কলকাতা: পোলাও আর কষা মাংসর কম্বো খেতে চাইলে খরচ মাত্র ৮০ টাকা। সঙ্গে চাইলে চিলি চিকেন, আলুরদম থেকে শুরু করে হরেক খাবারের পসরা। ফুটপাতে টেবিল পেতে খাবার বিক্রি করেই সংসার চলে শিলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Shiladitya Banerjee)। তবে বর্ষায় নাকাল। ছাতা দিয়েও জল আটকানো যায় না পুরোপুরি। হন্যে হয়ে স্থায়ী দোকানের খোঁজ করছেন শিলাদিত্য। যাতে জীবন যুদ্ধে লড়াই করার একটা মঞ্চ অন্তত পাওয়া যায়। যদিও অর্থাভাবে সেই পরিকল্পনাও আটকে রয়েছে।


কে এই শিলাদিত্য?


আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar Medical College and Hospital) মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন যিনি। পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া যাবে না, সেই অজুহাতে রবিবার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ডুরান্ড কাপের ডার্বি ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। যে ম্যাচে ঐতিহাসিক এক দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারত যুবভারতী। কারণ, ছক ভেঙে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকেরা এক জোট হয়ে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ও ন্যায় বিচারের দাবিতে টিফো, ব্যানার, পোস্টারে গ্যালারি ভরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অভিযোগ, সেই প্রতিবাদ থামাতেই ম্যাচ বাতিল করা হয়েছিল।


যদিও তাতে লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন জনতার প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর রোধ করা যায়নি। সল্ট লেকে যুবভারতী স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দুই যুযুধান ক্লাবের সমর্থকেরা। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠচার্জ করে বলেও অভিযোগ। সেই সময়ই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক রোহন গুপ্তকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মোহনবাগান অন্ত প্রাণ শিলাদিত্য। তাঁর কাঁধে চড়েই স্লোগান দেন রোহন। পরে সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান শিলাদিত্য।


কসবার হালতু মোড়ে ফুটপাতে টেবিল পেতে পোলাও, মাংস ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করে সংসার চালান শিলাদিত্য। তাঁর বাবা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ও মোহনবাগানপ্রেমী। খাবারের দোকান চালাতে সাহায্য করেন ছেলেকে। রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচির পর বাড়ি ফিরেও দোকান পেতেছিলেন শিলাদিত্য। তবে রাতে অচেনা একজন এসে দোকান তুলে দেওয়ার হুমকি দেন। শিলাদিত্য বলছেন, 'ওঁকে আগে কখনও দেখিনি। স্থানীয় কেউ নয় বলেই মনে হয়। আমাকে বলেন, এখানে আর দোকান পাতবে না। কারণ জিজ্ঞেস করায় বলেন, ওপর মহলের নির্দেশ রয়েছে।'


হকচকিয়ে গিয়ে সেই রাতেই স্থানীয় পৌরমাতা সুশীলা মণ্ডল ও তাঁর স্বামী তথা প্রাক্তন পৌরপিতা তরুণ মণ্ডলের দ্বারস্থ হন শিলাদিত্য। বলছেন, 'ওঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, সমস্যা হলে সামলে নেবেন।'


তবে স্থায়ী একটি দোকানের খোঁজ করছেন শিলাদিত্য। বলছেন, 'অনেক দিন থেকেই একটা দোকানঘর খুঁজছি। অর্থাভাবে পেরে উঠিনি। তবে দোকানঘর পেলেই ফুটপাত ছেড়ে একটু ভালভাবে খাবার বিক্রি করব।'


আর জি কর কাণ্ডের কিনারা ও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি নেই ফুটবলপ্রেমী শিলাদিত্যর। বলছেন, 'আমার স্ত্রী নার্স। যে মহিলা চিকিৎসকের হত্যা করা হয়েছিল, আমার বোনের সমান। সকলের হয়েই প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিলাম। যতদিন না প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে ও ন্যায় বিচার হচ্ছে, ততদিন শান্তি পাব না।'


আরও পড়ুন: আজ ফের নামছেন নীরজ চোপড়া, কখন-কোথায় দেখবেন কিংবদন্তির জ্যাভলিন থ্রো?