নয়াদিল্লি: রোনাল্ডো একদা তাঁকে কোচ হিসাবে মানতেও অস্বীকার করেছিলেন। সেই রাল্ফ ব়্যাগনিকের (Ralf Ragnick) তত্ত্বাবধানেই এবারের উয়েফা ইউরোতে (UEFA Euro 2024) ফুল ফোটাচ্ছে অস্ট্রিয়া। ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস, দুই শক্তিধর দেশের উপস্থিতিতে তাদের পিছনে ফেলে গ্রুপ 'ডি' চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে নিজেদের জায়গা পাকা করে নিল অস্ট্রিয়া। ডাচদের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে (NED vs AUT) ৩-২ জয় পেল অস্ট্রিয়া। ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের ম্যাচ (FRA vs POL) ১-১ ড্র হতেই অস্ট্রিয়ার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।  


রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রিয়ার স্মরণীয় জয়


ডাচদের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ব়্যাগনিক দলের খেলোয়াড়দের উদ্যম নিয়ে মাঠে নামার কথা বলেছিলেন। ম্যাচে অস্ট্রিয়ার খেলার মধ্যে ঠিক সেই উদ্যমেরই দেখা মিলল। তবে অস্ট্রিয়া ম্যাচে লিড নেয় আত্মঘাতী গোলের সুবাদে। মাত্র ছয় মিনিটের মাথায় ডনিয়েল মালেন নিজের জালেই বল জড়িয়ে দেন। শুরুতে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে ডাচরা এতটাই বিধ্বস্ত ছিল, যে গোল হজম করার আগে সঠিকভাবে মাত্র দুইটি পাসই তারা দিতে সক্ষম হয়। ম্যাচের ৩৫ মিনিটেই ডাচ কোচ ভারম্যানের পরিবর্তে মাঝমাঠে জাভি সিমন্সকে নামানো দলের পরিস্থিতির পরিচয়বাহক বটে।


প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার স্যাবিটজ়ার এবং আরনাউটোভিচের কোনওক্রমে রুখে দেন ডাচ গোলরক্ষক। মেমফিস ডিপাই প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার আগেই গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। দ্বিতীয়ার্ধের দুই মিনিটের মাথায় জাভি সিমন্সের দুরন্ত রানের পর পায়ে বল পেয়ে গ্যাকপো ডাচদের সমতায় ফেরান। তবে অস্ট্রিয়া তাতে ভেঙে পড়েনি। ৬০ মিনিটের ঠিক আগেই গ্রিলিচের ক্রসে স্মিডের হেডে ফের একবার লিড নিয়ে নেয় অস্ট্রিয়া। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের মতো ফের একবার ডাচদের ত্রাতা হয়ে উঠছিলেন ওআউট ওয়েঘর্স্ট। তাঁর পাস থেকেই ডিপাই ৭৫ মিনিটে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের জন্য ডাচদের সমতায় ফেরান। তবে সাবিটজ়ারের গোলে ম্যাচে তৃতীয়বার লিড নেয় অস্ট্রিয়ানরা। ওয়েঘর্স্ট দুরন্ত হেডারে আরেকটু হলেই ডাচদের সমতায় ফেরাচ্ছিলেন। তবে অল্পের জন্য তা মিস হয়। অস্ট্রিয়া ম্যাচ জিতে নেয়।


দুই দলের দুই তারকা ফরোয়ার্ডের গোলে ড্র


পরের মরশুমে এল ক্লাসিকোয় তাঁদের দুইজনকে একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে দেখা যাবে। তবে এদিন নিজের নিজের দেশের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন কিলিয়ান এমবাপে ও রবার্ট লেয়নডস্কি। ফ্রান্স এবং পোল্যান্ড, দুই দলের অধিনায়কই ম্যাচে গোল পেলেন। ১-১ ড্রয়ে শেষ হল ম্যাচ।


পোল্যান্ড দুই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছিল। তবে ফ্রান্সের তারকাখচিত দলের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে কিন্তু তারা সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেয়। গত ম্যাচে নাকের চোটে খেলতে না পারলেও, এই ম্যাচে ফ্রান্সের হয়ে এমবাপে মাঠে ফেরেন। মুখোশ পরিহিত এমবাপের উপস্থিতি সত্ত্বেও ফ্রান্স যেন কিছুতেই গোল আসছিল না। এমবাপে চেষ্টা করেও পারছিলেন না। অপরদিকে, পোলিশ গোলরক্ষক স্কোরুপস্কিও দারুণ ফর্মে ছিলেন। বড় টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলে পোলিশ গোলরক্ষক প্রথমার্ধে দুই দুইবার এমবাপের শট বাঁচান। প্রথমার্ধ গোলশূন্যই শেষ হয়।


দ্বিতীয়ার্ধেও কিন্তু ফ্রান্স অধিনায়কের আক্রমণের ঝাঁঝ অব্যাহত থাকে। শেষমেশ ৫৬ মিনিটের মাথায় কিউিয়র উসমান দেম্বেলেকে বক্সের ভিতর ফাউল করায় পেনাল্টি থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান এমবাপে। গোল করতে কোনও ভুল করনেনি ফ্রান্সের ১০ নম্বর জার্সিধারী। বিশ্বকাপে গুচ্ছ গোল করে মঞ্চ মাতালেও এটাই এমবাপের ইউরোর মূলপর্বে প্রথম গোল। তবে লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ডায়ট উপমেকানোর ভুলে পেনাল্টি পায় পোল্যান্ড। প্রথমবার মাইগন্যান লেয়নডস্কির পেনাল্টি রুখেও দেন। তবে রেফারির মতে ফ্রান্স গোলরক্ষক অবৈধভাবে পোলিশ অধিনায়কের স্পট কিক প্রতিহত করেন। তাই দ্বিতীয়বার পেনাল্টি পান লেয়নডস্কি। এবারে তিনি কোনও ভুল করেননি।


ম্যাচ ১-১ ড্র হয়। এই ম্যাচ ড্র এবং ডাচরা পরাজিত হওয়ায় গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে রাউন্ড অফ ১৬-তে নিজেদের জায়গা পাকা করে নেয় ফ্রান্স। তবে ডাচরা হারলেও, পরের রাউন্ডে পৌঁছনোর ভ্যান ডাইকদের স্বপ্ন কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ শেষ করা নেদারল্যান্ডস সেরা তৃতীয় স্থানীয় চার দলগুলির একটি  হয়ে পরের রাউন্ডে পৌঁছতেই পারে। বরং, কোনও অঘটন না ঘটলে ডাচদের শেষ ১৬-তে পৌঁছনো একপ্রকার নিশ্চিতই বলা চলে। তবে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসের উপস্থিতিতেও এবারের ইউরোর গ্রুপ 'ডি' কিন্তু অস্ট্রিয়ার পারফরম্যান্সের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: ৮ বছর পর জয় দিয়ে কোপা অভিযান শুরু করতে ব্যর্থ দল, ম্যাচ শেষে মাঠের দোহাই দিলেন ব্রাজিলিয়ান কোচ