কলকাতা: লম্বা অস্ট্রেলিয়া সফর সেরে দেশে ফিরেছিলেন ২১ জানুয়ারি। মাঝে মাত্র দিন দশেকের ছুটি। তারপরই ফের ঢুকে পড়তে হয়েছে জৈব সুরক্ষা বলয়ে। জাতীয় দলের শিবিরে। ভারতীয় ক্রিকেটারেরা সকলেই মাঝের দিন দশেকের সময়টা কাটিয়েছেন বিশ্রামে। পরিবারের সঙ্গে।


 


তবে ব্যতিক্রমী আর অশ্বিন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যাঁর স্পিনের ছোবল বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল। স্টিভ স্মিথদের ডেরায় ব্যাট হাতেও সমান উজ্জ্বল ছিলেন তামিলনাড়ুর অফস্পিনার। আর দেশে ফিরেই শুরু করে দিয়েছিলেন ক্রিকেট সাধনা। চেন্নাইয়ের নুঙ্গমবক্কমে নিজের অ্যাকাডেমিতে। সামনেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধ যে!


 


সোমবার চেন্নাইয়ের কঠিন পিচে ১৪৮ বলে ১০৬ রান করেছেন অশ্বিন। তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সপ্তম সেঞ্চুরি তামিলনাড়ুর অফস্পিনারের। বল হাতে যিনি চলতি টেস্টে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটও নিয়েছেন। যে পারফরম্যান্সের পর ক্রিকেটমহলে অশ্বিনের নামে জয়োধ্বনি উঠছে। বলা হচ্ছে, অশ্বিন শুধু অফস্পিনার কেন, তিনি তো বিরাট কোহলির দলের অন্যতম ভরসার অলরাউন্ডারও। আর তারকা ক্রিকেটারের শৈশবের কোচ সুনীল সুব্রহ্মণ্যম বলছেন, এই সাফল্য এমনি এমনি আসেনি। নেপথ্যে রয়েছে কঠোর অনুশীলন।



সোমবার সন্ধ্যায় চেন্নাই থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি আনন্দকে সুনীল বললেন, ‘চেন্নাইয়ের নুঙ্গমবক্কমে আরকে রোডে অশ্বিনের অ্যাকাডেমি রয়েছে। সেখানে চিপকের মতো পিচ তৈরি করিয়েছিল ও। মানে এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে যেরকম শুকনো, ধূলো ওড়া বাইশ গজ হয়। যে পিচে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকে। আর সেই পিচে শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংও অনুশীলন করেছে অশ্বিন। তাতেই সাফল্য এসেছে। ও তৈরি হয়েই নেমেছিল। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে কয়েকটামাত্র দিন ছিল ওর হাতে। ছুটিতে কাটায়নি। এমনিতে চিপক ওর ঘরের মাঠ। হাতের তালুর মতো চেনা। সেই মাঠেই ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স।’


 


ছোট থেকেই অশ্বিনকে দেখছেন সুনীল। অশ্বিনের তারকা হয়ে ওঠা তাঁর চোখের সামনে, তাঁরই প্রশিক্ষণে। একসময়ে ভারতীয় দলের ম্যানেজারও ছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সুনীল। চিপকে অশ্বিনের সেঞ্চুরি তাঁকে এতটুকু হতবাক করেনি। বলছিলেন, ‘ওর দক্ষতা ফের একবার গোটা বিশ্ব দেখল। টেস্টে সেঞ্চুরি করছে, এর চেয়ে বেশি তৃপ্তি আর কী থাকতে পারে। বল ও ব্যাট হাতে ভীষণ পেশাদার অশ্বিন।’ সুনীল যোগ করলেন, ‘ওর ব্যাটিংটা ভীষণ সহজাত। আমি ওকে সবসময় বোলিংয়ে জোর দিতে বলি। বিদেশে ওর বোলিং নিয়ে আগে অনেকে প্রশ্ন তুলতেন। তবে অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বের সব মাঠেই বল ঘোরাতে পারে। পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলের সম্পদ ও। টেস্টে ভারতীয় দলের ব্যাটিংয়ের লেজ একসময় ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অশ্বিন সেই জায়গায় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’


 


জো রুটদের বিরুদ্ধে ছাত্রের সেঞ্চুরি দেখে উচ্ছ্বসিত কোচ। সুনীল বলছেন, ‘ওর এটা অন্যতম সেরা ইনিংস। তবে ইংল্যান্ড খুব বাজে বোলিং করেছে। এত মন্থর গতিতে বল করেছে, বল বাতাসে রেখেছে যে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পেয়েছে। এই ধরনের পিচে একটু জোরের ওপর বল ছাড়লে ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়ে। খুব বাজে বোলিং করেছে। মইন আলির বল ব্যাটসম্যানেরা অনেক আগে থেকে বুঝে যাচ্ছিল। তবে অশ্বিনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। অবলীলায় সুইপ খেলেছে। অলরাউন্ডার অশ্বিন এখন জাতীয় দলের স্তম্ভ।’