কলম্বো: 'নো'--বল বিতর্কে নিদাহাস টি ২০ ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচে তীব্র উত্তেজনা। মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম ঘটেছিল বাংলাদেশের। দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে বচসা। তৈরি হল অপ্রীতিকর পরিস্থিতির।
গতকাল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যে ম্যাচ ছিল কার্যত টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলবে তারা।
ম্যাচের শেষ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আস হাসান স্বীকার করেছেন, তাঁর শান্ত থাকার প্রয়োজন।
শুরুটা হয়েছিল রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের একেবারে শেষ ওভারে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ রান। ইসুরু উদানা প্রথমেই শর্ট পিচ ডেলিভারি করেন। রান নিতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান। পরের বলও শর্ট পিচ, ব্যাটে বল লাগাতে পারলেন না মুস্তাফিজুর। মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক দিতে গিয়ে রান আউট হন তিনি।
টি-টোয়েন্টিতে ওভারে একটির বেশি বাউন্সার দিলে ‘নো’ হল হয়। আম্পায়ার উদানার দ্বিতীয় শর্ট পিচ বলটি নো না ডাকার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ লেগ আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আম্পায়ার ‘নো’ বলের সংকেত দেন।



এর প্রতিবাদ করেন শ্রীলঙ্কার প্লেয়াররা। তারা আম্পায়ারকে ঘিরে ধরেন। লেগ আম্পায়ার গিয়ে অন্য আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে ‘নো’ তুলে নেন। এবার প্রতিবাদ করেন মাহমুদউল্লাহ। মাঠের বাইরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাকিব। । বাউন্ডারি লাইনের ধারে চলে আসেন এবং ব্যাটসম্যানদের প্যাভিলিয়নে ফেরত আসতে বলেন। শেষপর্যন্ত দলের ম্যানেজার পরিস্থিতি সামলান। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা খেলা শুরু করেন এবং মাহমুদুল্লার নায়কোচিত ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে দুই উইকেটে হারিয়ে দেয়।
এই ঘটনায় দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বচসা বেঁধে যায়, হাতাহাতিরও উপক্রম হয়।
ম্যাচের শেষে অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক দাবি করেছেন, তিনি ব্যাটসম্যানদের ফিরে আসতে বলেননি। সাকিব বলেছেন, আমি ওদের খেলতে বলেছিলাম। এখন আপনারা দুভাবেই ঘটনাকে দেখতে পারেন। ওটা নির্ভর করছে, আপনারা কীভাবে দেখেছেন, তার ওপরে।

শেষপর্যন্ত ম্যাচ আধিকারিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

একইসঙ্গে সাকিব বলেছেন, 'মাঠে অনেক কিছুই হয়েছে যেটা উচিত হয়নি। অবশ্যই আমার শান্ত থাকা উচিত ছিল। একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম হয়তো। আবেগ ও উত্তেজনা মিলিয়ে ওরকম হয়ে গেছে। আমি জানি পরবর্তী সময়ে কীভাবে আচরণ করতে হবে। এবার থেকে অবশ্যই আরও সতর্ক থাকব'।
প্রেমদাসা স্টেডিয়ামে দু দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে উত্তেজনা গতকাল মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হয়ে পড়েছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। কথাকাটাকাটি হয়েছে। তেড়ে গেছেন পরস্পরের দিকে। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের উত্তেজনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে অপ্রীতিকর ঘটনা।
সাকিব দাবি করেছেন, এই ঘটনা দুদেশের ক্রিকেটারদের সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
তিনি বলেছেন, মাঠের ভেতরের বিষয় কখনোই মাঠের বাইরে আসা উচিত নয়। আমরা এমনিতে খুব ভালো বন্ধু। শুধু ক্রিকেটার নয়, দুই দেশের বোর্ড, দুই দেশ, সবাই সবাইকে সাহায্য করে। বাংলাদেশ ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আমরা একসঙ্গে খেলি। ওদের সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক আমাদের। দুই দেশের বোর্ডের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো। মাঠে দলকে যেমন যে কোনও মূল্যে জেতানোর কথা ভাবি, ওরাই ঠিক তেমনটাই ভাবে। আমি নিশ্চিত যে দুই দলই এটা এভাবেই নেবে এবং মাঠের বিষয় বাইরে প্রভাব ফেলবে না।
মাঠের ওই ঘটনার পর ম্যাচ জয়ের উচ্ছ্বাস প্রকাশের সময় ড্রেসিংরুমের দরজার কাচ ভাঙার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আইসিসি এখনও গতকালের ম্যাচ সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড।