কলকাতা: বাঁহাতি পেসার জয়দেব উনাদকাটের বল ঈশান পোড়েলের প্যাডে লাগতেই আঁধার নামল বাংলা জুড়ে। চন্দননগরের ক্রিকেটার ডিআরএস নিলেন। লাভ হল না। তৃতীয় আম্পায়ারও এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখলেন। উল্লাসে ফেটে পড়ল সৌরাষ্ট্র শিবির। আর হতাশার মেঘ ক্রমশ গ্রাস করে ফেলল বাংলা ড্রেসিংরুমকে।


৩০ বছরের অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হল। চেতেশ্বর পূজারাদের প্রথম ইনিংসের স্কোরের চেয়ে ৪৪ রান আগে শেষ হল সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমান সাহা, অনুষ্টুপ মজুমদারদের লড়াই। নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পরেও রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের তীরে এসে ডুবল বাংলার নৌকা। প্রথমবারের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের সেরা দলের শিরোপা ছিনিয়ে নিল সৌরাষ্ট্র।

যা দেখে বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কদের মধ্যেও হাহুতাশ। চলল আত্মসমীক্ষাও। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অশোক মলহোত্র, বাংলার প্রাক্তনীরা কাঠগড়ায় তুললেন বাইশ গজকেই। মনোজ তিওয়ারিদের কোচ অরুণ লালের ক্ষোভকে অনুমোদন দিয়েই।

১৯৮৯-৯০ মরসুমে বাংলা শেষবার রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সম্বরণের নেতৃত্বে। শুক্রবার রাজকোটে অনুষ্টুপ-অর্ণব নন্দীদের লড়াই ব্যর্থ হতেই কলকাতায় থাকা সম্বরণের গলায় হতাশা। বললেন, ‘রঞ্জি ফাইনাল এরকম উইকেটে হওয়া ঠিক নয়। প্রথম ইনিংসে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। ম্যাচটার সরাসরি ফলাফল হলে বরং ভাল হত।’ প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক যোগ করলেন, ‘টসটাই ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে গেল। টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং করেই পিছিয়ে পড়েছিল বাংলা। এরকম নিষ্প্রাণ উইকেটে শুরুতে ব্যাট করে নেওয়াটা সবসময়ই সুবিধাজনক। যে সুবিধাটা পেয়েছে সৌরাষ্ট্র।’

একই সুর অশোক মলহোত্রর গলায়। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক মলহোত্র শেষবারের রঞ্জি জয়ী দলের অন্যতম সদস্য। পরে বাংলার কোচের দায়িত্বও সামলেছেন। তাঁর প্রশিক্ষণে বাংলা সেমিফাইনাল খেলেছিল। মলহোত্র বলছেন, ‘সজীব উইকেটে ম্যাচ হলে বাংলা হেরে গেলেও আক্ষেপ হত না। কারণ, এই ফাইনালে বাংলা তুল্যমুল্য লড়াই করেছে। ট্রফি স্বপ্ন ভেস্তে গেল শুধুমাত্র প্রথম ইনিংসে সামান্য পিছিয়ে পড়ায়।’

বাংলার কোচ অরুণ লাল ১৯৮৯-৯০ রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন দলে সম্বরণ-মলহোত্রদের সতীর্থ। আগেই তিনি ফাইনালের পিচ নিয়ে বিষোদ্গার করেছিলেন। ফাইনালের পর পেয়ে গেলেন এক সময়কার সহযোদ্ধাদের সমর্থন।

[tw]
[/tw]

তবে বাংলার লড়াইয়ের প্রশংসা করেছেন সম্বরণ। বলছিলেন, ‘বাংলার ক্রিকেটারেরা নাছোড় মনোভাব দেখিয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টক্কর দিয়েছে। এটাই পাঁচদিনের ক্রিকেটের বিশেষত্ব। এক ইনিংসের ম্যাচ হলেও, লাল বলে খেলার উত্তেজনা ফের টের পাওয়া গেল এই ফাইনাল থেকে। ক্রিকেটীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই উপভোগ করেছি।’ গেমচেঞ্জার কে? সম্বরণ বলছেন, ‘জয়দেব উনাদকাট। যে ডেলিভারিটায় ছন্দে থাকা অনুষ্টুপকে ফেরাল, এক কথায় অসাধারণ। সেই সঙ্গে দারুণ উপস্থিত বুদ্ধি দেখিয়ে আকাশ দীপকে রান আউট করল। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।’

আকাশের আউট নিয়ে কিছুটা বিরক্ত রঞ্জি জয়ী সম্বরণ। ম্যাচে তাঁর শট ফলো থ্রু তে দৌড়ে এসে ধরে উইকেট তাক করে ছোড়েন উনাদকাট। স্টাম্প ভেঙে যায়। আকাশের পা তখন ক্রিজের বাইরে। সম্বরণ বলছিলেন, ‘আকাশ থাকলে লড়াই আরও নাটকীয় হতো। ও ব্যাটটা করতে পারে। তবে হাস্যকরভাবে আউট হল। অনূর্ধ্ব ১৩ ক্রিকেটেও কেউ এভাবে আউট হয় না।’

মলহোত্র বাংলার ক্রিকেটারদের লড়াইয়ে খুশি। পাশাপাশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন চেতেশ্বর পূজারা-অর্পিত বাসবডার ইনিংসকে। মলহোত্র বলছিলেন, ‘অসুস্থতা নিয়েও দারুণ খেলেছে পূজারা। অর্পিতও ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করেছে।’

বর্তমানের স্বপ্নভঙ্গ। প্রাক্তনদের দীর্ঘশ্বাস। টুর্নামেন্টের শেষ দিন দুই-ই সঙ্গী হয়ে রইল বঙ্গ শিবিরের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: সৌরাষ্ট্র ৪২৫ ও ১০৫/৪ বনাম বাংলা ৩৮১ (সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ৮১, ঋদ্ধিমান সাহা ৬৪, অনুষ্টুপ মজুমদার ৬৩, অর্ণব নন্দী ৪০ নঃ আঃ)