বেঙ্গালুরু: চলতি লিগে প্রথম দুই ম্যাচ তারা ঘরের মাঠে খেলেছে। এ বার প্রথম প্রতিপক্ষের মাঠে নেমে খেলতে হবে তাদের। মরশুমের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে মোহনবাগান এসজি মুখোমুখি হতে চলেছে বেঙ্গালুরু এফসি-র, যারা তাদের প্রথম দুই ম্যাচই খেলেছে ঘরের মাঠে এবং তৃতীয় ম্যাচও খেলতে চলেছে সেখানেই। তবে ঘরের মাঠ হোক বা বাইরের মাঠ, নিজেদের খেলার স্টাইলে বদল করতে নারাজ সবুজ-মেরুন শিবিরের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা। এমনকী আইএসএলের মাঝে যখন তারা এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলবে, তখনও খেলার স্টাইলে কোনও বদল আনবেন না বলে জানালেন।

শনিবারের এই ম্যাচের জন্য বেঙ্গালুরু রওনা হওয়ার আগে মোলিনা (José Francisco Molina) সাংবাদিকদের বলেন, “হোম ম্যাচ হোক বা অ্যাওয়ে আমার কাছে সব ম্যাচই সমান। আমাদের খেলার স্টাইল একই থাকবে। কোথায়, কার বিরুদ্ধে কোন টুর্নামেন্টে খেলছি, সেটা বড় কথা নয়। একই রকম খেলে যেতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই দলের ছেলেদের মধ্যে ব্যক্তিত্ব ও উচ্চাকাঙ্খা বজায় থাকুক এবং তারা প্রতি ম্যাচেই আধিপত্য বিস্তার করুক। সে যে মাঠেই খেলি না কেন”।

তবে বাগান কোচ হোম ম্যাচকে বাড়তি গুরুত্ব দেন সমর্থকদের জন্য। বলেন, “ঘরের মাঠে খেলা সব সময়ই ভাল। কারণ, সেখানে নিজেদের সমর্থকেরা উপস্থিতি থাকে। বেঙ্গালুরুতে তাদের অনেককেই পাব না। কিন্তু মাঠে খেলাটা এগারো বনাম এগারো হবে। আর মোহনবাগান সব ম্যাচেই যথাসম্ভব ভাল ফুটবল খেলে জেতার চেষ্টা করবে”।

জেমি ম্যাকলারেনকে নিয়ে তাঁর দলে এখন চারজন ফরোয়ার্ড। কিন্তু এই চার ফরোয়ার্ডকে যে প্রথম এগারোয় রাখতে পারবেন না মোলিনা, তা খুব ভাল করেই জানেন। তাই ম্যাকলারেন পুরো সুস্থ হয়ে উঠলেও তাঁকে এখনই প্রথম দলে আনার ব্যাপারে নিশ্চিত নন তিনি। বলেন, “জেমি প্রতিদিনই ফিট হয়ে উঠছে। গত ম্যাচে ও ১৫ মিনিটের জন্য নেমেও দলকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। গোল করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু ওর খেলা দেখে আমার ভাল লেগেছে। যথাসম্ভব দ্রুত একশো শতাংশ ফিট হয়ে প্রথম এগারোয় জায়গা পাওয়ার জন্য ও কঠোর পরিশ্রম করছে। আমরা জানি ও বড় ফুটবলার। কিন্তু মোহনবাগানের অ্যাটাকিং লাইনে জায়গা পাওয়া এই মুহূর্তে সহজ নয়। গ্রেগ, দিমি, জেসনরা খেলছে। চারজন বিদেশি স্ট্রাইকার নিয়ে খেলা তো সম্ভব নয়। আক্রমণ তৈরির জন্য ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডারদেরও দরকার”।

দলের বিদেশি ফুটবলারদের একসঙ্গে পেয়ে খুশি মোলিনা বলেন, “সব বিদেশিকে একসঙ্গে দলে পেয়ে আমি খুশি। বিকল্প আছে আমার হাতে। সেই বিকল্পগুলিকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ম্যাচে কাজে লাগাতে হবে। বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমেও যে গোল করার মতো কেউ আমার হাতে আছে, এটা খুবই ভাল। গত ম্যাচে জেসন যেমন পরিবর্ত হিসেবে নেমে গোল করেছে। জেমি আর জেসন দু’জনেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল। এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের শেষ দিকে মাঠে নেমে গোল করে দলকে জেতানোর মতো ফুটবলার দরকার”।

মোহনবাগান শিবিরে এখন সাতজন বিদেশি ফুটবলার। সম্প্রতি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নুনো রেইসকেও নিয়ে এসেছে ক্লাব। কিন্তু আইএসএলের নিয়ম অনুযায়ী ছ’জনের বেশি বিদেশি ফুটবলার (এশীয় দেশের ফুটবলার-সহ) নথিভুক্ত করা যায় না। চোট সারিয়ে ফিরছেন ম্যাকলারেন। আলবার্তো রড্রিগেজের পক্ষে শনিবারও মাঠে নামা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই অবস্থায় বিদেশিদের নিয়ে কিছুটা ধন্দে রয়েছেন বাগান কোচ।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আলবার্তো খেলতে পারবে না শনিবারের ম্যাচে। ওর চোট এখনও সারেনি। আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে ওর জন্য। আর নুনো রেইসকে আমরা মূলত এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য নিয়েছি। আমাদের ইতিমধ্যেই ছ’জন বিদেশির রেজিস্ট্রেশন হয়ে রয়েছে আইএসএলে। কেউ কোনও গুরুতর চোট না পেলে আর কাউকে নথিভুক্ত করা যাবে না”।

বেঙ্গালুরু এফসি-কে নিয়ে বেশি ভাবতে চান না মোলিনা। তবে বললেন, “ওরা যে ভাবে শুরু করেছে, তার চেয়ে ভাল আর কীভাবেই বা শুরু করা যায়? ওদের দলে ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। ডুরান্ড কাপে ওদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। ওরা খুব ভাল খেলেছিল। সহজ হবে না ম্যাচটা। তবে দলের ছেলেদের ওপর আস্থা আছে আমার। বেঙ্গালুরুর মাঠে তিন পয়েন্ট জিততেই নামব আমরা”।

দলের তারকা ফরোয়ার্ড দিমিত্রি পেট্রাটস নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, “সবে তো মরশুম শুরু হয়েছে। দুটো মাত্র ম্যাচ খেলেছি। উন্নতি করতে হবে আমাকে। গত মরশুমেও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কখনও সন্তুষ্ট হইনি। ফুটবলারদের সব সময়ই উন্নতি করার সুযোগ থাকে। আমাদের দল হিসেবে খেলতে হবে। সেটাই করছি”।

সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে দিমি বলেন. “এটা তো খেলারই অঙ্গ। এ সবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। আমি যখনই মাঠে নামি, তখনই নিজের সেরাটা দেওয়ার ও গোল করার চেষ্টা করি। এটাই আমার কাজ। এ ভাবেই খেলা চালিয়ে যেতে চাই। প্রথম ম্যাচে ড্র করে খারাপ লেগেছিল। গোল খাওয়াটাও ভাল লাগছে না। তবে এ সব খেলার অঙ্গ। এগুলো শোধরাতে হবে। এ সব এখন অতীত। গত ম্যাচে তিন পয়েন্ট পেয়েছি। এ বার পরের ম্যাচ থেকেও তিন পয়েন্ট পাওয়াই লক্ষ্য”।

জেমি ম্যাকলারেনকে নিয়ে তিনি বলেন, “জেমিকে অনেকদিন ধরেই চিনি। ও বড় মাপের স্ট্রাইকার। ভারতে এসে ওর একটা সমস্যা হয়েছে। তবে নিজেকে ফিট করে তোলার জন্য ও খাটছে। ও গুনী খেলোয়াড়। যখন ফিট হয়ে যাবে, তখন দলের জন্য ওর কর্তব্যটুকু ও করবেই”। (সৌ: আইএসএল)


আরও পড়ুন: রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে বল হাতে নায়ক, কলকাতার পেসারের দাপটে অস্ট্রেলিয়াকে দুরমুশ করল ভারত



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।