নয়াদিল্লি: বেপরোয়া, ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি বিশ্বের সমস্ত বোলারদের থেকে সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন। সেই শাহিদ আফ্রিদি এবার প্রমাণ করে দিলেন, মাঠের বাইরেও তিনি একইরকম। খোলামেলা। অকপট। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সোজাসাপ্টা জাহির করতে দ্বিধা করেন না।

পাকিস্তানের অলরাউন্ডার তাঁর আত্মজীবনীতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতাদর্শের প্রশংসা করেছেন। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যে সঠিক হাতেই রয়েছে, জানিয়েছেন সেটাও। পাশাপাশি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে আফ্রিদি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে আরও উদ্যোগী হতে হবে তাঁকে।

নিজের দিনে একার হাতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতেন আফ্রিদি। আত্মজীবনীর নামকরণও করেছেন যেন সেই বিষয়টা মাথায় রেখেই। 'গেমচেঞ্জার'। সেই বইয়ে আফ্রিদি লিখেছেন, 'কাশ্মীর ভারতের নয়। পাকিস্তানেরও নয়। কাশ্মীর শুধুমাত্র কাশ্মীরিদের। বাকি বিতর্ক সব পরে আসবে। প্রথমে কাশ্মীরের অধিবাসীদেরই প্রাধান্য দিতে হবে।'

ইমরান খানের প্রশাসনের ভারত-নীতিকে সমর্থন করেছেন আফ্রিদি। আত্মজীবনীতে লিখেছেন, 'শান্তিরক্ষায় ইমরানের পদক্ষেপ, পাকিস্তানের হাতে বন্দি ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসারকে মুক্তি সত্যিই প্রশংসনীয়। ক্ষমতায় এসে প্রথম ভাষণে যেভাবে বলেছিলেন যে, শান্তির জন্য ভারত এক পা এগলে আমরা দু'পা এগব, সেই দর্শন আমি নিজেও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক ভীষণ জরুরি। তাতে দুই দেশ তো বটেই, পুরো উপমহাদেশই লাভবান হবে।'

পাশাপাশি আফ্রিদি লিখেছেন, 'তবে কাশ্মীর নিয়ে আরও উদ্যোগী হতে হবে ইমরান খানকে। কাশ্মীর সমস্যা আমাদের মেটাতেই হবে। কাশ্মীরিদের রক্ষা করতে হবে আর শান্তিস্থাপনের প্রক্রিয়ায় ওদেরও যুক্ত করতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে কাশ্মীরিদের মত কষ্টভোগ কেউ করেনি।' তিনি যোগ করেছেন, 'এই অঞ্চলের সুরক্ষার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ হয়। সীমানা পাহারা দেওয়ার জন্য প্রচুর ব্যয় হয়। একজন কাশ্মীরিকে সামনে রেখেই কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হওয়া উচিত ভারত-পাকিস্তানের। সমস্যা মিটলে বেঁচে যাওয়া অর্থ অনেকের মুখে আহার জোগাবে। অনেককে শিক্ষিত করে তুলবে।'

ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়া আর একজনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল বলে মনে করেন আফ্রিদি। নরেন্দ্র মোদি। তবে আফ্রিদির মতে, মোদির চেয়েও এ ব্যাপারে বেশি নমনীয় ইমরান।

আত্মজীবনীতে নিজের শৈশব, সংগ্রাম আর উত্থানের কথাও বিশদে লিখেছেন আফ্রিদি। কীভাবে অখ্যাত এক টিনেজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে প্রবেশ করেই ওয়ান ডে ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরি করে খ্যাতির শিরোনামে উঠে এসেছিলেন, কীভাবে ওয়ান ডে-তে সবচেয়ে বেশি ছক্কা, টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে সবচেয়ে বেশি উইকেট আর সবচেয়ে বেশি ম্যান অফ দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি জমা পড়েছিল তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে, ভক্তদের জানিয়েছেন আফ্রিদি।

পাক অলরাউন্ডারের আক্ষেপ, বিদেশে থাকায় ২০১৮ সালে দেশের নির্বাচনে তিনি ভোট দিতে পারেননি। সঙ্গে আফ্রিদি লিখেছেন, 'প্রশাসক ইমরানের দক্ষতা নিয়ে আমার মনে কোনও সংশয়ই নেই। আমি শুধু চিন্তিত ওঁর দল নির্বাচন, কাদের দায়িত্ব দিচ্ছেন এবং তাঁরা কতটা দক্ষ, সেটা নিয়ে।'