নয়াদিল্লি: লন্ডনে সদ্যসমাপ্ত হকি বিশ্ব লিগ সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ গড়াপেটার চেষ্টা করা হয়েছিল! হকি ইন্ডিয়ার অন্তত তেমনই অভিযোগ। আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের সিইও জেসন ম্যাকক্র্যাকেনকে চিঠি দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সর্দার সিংহকে পুলিশের জেরা করতে ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে হকি ইন্ডিয়া। ইংল্যান্ডে অতীতে পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের কথা উল্লেখ করে হকি ইন্ডিয়ার দাবি, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতকে যদি কম বা ক্লান্ত খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলতে বাধ্য করার চেষ্টা হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। হকি যাতে গড়াপেটার মহামারিতে আক্রান্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সর্দারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অত্যাচারের অভিযোগ করেছিলেন ইংল্যান্ডের ভারতীয় বংশোদ্ভূত হকি খেলোয়াড় আশপাল ভোগল। তিনি সর্দারের প্রেমিকা ছিলেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই সর্দারকে জেরা করে ইংল্যান্ডের পুলিশ। হকি ইন্ডিয়ার দাবি, দুই খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলাতে রাজি হননি কর্তারা। কিন্তু সর্দার ও ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছে হকি ইন্ডিয়া। ইংল্যান্ডের জাতীয় স্তরের খেলোয়াড় যে অভিযোগ করেছেন, সেটা সত্যি কি না খতিয়ে দেখা উচিত সেদেশের হকি সংস্থার।

ভারতীয় দলের ম্যানেজার যুগরাজ সিংহের ই-মেল থেকে জানা গিয়েছে, ১৮ই জুন হকি ওয়ার্ল্ড লিগ সেমিফাইনালের ভারত-পাকিস্তানের হকি ম্যাচের আগে সকালে তাঁকে লিডস পুলিস স্টেশন থেকে ফোন করা হয়। বলা হয়, এক মহিলা সর্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অবিলম্বে তাঁকে থানায় হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু ম্যাচের দিন সকালে সর্দারকে বিষয়টি জানানো হয়নি। কারণ, ওঁর উপর ম্যাচের আগে অযথা চাপ বেড়ে যেত। এরপর ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ম্যাচ রয়েছে। তাই হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়।

ভারতীয় হকি দলের ম্যানেজারের দাবি অনুযায়ী, পুলিশ আধিকারিক হুমকি দেন, না এলে অবিলম্বে সর্দারকে গ্রেফতার করা হবে। এরপর অনুরোধ করে একদিন পিছিয়ে ১৯ জুন ঠিক করা হয় লিডসে হাজিরা দিতে যাবেন সর্দার। প্রায় ঘন্টা ছয়েকের রাস্তা গাড়িতে করে যান সর্দার। এরপর দীর্ঘ ৪ ঘন্টা জেরা। তারপর ফের ৬ঘন্টা গাড়িতে চেপে লন্ডনে ফেরেন। অবস্থা এমন হয় যে পরের দিনই নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিধ্বস্ত সর্দারকে দেখে ম্যাচে না নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই ম্যাচে ১-৩ গোলে হারে ভারত।

প্রশ্ন উঠছে, যে মহিলার সঙ্গে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ ছিল সর্দারের বিরুদ্ধে, সেই মামলা তো মিটে গিয়েছে ২০১৫ সালেই। তা হলে ফের নতুন করে কেন এই অভিযোগ? হকি ইন্ডিয়ার সভাপতি মারিয়াম্মা কোশির বিশ্ব হকি সংস্থার সিইও-কে পাঠানো ই-মেলে আরও বিস্ফোরক তথ্য।  যে মহিলা অভিযোগ করেছেন, অভিযোগ জানানোর ১০ দিন আগে তাঁর ফোন রেকর্ড চেক করা হোক বলে দাবি কোশির।

সূত্রের খবর, ভারতীয় হকি সংস্থার কাছে নাকি খবর, ম্যানচেস্টারের পাক বংশোদ্ভূত এক সাংসদ সেই মহিলাকে ভারত-পাক ম্যাচের আগে সর্দারের নামে অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। তার বিনিময়ে তাঁকে ৫ হাজার পাউন্ড দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ভারতীয় হকি সংস্থার। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সর্দারকে বিপাকে ফেলতেই কি এই মহিলা টোপ? ইমেল বোমায় এখন চাঞ্চল্য বিশ্ব হকিতে।