কলকাতা: ফুটবল বিশ্বকাপে তিনি লিওনেল মেসি (Lionel Messi), হুলিয়ান আলভারেজদের বিরুদ্ধে খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এক নম্বর লিগে প্রায় দেড়শো গোল করেছেন। কলকাতায় এসে যে সেই সব ম্যাচের পরিবেশই ফিরে আসবে তাঁর জীবনে, তা কি কখনও ভাবতে পেরেছিলেন জেমি ম্যাকলারেন (Jamie Maclaren)?
মোহনবাগানের নতুন অস্ট্রেলীয় তারকা ফরওয়ার্ড, যাঁকে বহু সবুজ-মেরুন সমর্থক এখন থেকেই 'গোলমেশিন' বলে ডাকতে শুরু করে দিয়েছেন, তিনি অবশ্য বলছেন, ভারতে আসার আগে থেকেই এ শহরের ফুটবল উন্মাদনা সম্পর্কে খোঁজ খবর পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে এসে মাঠে নামার পর তাঁর অনুভূতি যে আরও রোমাঞ্চকর, তা জানাতে ভোলেননি। পরপর দু’টি ডার্বিতে গোল করে আপাতত মোহনবাগান-জনতার নয়নের মণি ম্যাকলারেন।
অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলার বলেছেন, "কলকাতা ডার্বি ভারতের সেরা ফুটবল ম্যাচ। এশিয়ার অন্যতম সেরা। এই ক্লাবে সই করার আগেই অবশ্য এই ধারণা হয়েছিল আমার। তাই ডার্বিতে নেমে অসাধারাণ একটা অনুভূতি হয়। গোল দিয়ে শুরু করতে পেরে বেশ ভাল লেগেছে। এখনও আরও ডার্বি খেলার অপেক্ষায় আছি। ৬০ হাজার মানুষের সামনে খেলার সুযোগ তো আর সব ম্যাচে পাওয়া যায় না।"
কেন ভারতে এসে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে বেছে নেন, তা জানতে চাওয়ায় ‘এ’ লিগের সর্বকালের সেরা গোলদাতা এবং পাঁচবারের গোল্ডেন বুটজয়ী জেমি ম্যাকলারেন বলেন, "এই ক্লাবের ইতিহাসই এই ক্লাব সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়। এই ক্লাবে খেলে গিয়েছে, এমন কয়েকজন ফুটবলারের কথা আমি জানি, যারা যথেষ্ট সফল হয়েছে। আমিও অস্ট্রেলিয়াতে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি, ট্রফি জিতেছি। আমি বরাবরই এমন দলের হয়ে খেলতে চাই, যারা সব সময়ই সাফল্যের খোঁজে থাকে। সেই জন্যই মোহনবাগান এসজি-তে যোগ দিয়েছি।"
ক্লাব ও এই শহরের প্রশংসা করে ম্যাকলারেন আরও বলেন, "মোহনবাগান বিশাল ক্লাব, বড় প্রতিষ্ঠান। এই শহরের নিঃশ্বাসে ফুটবল। এখানকার মানুষ ফুটবল নিয়ে বেঁচে থাকে। ঘরের মাঠে খেলতে নামার মতো সুখের অনুভূতি আর কিছু নেই। সে ডার্বিই হোক বা অন্য কোনও ম্যাচ, আমাদের মাথায় সব সময় ভাল মানের ফুটবল খেলা ও জেতার কথাই ঘোরে। আমাদের প্রতি সমর্থকদের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। সে জন্যই প্রতি ম্যাচে গড়ে অন্তত ৩০ হাজার করে সমর্থক গ্যালারিতে থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এটাই আমি চাই।"
এ লিগে ২১৯ ম্যাচে ১৪৯টি গোল আছে ম্যাকলারেনের। গত মরশুমে মেলবোর্ন সিটি-র হয়ে ১১টি গোল করেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড। এ লিগে এই ক্লাবের হয়ে টানা পাঁচ বছর খেলে ১৬২টি ম্যাচে ১১৩টি গোল করেছেন তিনি। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া কাপ ও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেলবোর্নের ক্লাবের হয়ে আরও ন’টি গোল করেন তিনি। এ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার পারথ গ্লোরি, ব্রিসবেন রোর, স্কটল্যান্ডের হিবারনিয়ান এফসি, জার্মানির এসভি ডার্মস্টাড ৯৮-এর হয়েও খেলেছেন ম্যাকলারেন।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়ে ৩১টি ম্যাচে ১১টি গোল রয়েছে তাঁর। গত বছর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের সাত গোলের জয়ে হ্যাটট্রিক করেন ম্যাকলারেন। ২০২২ বিশ্বকাপে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন, খেলেন আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধেও।
তাঁর মতো অভিজ্ঞতা ভারতে খেলা খুব কম বিদেশিরই আছে। তবে এমন একজন ফুটবলার মরশুমের শুরুতেই চোট পেয়ে যাওয়ায় মোহনবাগান সমর্থকেরা বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। ম্যাকলারেন যা নিয়ে বলেছেন, "গুরুতর চোটের জন্য প্রাক মরশুম প্রস্তুতিতে অংশ নিতে পারিনি আমি। চোটটা খুবই বেদনাদায়ক ছিল আমার কাছে। আমি তো ভেবেছিলাম প্রথম দশটা ম্যাচে খেলতেই পারব না।" তবে তিনি পুরোপুরি ম্যাচফিট হয়ে ওঠার আগেই মাঠে ফেরেন এবং গোলও করেন। ফলে সমর্থকদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এখানকার সমর্থকদের দেখেও তিনি অভিভূত। তাদের সম্পর্কে অস্ট্রেলীয় তারকা বলেন, "এখানে এসেই দেখেছি ফুটবলপ্রেমীরা রাস্তাঘাটে সবাই ডার্বি নিয়ে আলোচনা করছে। আমি ক্রমশ পুরোপুরি ফিটনেসের দিকে এগোচ্ছিলাম যখন, তখনই মহমেডানের বিরুদ্ধে হেডে গোল করি। এর ফলে আমার সমস্যাও হয়েছিল। তবে মোহনবাগান সমর্থকেরা অবিশ্বাস্য। আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচে যখন খেলেছিলাম, তখন যে রকম পরিবেশ পেয়েছিলাম, তার পর থেকে এমন পরিবেশ এখানে ছাড়া আর কোথাও পাইনি। প্রথম মিনিট থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত সবাই প্রিয় দলের জন্য সারাক্ষণ চিৎকার করে যাচ্ছে!”
আইএসএলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের পরের ম্যাচ ২৩ নভেম্বর, জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মোহনবাগান ক্লাবে ঢুকে 'অবৈধ' স্টল ভেঙে দিল সেনাবাহিনি, কী বলছেন কর্তারা?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।