গুয়াহাটি: গড়ের মাঠ বহু তরুণের লড়াইয়ের সাক্ষী। ভিনরাজ্য থেকে এসে অসংখ্য খেলোয়াড় কলকাতার বিভিন্ন দলের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন। মহম্মদ শামি যেমন উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতায় এসে খেলতে খেলতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, তেমনই সাফল্য পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আদতে বিহারের শরণ জেলার বাসিন্দা পাপু রায়। এই বাঁ হাতি স্পিনার এবারের দেওধর ট্রফিতে অজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বে ভারতীয় সি দলের হয়ে খেলবেন। বিজয় হাজারে ট্রফিতে ওড়িশার হয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর সুবাদেই দেওধর ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন পাপু।


অথচ এই তরুণের বড় হওয়ার স্বপ্ন জীবনের শুরুতেই থমকে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ, ছোটবেলাতেই তিনি বাবা-মাকে হারান। চরম দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বেড়ে উঠেছেন পাপু। নিজের লড়াইয়ের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার বাবা-মা বিহারের শরণ জেলার খাজুরি গ্রাম থেকে কাজের খোঁজে কলকাতায় এসেছিলেন। আমি কোনওদিন তাঁদের দেখিনি। কোনওদিন গ্রামে যাইওনি। শুধু বাবা-মার কথা শুনেছি। আজ যদি বাবা-মা থাকতেন আর আমাকে ভারতীয় সি দলের হয়ে খেলতে দেখতেন, তাহলে তাঁরা খুশি হতেন। আমি দেওধর ট্রফিতে খেলার সুযোগ পাওয়ার কথা জানতে পেরে সারারাত ঘুমোতে পারিনি। আমি শুধু কেঁদেছি। মনে হচ্ছে, বছরের পর বছর যে কঠোর পরিশ্রম করেছি, অবশেষে তার ফল পাচ্ছি।’

ছোটবেলাতেই বাবা-মাকে হারানো পাপুকে বড় করে তোলার দায়িত্ব নেন কাকা-কাকিমা। কিন্তু ১৫ বছর বয়সে পেশায় দিনমজুর কাকাকেও হারান এই ক্রিকেটার। তখন দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় থেকেই তাঁর লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার হয়ে যায় ক্রিকেট। বিভিন্ন জায়গায় খেলতে ডাকতেন বড়রা। তাঁরা বলতেন, উইকেট নিলেই ১০ টাকা করে দেবেন। শুরুতে পেস বোলিং করলেও, পরে হাওড়া ইউনিয়নের কোচ সুজিৎ সাহার পরামর্শে স্পিনার হয়ে যান পাপু। ২০১১ সালে তিনি ডালহৌসির হয়ে সিএবি দ্বিতীয় ডিভিশনে ৯ ম্যাচে ৫০ উইকেট নেন। তবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হলেও, ইরেশ সাক্সেনা ও প্রজ্ঞান ওঝা থাকায় বাংলা দলে সুযোগ মেলেনি পাপুর। সেই কারণে তিনি দুই বন্ধুর পরামর্শে ওড়িশার জাজপুরে চলে যান। ২০১৫ সালে ওড়িশার অনূর্ধ্ব-২৩ দলে সুযোগ মেলে। তিন বছরের মধ্যেই তিনি সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর পর এবার জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়াই লক্ষ্য পাপুর।