আবীর দত্ত, কলকাতা: কথায় আছে, বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়। এই প্রবাদ বাক্যটি হয়ত লিওনেল মেসির ক্ষেত্রেও খেটে যায় এখন। লিও মেসির সাফল্য, কাশ্মীরের আপেল, দার্জিলিংয়ের চা, সেরার সেরা বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার একটি গোল যা যা করল, তা একদিকে আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ আশা বজায় রাখল। দ্বিতীয়ত, মেসির বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন বজায় থাকল। তৃতীয়ত, মেসি ম্যাজিক আছে বলে বিশ্বাস বাড়ল মেসি ভক্তদের। আর চতুর্থ বিশ্বকাপে ২১ ম্যাচে ৮ গােল করে মারাদোনার রেকর্ড ছুয়ে ফেললেন আর্জেন্তাইন সুপারস্টার। তবে মেসি ম্যাজিক শুধু ফুটবলে নয়, চিকিৎসাতেও আশা দেখাচ্ছে, এমনই মনে করছেন বাংলার চিকিৎসক মহল।
বাঁ পায়ের সম্রাট মারাদোনা আবার বাঁ পায়ের যুবরাজ লিওনেল মেসি। কিন্তু ফুটবলের ইতিহাসে মারাদোনা, পেলে, জিদানের মতো লিও মেসি থাকবেন ইতিহাসের পাতায়। পাড়ায় পাড়ায় মেসি লেখা জার্সি গায়ে খুদেরা তৈরি হতে চাইবে তাঁর মত। কিন্তু শুধু ফুটবলে নয় চিকিৎসার জগতেও মেসির অবদান অনস্বীকার্য।
কিন্তু কীভাবে?
মাত্র ১১ বছর বয়েসে গ্রোথ হরমোনে ঘাটতি ধরা পড়ে লিওর। ফুটবল খেলায় প্রায় ইতি হয়ে গিয়েছিল। ১২ বছর বয়সে রোজ ইঞ্জেকশন নিতে হত পায়ে। কোনও ক্লাব চিকিৎসার খরচ বহন করতে চায়নি তাঁর। এই পরিস্থিতিতে ১৩ বছরে বার্সেলোনা ক্লাবে যোগদান মেসির। এরপরই ক্লাবের তরফে চিকিৎসার খরচ বহনের আশ্বাস দেওয়া হয়। আর চিকিৎসা নিয়ে ভাবতে হয়নি মেসিকে। একদিকে খেলা চালিয়ে যাওয়া আরেকদিকে চিকিৎসায় নিজেকে আরও সুস্থ করে তোলা। একেবারে দুই যুদ্ধ ক্ষেত্রেই জয়ী হয়েছেন আর্জেন্তিনীয় তারকা। পরিবারের অবদানের কোথাও বারবার বলেছেন তিনি।
হরমোনের ঘাটতি মানে?
জন্মগত হয় এই রোগ। দেখে বোঝা যায়না। বোঝা যায় জন্মের ৬-১২ মাস পর থেকে। আবার কখনও ছোটবেলা অনেক বছর পর থেকে বোঝা যায়। হাড়ের বৃদ্ধি সাধারণভাবে হয়না। উচ্চতা আর ওজনে বিস্তর ফারাক বয়স অনুযায়ী বোঝা যায়। শারীরিকভাবে অনেক সময় দুর্বল করে রাখে। মানসিক চাপ বারে। দাঁতের গঠনে বৈষম্য থাকে। চুলের বৃদ্ধি বেশি বা কম হয়। পাকস্থলীর মেদ বাড়ে। মুখমণ্ডল শিশুদের মতো দেখতে থেকে যায়। সাধারণত রক্ত পরীক্ষা, হাড়ের এক্সরে, জি এইচ স্টিমুলেশন টেস্ট, এম আর আই করে এই রোগ আছে কি না জানা যায়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে রোগী। কিন্তু দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি।
কলকাতার চিকিৎসকদের মতে, এই রোগের চিকিৎসা কলকাতার এসএসকেএম, আরজিকর, মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে হয়। বেসরকারি ক্ষেত্রেও চিকিৎসা আছে। ওষুধের খরচ কখনও মাসে ১০ হাজার কখনও অনেক বেশি হয় কতটা গুরুতর তার ওপর নির্ভর করে। ''খেলতে গিয়েও অনেক সমস্যার সম্মুখিন হন খেলোয়াড়রা সেই ক্ষেত্রে স্পোর্টস মেডিসিন ইউরোপের দেশগুলোর থেকে অনেক পিছিয়ে ভারত। তাই স্পোর্টস মেডিসিনের ওপর অনেক বেশি নজর দেওয়া উচিত। খেলার মান বাড়াতে বা ভাল খেলোয়াড় উঠে আসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি স্পোর্টস মেডিসিন। দ্রুত এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। ভারতে একাধিক খেলার প্রচলন আছে। খেলোয়াড়দের সুস্থ রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। হরমোনের ঘাটতির ক্ষেত্রে যখন চিকিৎসা হবে অবশ্যই মানসিক ভাবে রোগী আর রোগীর পরিবারকে বাড়তি সাহস দেবে লিওনেল মেসির এই যুদ্ধজয়। সাহস দেবে সব খেলোয়াড়দের'' বলছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়। ''লিও মেসি একজন জিনিয়াস। মানসিকভাবেও তিনি বলিষ্ঠ, তাই চিকিৎসা, খেলা একসঙ্গে চালিয়ে গেছেন। জিনিয়াস বলেই তাঁর লড়াকু মনোভাব রয়েছে। এই ধরণের চিকিৎসা যারা করবেন বা অন্য রোগে আক্রান্তদের কাছেও লিও মেসি উদাহরণ হয়ে থেকে যাবেন", বলছেন আরেক বিশিষ্ট চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার।