কলকাতা: কিংবদন্তী ফুটবলার গোষ্ঠ পালের ১২৫-তম জন্মবার্ষিকী পালিত হল শুক্রবার। যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের উদ্যোগে হল শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ফুটবলার, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা, আইএফএ, সিএবি এবং তিন প্রধানের কর্মকর্তারা।


মোহনবাগান সচিব সৃঞ্জয় বসু জানান, গোষ্ঠ পালের হারিয়ে যাওয়া পদ্মশ্রী-র রেপ্লিকা তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। 


ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, জেলা থেকে ফুটবলার তুলে আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। 


‘চিনের প্রাচীর’ আখ্যা পাওয়া গোষ্ঠ পাল ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। তিনি ব্রিটিশ আমলে ফুটবল মাঠে লড়াই করতেন। সমসায়িক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। সেই কারণেই গোষ্ঠ পালের ছেলে নীরাংশু পাল বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন জেল না খাটা স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি কোনওদিন ইংরেজদের চাকরি করেননি। আমাদের চৌধুরী উপাধি দিয়েছিল ব্রিটিশরা। কাকারা পালচৌধুরী লিখলেও, বাবা সারাজীবন পালই লিখেছেন। তিনি ব্রিটিশদের উপাধিও গ্রহণ করেননি। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও মহাত্মা গাঁধীর আন্দোলনকে সমর্থন করে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাননি বাবা। বয়সে এক বছরের ছোট সুভাষচন্দ্র বসুকে তিনি অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। তিনি বলতেন, কেউ যদি দেশের কথা ভাবেন, তাহলে সেটা একমাত্র নেতাজি। তিনি থাকলে দেশ অন্যরকম হত। দেশভাগ হত না।’


১৯১২ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত মোহনবাগান রক্ষণ আগলে রেখেছিলেন গোষ্ঠ পাল। তাঁর মাঠ থেকে সরে যাওয়ার কারণও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই। একটি ম্যাচে ইংরেজ রেফারির পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের প্রতিবাদে মাঠে শুয়ে পড়েন গোষ্ঠবাবু। এই কারণে তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় আইএফএ। সে কথা জানতে পেরেই খেলা ছেড়ে দেন গোষ্ঠবাবু। তিনি মোহনবাগানের হয়ে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ও টেনিস খেলেছিলেন। চারটি খেলাতেই তিনি ক্লাবের অধিনায়ক হন।


কোনওদিন মোহনবাগান না ছাড়লেও, তিনি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। ১৯২০ সালে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরেই শ্যাম পার্কে একটি প্রতিযোগিতায় লাল-হলুদ জার্সি পরে খেলেন গোষ্ঠবাবু। তিনিই ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রথম অধিনায়ক। তখনও আইএফএ-তে ইস্টবেঙ্গলের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে গোষ্ঠ পালের ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলা ম্যাচটি সরকারিভাবে নথিভূক্ত নয়। ১৯২৮ সালে ইস্টবেঙ্গল তাঁকে এক লক্ষ টাকা ও পার্ক স্ট্রিটে বাড়ি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মোহনবাগান থেকে কোনওদিন খেলার জন্য টাকা না পাওয়া গোষ্ঠবাবু লাল-হলুদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। 


ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলকাতায় পড়ার সময় গোষ্ঠবাবুর খেলা দেখতে যেতেন। সেই খেলা দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই তিনি নিজে পদ্মশ্রীর জন্য গোষ্ঠবাবুর নাম মনোনীত করেন। প্রথম ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন গোষ্ঠ পাল। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে গোষ্ঠবাবুর নাম।