলের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে তারা। সেটি গত বছর, পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে। তাদের শেষ ন’টি অ্যাওয়ে ম্যাচের প্রতিটিতেই অন্তত এক গোল করে খেয়েছে কেরলর দলটি। এই ন’টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে তারা। বাকি আটটির মধ্যে পাঁচটি হেরেছে ও তিনটি ড্র করেছে। 


কলকাতায় এসে এর আগের দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে ব্লাস্টার্স। গত মরশুমে তারা মোহনবাগানকে ১-০-য় ও ইস্টবেঙ্গলকে ২-১-এ হারিয়ে যায়। রবিবারও জিতলে এই প্রথম কলকাতায় তারা টানা তিন ম্যাচে জয় পাবে। মাইকেল স্তাহরের প্রশিক্ষণে ব্লাস্টার্স এই প্রথম পরপর দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচে হারেনি। রবিবারও না হারলে তিনি এই ক্লাবের দশম সদস্য হবেন।    


লিগের প্রথম দু’টি হোম ম্যাচে জিততে পারেনি মহমেডান এসসি। রবিবারের ম্যাচেও জিততে না পারলে তারা আরও তিন দলের ক্লাবে যোগ দেবে, যারা ঘরের মাঠে তাদের প্রথম তিনটি আইএসএল ম্যাচে জিততে পারেনি। এরা হল জামশেদপুর এফসি, ইস্টবেঙ্গল এফসি ও পাঞ্জাব এফসি। এ পর্যন্ত চার ম্যাচে দু’গোল করেছে মহমেডান। রবিবারও তারা গোল করতে না পারলে মহামেডান হবে আইএসএলের তৃতীয় দল, যারা তাদের প্রথম পাঁচ ম্যাচে দুই বা তার কম গোল করতে পেরেছে। বাকি দুই দল ইস্টবেঙ্গল এফসি ও জামশেদপুর এফসি।  


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: উল্টোডাঙা থেকে রুবি, কলকাতা ডার্বির আগে মানববন্ধন ইস্ট-মোহন সমর্থকদের, উঠল স্লোগান, ন্য়ায়ের ডাক