নয়াদিল্লি: এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ার্সের চূড়ান্ত পর্ব আর মাস খানেক পরেই। তার আগে প্রস্তুতির শেষ ধাপে পরপর কয়েকটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে ভারতীয় দল। সে জন্যই সোমবার বেলারিতে প্রস্তুতি শিবির শেষ করে কলকাতায় এসে পৌঁছেছে ভারতীয় দল। জাতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ মঙ্গলবার কলকাতায় বসে এক ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, বুধবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলবেন তাঁরা। এর পরে আই লিগের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দল কলকাতাতেই খেলবে ১৭ ও ২০ তারিখে।


প্রস্তুতির এই শেষ পর্ব শুরুর আগে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের স্টিমাচ জানালেন, এই প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতেই বুঝে নেবেন তাঁর দল ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে।  এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে আর যা বললেন ভারতীয় কোচ, তার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। 


প্রশ্নএটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা এই প্রস্তুতি পর্বে দলের সঙ্গে থাকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ওদের সঙ্গে দলের বোঝাপড়া তৈরির ব্যাপারটা কী ভাবে হবে?


স্টিমাচ: এটা এখন থেকেই বলা কঠিন। কারণ, একটা স্থায়ী প্রথম এগারো তৈরি করতে আমাদের অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ওরা জাতীয় শিবিরে যোগ দেওয়ার পরে আমরা ওদের সঙ্গে নিয়ে আরও ৯-১০ দিন অনুশীলন করার সুযোগ পাব। ওদের যদি শুরুর দিকে খেলাতে নাও পারি, তা হলে পরের দিকে হয়তো খেলাব। এএফসি কাপের ম্যাচগুলিতে এটিকে মোহনবাগান খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখব, যেমন মুম্বই সিটি এফসি-র খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও দেখেছি। ওখানকার পারফরম্যান্স দেখেই তিনজনকে শিবিরে ডেকেছি।


বেলারির শিবিরে কোন কোন বিষয়গুলোতে বেশি জোর দেন আপনারা?


এর আগেও যা করেছি, সে রকমই। আমরা কী রকম খেলব, তা অনেকটাই নির্ভর করে প্রতিপক্ষের ওপর। ক্রমতালিকায় আমাদের চেয়ে ওপরে থাকা দলগুলোর বিরুদ্ধে ঝুঁকি নিয়ে আগ্রাসী ফুটবল খেলা এখনও আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের চেয়ে নীচে থাকা দলগুলোকে চাপে রাখতে পারছি আমরা। তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক খেলতে পারছি। প্রতিপক্ষ যদি বেশি রকম রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে, তা হলে তাদের রক্ষণে কী ভাবে ফাটল ধরাতে হবে, শেয পর্বের প্রস্তুতিতে আমাদের সেটাই ভাল ভাবে রপ্ত করে নিতে হবে। আসন্ন প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে আমাদের শুরুতে গোল দিয়ে বাকি সময়ে চাপমুক্ত হয়ে খেলার অভ্যাস করতে হবে।


আপনার গোল করার সমস্যা কি মিটেছে বলে মনে করেনএশিয়ান কাপের দলে তো সুনীল ছেত্রী ছাড়াও একাধিক ভাল ভাল গোলস্কোরার রয়েছে।


গত আইএসএলেই আপনারা দেখেছেন, ভারতীয় গোলদাতা ও গোলে সাহায্যকারী ভারতীয়ের সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছে। এই লিগে বিদেশিদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় দারুন ভাবে উপকৃত হচ্ছে ভারতীয় সিনিয়র দল। তবে ছবিটা এখনও পুরোপুরি পাল্টায়নি। ভারতীয়রা অনেকেই ওয়াইড মিডফিল্ডার, উইঙ্গার হিসেবে খেলছে। তবে ওরা যে ভারতীয় ফুলব্যাকদের মুখোমুখি হয়, তারা আন্তর্জাতিক মানের নয়। এই পজিশনগুলির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে অনেকটা ফারাক থেকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে টেকনিক ও গতির সঙ্গে পেশীবহুল ফুটবলারদের গুরুত্ব এখন বেশি।


সুনীল ছেত্রীর বিকল্প হয়ে ওঠার মতো কি কাউকে পাওয়া গিয়েছে আপনার দলে, নাকি ৩৭ বছরের সুনীলকেই এখনও দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে যেতে হবে?


সুনীল এখনও যথেষ্ট ভাল শেপে আছে। বাহরিন, বেলারুশের বিরুদ্ধে ও দলে ছিল না, কারণ, গত দু’বছরে যে ছোটখাটো চোটগুলো নিয়ে খেলতে হয়েছে ওকে, সেগুলো সারিয়ে ফিরে আসতে চেয়েছিল ও। যথেষ্ট ভাল রিকভারি হয়েছে ওর। প্রস্তুতি শিবিরে প্রতিদিন তা প্রমাণ করেছে ও। এখনও ভারতীয় দলের আক্রমণে প্রধান অস্ত্র সুনীলই। তবে ইদানিং যে ছেলেটি সুনীলের ভাল জুটি হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, সেই রহিম আলিকে আমরা এখন পাচ্ছি না। ও সুনীলের কাজটা অনেক সহজ করে দিতে পারে। ও বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ব্যস্ত রেখে সুনীলকে অনেকটা খোলা জায়গায় করে দিতে সাহায্য করে। রহিম গত কয়েক মাসে দারুন উন্নতি করেছে। তরুণ ফুটবলারদের সমস্যা হল, ওরা ছোটখাটো চোট নিয়েও খেলে বলে ওই চোটগুলোই বড় হয়ে ওঠে ও দীর্ঘকালীন সমস্যায় পরিণত হয়। রহিমের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে। ওর এখন অন্তত ৬-৭ সপ্তাহের বিশ্রাম দরকার।


এশিয়ান কাপ ২০২৩-র মূলপর্বে ভারতের যোগ্যতা অর্জন করার সম্ভাবনা কেমন?


বাছাই পর্বে আমাদের গ্রুপে আমরাই ফেভারিট। আমরা সাফল্যের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আমার মনে হয় ভারত মূলপর্বে খেলবে। এই নিয়ে আমার খুব একটা সন্দেহ নেই। আশা করি, কলকাতার মানুষ আমাদের সমর্থন করবেন। আশা করি, শেষ ম্যাচের পরে আমরা সবাই মিলে সাফল্য উদযাপন করতে পারব।


                                                                                                                                                                                               (তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল মিডিয়া)