কলকাতা: শনিবার জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে (Mohun Bagan vs Jamshedpur FC) জয় তাদের লিগ টেবলের শীর্ষে তুলে দিয়েছে। ফলে এখন থেকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের চলার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করেন তাদের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা (Jose Molina)। ম্যাচের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেই দিলেন, শীর্ষে ওঠার চেয়ে শীর্ষে টিকে থাকা অনেক কঠিন কাজ। তাই তাদের পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন কোচ। সে জন্য আরও পরিশ্রমও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার ঘরের মাঠে দাপুটে ফুটবল খেলে প্রতিবেশী রাজ্যের দলকে কার্যত কোণঠাসা করে রাখে মোহনবাগান। সারা ম্যাচে যেখানে আটটি শট গোলে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী, সেখানে তারা দু’টির বেশি শট লক্ষ্যে রাখতে দেয়নি ইস্পাতনগরীর দলকে। ৬৪ শতাংশ বল তাদেরই দখলে ছিল।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় গোলের খাতা খোলেন টম অলড্রেড। বিরতির ঠিক আগে বাড়তি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে চলতি লিগের প্রথম গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন লিস্টন কোলাসো। দ্বিতীয়ার্ধে ৭৫ মিনিটের মাথায় অনায়াসে তৃতীয় গোল করেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন। ৮৩ মিনিটের মাথায় কোলাসোর শট পোস্টে ধাক্কা না খেলে হয়তো চার গোলে জিততে পারত মোহনবাগান। তবে এই ব্যবধানই তাদের শীর্ষে তোলার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।
এক নম্বর জায়গায় টিকে থাকা প্রসঙ্গে মোলিনা বলেন, “এক নম্বর জায়গাটা ধরে রাখা খুবই কঠিন। সে জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। সে জন্য খেলায় আরও উন্নতি করতে হবে। আইএসএলের মতো লিগে যে কোনও ম্যাচ জেতা খুবই কঠিন। কারণ, অন্য দলগুলোও যথেষ্ট ভাল। তারাও জিতে চলেছে। তাদের সঙ্গে লড়াইয়ে থাকতে গেলে আমাদের টানা জিততে হবে, যা মোটেই সোজা হবে না। নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে”।
তবে শনিবারের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি কোচ। তিনি বলেন, “সব দিক দিয়েই উন্নতি করেছি আমরা। যত বেশি সম্ভব গোল করা ও গোল না খাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই আজ নেমেছিলাম আমরা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এখন আমরা টেবলের শীর্ষে রয়েছি। দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। তবে আমাদের এই পারফরম্যান্স বজায় রাখতে হবে ও পরিশ্রমও করে যেতে হবে”।
এ দিন সারা ম্যাচে উইং দিয়ে প্রচুর আক্রমণে ওঠে সবুজ-মেরুন বাহিনী। আক্রমণকে ছড়িয়ে দিতে পারার প্রশংসা করে মোলিনা বলেন, “আমরা আক্রমণকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি আজ। এটা আমাদের পরিকল্পনাই ছিল। কারণ, আমাদের দলে দ্রুতগতির উইঙ্গার আছে। সেই সুবিধা আমরা নিতেই পারি। ওরা গোলও করতে পারে। দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ওরা। তবে শুধু আমাদের উইঙ্গাররা নয়, দলের সবাই ভাল খেলছে। মাঝমাঠে আপুইয়া, টাঙরির কথা বলতেই হবে। রক্ষণেও সবাই ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে আজ। দলের দু-একজন খেলোয়াড়ের আলাদা করে প্রশংসা করতে চাই না আমি। সবাই যেখানে ভাল খেলছে, সেখানে দু-একজনের প্রশংসা করব কী করে?”
তবু লিস্টন কোলাসোর প্রশংসা করেন কোচ। এ বছর ১৫ এপ্রিল মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে গোল করার পর এ দিনই আইএসএলে প্রথম গোল আসে কোলাসোর পা থেকে। এর আগে ২৭টি শট গোলে রেখেও জালে জড়াতে পারেননি তিনি। ২৮তম চেষ্টায় অবশেষে গোল পেলেন। ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায়-সহ কঠোর পরিশ্রম করে গিয়েছেন এত দিন ধরে। অবশেষে তারই ফল পান এদিন।
তাঁর প্রশংসা করে কোচ বলেন, “লিস্টন দুর্দান্ত গোল করেছে। প্রতিপক্ষের তিন-চারজন খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে অসাধারণ গোলটা করেছে ও। বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে শেষ শটটা ঠিকমতো নেওয়া কঠিন হয়। কিন্তু লিস্টন আজ তা পেরেছে। প্রতি ম্যাচেই ও অনেক গোলের সুযোগ পায়। অনেক অপেক্ষার পর আজই ও প্রথম গোল পেল। আশা করি, ও ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতেও আরও গোল পাবে। আমি ওর খেলায় খুশি”।
দিমিত্রিয়স পেট্রাটস এ দিনও গোল করতে না পারায় সমর্থকেরা হতাশ হলেও তাঁকে নিয়ে কোচের কোনও অভিযোগ নেই। বলেন, “দিমি যথেষ্ট ভাল খেলেছে। লিস্টন, ম্যাকলারেনদের ও অনেক গোলের পাস বাড়িয়েছে। ওর দুর্ভাগ্য যে নিজে গোল করতে পারেনি। আমার বিশ্বাস, শীঘ্রই ও গোল পাবে। এতদিন লিস্টন গোল পায়নি। আজ ও গোল করেছে। দিমিও গোল করবে”।
এ দিনের ম্যাচের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনবীর সিংও নিজের পারফরম্যান্সে উন্নতি হওয়ায় খুশি। বলেন, আমি গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। কিন্তু আজ অনেক সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। আমরা প্রতি অনুশীলনেই অনেক পরিশ্রম করি, অতিরিক্ত কিছু করার চেষ্টা করি। এ তারই ফল। দলের সবার মধ্যেই বেশ ভাল বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। বিদেশীদের সঙ্গেও আমাদের ভাল বোঝাপড়া রয়েছে। মাঠে ও মাঠের বাইরে আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি, হাসি-মস্করা করি। পারফরম্যান্সেও তার প্রভাব পড়ছে”।
সতীর্থ লিস্টন কোলাসোর দুর্দান্ত গোল নিয়ে মনবীর বলেন, “লিস্টনের গোলটা খুব উচ্চ মানের। আশা করি, ও আরও গোল করবে। একটা দলে অনেক স্কোরার থাকাটা খুবই ভাল। প্রতি ম্যাচেই আমরা বিভিন্ন গোলদাতা পাচ্ছি। এর আগে শুভাশিস গোল করেছে, আজ টম ও লিস্টন গোল পেল। এটা দলের পক্ষে খুবই ভাল। আমি নিজে গোল করি বা কাউকে গোল করতে সাহায্য করি, দলকে জিততে সাহায্য করাটাই সব ম্যাচে আমার লক্ষ্য থাকে। আজ সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় আমি খুশি”।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ঘরের মাঠে জামশেদপুরকে দুরমুশ করে লিগ শীর্ষে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট