কলকাতা: রবিবার ভ্যালেন্টাইনস ডে। শহর জুড়ে প্রেমের উষ্ণতা। সঙ্গীদের নিয়ে দিনটা কীভাবে কাটাবে, সকল প্রেমিক-প্রেমিকা সেই পরিকল্পনা সেরে রাখতে ব্যস্ত। এমনকী যাঁরা বিবাহিত, তাঁরাও স্বামী-স্ত্রী মিলে প্ল্যান করছেন হয় সিনেমা দেখতে যাওয়ার। অথবা নিদেনপক্ষে কোনও রেস্তোরাঁয় ডিনার।


 


আর হাসিন জাহান কি না ব্যস্ত মামলা-মকদ্দমার হিসেব কষতে। তাও কি না স্বামীর বিরুদ্ধে করা মামলার! যে আইনি লড়াইয়ে আপাতত হাসিনের কপালে শুধু তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ...।


 


হাসিন বরাবরই সংবাদের শিরোনামে থেকেছেন কারণ, তাঁর লড়াই যাঁর সঙ্গে, তিনি আমআদমি নন। সেলিব্রিটি। জাতীয় দলের তারকা পেসার মহম্মদ শামি। ২০১৪ সালে যাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। আর ২০১৮ সাল থেকে চলছে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা।


 


গোটা কলকাতা প্রেমের সপ্তাহ পালনে মগ্ন। আর শনিবার সন্ধ্যায় হাসিন বলে চললেন, ‘ইলাহাবাদে একটি আর কলকাতায় চারটি, শামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি মামলা চলছে। ও আর ওর আইনজীবীরা শুধু তারিখ নিয়ে চলেছে। আদালতে হাজিরার ডেট পড়লেই এড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবে। ওকে আদালতে আসতেই হবে।’


 


হাসিন আর শামির প্রেমকাহিনি রূপকথার মতো। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। হাসিন বলছিলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমি দুটি মার্কেটিং সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। একটি অভিজাত ক্লাবে আমার আগের পক্ষের দুই মেয়ের নামে মেম্বারশিপ ছিল। উচ্চতা ভাল বলে বন্ধুদের পরামর্শে মডেলিংয়ে নামি। সেখান থেকেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের চিয়ারলিডার হিসাবে নির্বাচিত হই। কেকেআর ঠিক করেছিল বাঙালি কাউকেই চিয়ারলিডার নেবে। সেভাবেই সুযোগ পাই। তখনই কেকেআরের একটা আফটার ম্যাচ পার্টিতে শামির সঙ্গে আলাপ। ২০১২ সালে। ৩-৪ দিন সময় কাটিয়েছিলাম ওর সঙ্গে। আমার মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করেছিল শামি। খুব ভদ্র ব্যবহার করত। তখন কেকেআরের প্রথম একাদশে ও সুযোগ পেত না। আমি ওকে মডেলিংয়েও নামিয়েছিলাম। কোথাও কোনও পুরুষ মডেল দরকার হলেই ওকে নিয়ে গিয়েছি।’


 


হাসিন আরও বললেন, ‘ওর বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করায়। উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় ওদের বাড়িতে যাই। তখনও বুঝিনি এভাবে প্রতারণার শিকার হতে হবে। মাঝে আর একবার আমার সঙ্গে ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমি জানতে পারি টুবা নামের এক তরুণীর সঙ্গে ওর সম্পর্ক রয়েছে। ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তবে ওর পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। আমার সঙ্গে বিয়ে হোক চাইছিল। তারপর ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল আমাদের বিয়ে হয়।’


 


আপাতত দক্ষিণ কলকাতায় শামির বাড়িতেই থাকেন হাসিন। শামি অবশ্য কলকাতায় থাকেন না। খেলা না থাকলে উত্তরপ্রদেশের আমরোহায় ফার্মহাউসে, বা দিল্লিতে থাকেন। হাসিন বলছেন, ‘আমাকে একসঙ্গে তিনটি লড়াই করতে হচ্ছে। এক, স্বামীর বিরুদ্ধে। দুই, সমাজের বিরুদ্ধে। তিন, ধর্মের গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। সকলে মনে করেন আমি এক বাচ্চার মা। স্বামী আমার সঙ্গে থাকে না। তাই আমি ছোট পোশাক পরতে পারব না। সোশ্যাল মিডিয়ায় নাচের ভিডিও আপলোড করতে পারব না। কান্নাকাটি করব। গুমড়ে গুমড়ে মরব। স্বাধীনভাবে লড়াই করতে পারব না।‘ হাসিনের পাল্টা প্রশ্ন, ‘সকলে মনে করেন শামি একজন তারকা ক্রিকেটার। আর আমি চিয়ারলিডার ছিলাম। ও বিয়ে করে আমাকে ধন্য করেছে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্ত্রীও হোটেলে রিসেপশনিস্ট ছিল। ও তো এমন ভাবেনি! মুরলী বিজয় যাকে বিয়ে করেছে সে তো দীনেশ কার্তিকের স্ত্রী ছিল। তাহলে? দুই বাচ্চার মা আয়েশা মুখোপাধ্যায়কে কেন বিয়ে করল শিখর ধবন? আরতিকে কেন বিয়ে করল বিনোদ কাম্বলি! অথচ আমার স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি বলে আমি খারাপ!’


 


ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগের সন্ধ্যায় মন খারাপ হচ্ছে না? মনে হচ্ছে না, ইশশ, সব যদি স্বাভাবিক হয়ে যেত, আবার যদি কোনও উপহার নিয়ে হাজির হতেন শামি? হাসিন ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ‘আমার আর কিছু মনে হয় না। কিছুই ভাল লাগে না। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হতো। এমনকী, ওর অত্যাচার সহ্য করতাম মুখ বুজে। প্রথমবার যখন পুলিশে অভিযোগ করি, তখনও চাইনি ওর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিতে। রাত জেগে কাঁদতাম। খুব কষ্ট হতো। বেবোর তখন মাত্র দুবছর বয়স। ওর মুখ দেখে বুক ফেটে যেত। ওর জন্য সব করতে পারি, তবে বাবা আনব কীভাবে। তবে এখন আর সেসব ভাবি না।‘


 


হাসিনের চোয়াল এখন শক্ত। বলছেন, ‘দিদির ছেলের বিয়ে ছিল। আমন্ত্রিত হয়েও যাইনি। পরিবারের কোনও বাচ্চা তার বাবাকে ডাকলে বেবো বায়না করে, আমি ওদের ড্যাডি বলে ডাকি? কী জবাব দেব ওকে! শামি একবার খোঁজও নেয় না। টাকা পাঠায় না। ওকে স্কুলে ভর্তির খরচও দেয়নি। জন্মদিন হোক বা ঈদ, না পাঠায় উপহার, না দেয় কোনও খেলনা। আমি চেষ্টা করছি কাজে ফেরার। লকডাউনে সমস্যায় পড়লাম। ফের মডেলিং শুরু করতে চাই। দেখা যাক।’


 


প্রেমের সপ্তাহে হাসিনের সঙ্গী নিঃসঙ্গতা আর একরাশ অভিযোগ।