কলকাতা: আর কয়েক ঘণ্টা পরেই দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের লড়াইয়ে (Asia Cup 2022) একে অপরের মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান (India vs Pakistan)। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ের আগে উত্তেজনা চরমে। কে জিতবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবসান। তবে ম্যাচের আগে কিন্তু বিরাট কোহলি, বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি, ঋষভ পন্তরা একে অপরের সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই মেলামেশা করেছেন। অনুশীলনের ফাঁকে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্য়ে কথোপকথোন ও ভাব ভালবাসার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অবশ্য সবসময় কিন্তু ছবিটা এতটা বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই মাঠেই হাড্ডাহাড্ডি ম্য়াচ, রোমাঞ্চ এবং এই অতীতে একাধিকবার দুই দলের খেলোয়াড়দের মাঠেই ব্যাট বলের লড়াইয়ের বদলে, কথা কাটাকাটি (India vs Pakistan brawls) থেকে বচসায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। খেলোয়াড়দের বিরোধের কিছু কিছু তো আজ 'আইকনিক মোমেন্টস' হিসাবে দর্শকদের স্মৃতিতে চরস্মরণীয় হয়ে আছে। ভারত-পাকিস্তান লড়াই এবং স্মরণীয় মুহূর্তের কথা বললেই সবার প্রথমে যেটি সামনে আসে, সেটি হল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে সিডনির ময়দানে জাভেদ মিয়াঁদাদের ক্রিজের মধ্যে অদ্ভুত লাফ।
মিয়াঁদাদ-কিরণ মোরে, সিডনি
এই বিশ্বকাপেই প্রথমবার ভারত-পাকিস্তান একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল। কিরণ মোরে এবং মিয়াঁদাদ, দুই লড়াকু মানসিকতার খেলোয়াড়ের মধ্য়েকার কথা কাটাকাটি, স্লেজিং এবং তার পরের ঘটনা আজ ইতিহাসের পাতায় সংরক্ষিত রয়েছে। মোরে উইকেটের পিছনে স্লেজিংয়ের পাশাপাশি বারংবার আপিল করে মিয়াঁদাদের একাগ্রতা ভাঙার চেষ্টা করছিলেন। মিয়াঁদাদ এমনিতেই বল টাইম করতে পারছিলেন না। বারবার একই ঘটনা ঘটার পর, মোরে যখন রান আউট করতে ব্যর্থ হন, তখনই তাঁর আপিল করাকে ব্যঙ্গ করে মিয়াঁদাদ ক্রিজে লাফাতে শুরু করেন। তাঁর কাণ্ড দেখে দর্শকরা তো হেটে গড়াগড়ি যান প্রায়।
প্রসাদ-আমির সোহেল, বেঙ্গালুরু
মিয়াঁদাদের এই ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সম্ভবত সবথেকে বড় দাবিদার হল বেঙ্কটেশ প্রসাদ ও আমির সোহেলের লড়াই। মিয়াঁদাদ-মোরের ঘটনার ঠিক পরের বিশ্বকাপেই বেঙ্গালুরুতে আমির সোহেল প্রসাদের বলে দুরন্ত স্কোয়ার কাটে বল বাউন্ডারিতে বল পাঠান। তারপরেই অনেকটা আবারও ওইখান দিয়েই বল মারব ভঙ্গিমায়, সোহেল প্রসাদের দিকে তাকিয়ে বাউন্ডারির দিকে ইশারা করেন। তবে পরের বলেই একেবারে সোহেলের অফস্টাপ মাঠ থেকেই উপড়ে ফেলেন প্রসাদ। তারপরেই অনেকটা 'বাপি বাড়ি যা' ভঙ্গিমায় সোহেলের দিকে তাকিয়ে সাজঘরে তাঁকে ফেরত পাঠানোর ইঙ্গিত করেন প্রসাদ।
গম্ভীর-আফ্রিদি, কানপুর
২০০৭ সালে কানপুরের ময়দানে শাহিদ আফ্রিদি এবং গৌতম গম্ভীরের লড়াইও কিন্তু ভোলার মতো নয়। গম্ভীর, আফ্রিদি, দুইজনের ভাষা এবং ব্যবহার এখন অনেকটা পরিমার্জিত হয়ে গেলেও, সেইদিন সকালে গ্রিন পার্কে কিন্তু পরিমার্জিতর 'প'-ও উপস্থিত ছিল না। আফ্রিদিকে এক চার মারার মাধ্যমেই ঘটনার সূত্রপাত। গম্ভীর এবং আফ্রিদির মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরের ওভারেই ননস্ট্রাইকে গম্ভীর কনুই দিয়ে সজোরে আঘাত করেন পাক তারাকাকে। এরপরেই মাঝ ক্রিজেই একেবারে তেড়েফুড়ে দুইজনে একে অপরের দিকে এগিয়ে যান। শেষমেশ আম্পায়ার ইয়ান গুল্ডকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়।
গম্ভীর-আকমল ও হরভজন-শোয়েব, ডাম্বুলা
আজ থেকে ১২ বছর আগে ডাম্বুলায় এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচও চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তার তিনটি কারণ। এক তো অবশ্যই শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আর বাকি দুই হল গম্ভীর-কামরান আকমল ও হরভজন সিংহ-শোয়েব আখতারের লড়াই। হরভজন এবং শোয়েব কেরিয়ারে বিতর্কের কোনওদিনও কোনও খামতি হয়নি। আর গম্ভীর আদপে শান্ত স্বভাবের হলেও, মাঠে নামলেই তাঁর লড়াকু মানসিকতা সবকিছুকে ছাপিয়ে যেত। তাই এই তারকাদের বিবাদে কেউই অবাক হননি।
ডাম্বুলার প্রায় ফাঁকা স্টেডিয়ামে দর্শকদের মধ্যে তেমন উত্তেজনার বহর না দেখা গেলেও, তার কমতিটা পূরণ করে দেন খেলোয়াড়রা। প্রথম ইনিংসটা তুলনামূলক সাদামাটা থাকলেও, গরমাগরমি শুরু হয় দ্বিতীয় ইনিংসে। গৌতম গম্ভীরকে তাঁর জমানার সেরা স্পিন খেলোয়াড়দের মধ্যে ধরা হত। কিন্তু এই ম্যাচে বারংবার সঈদ আজমলের বল, বিশেষত দুসরা বুজতে হাবুডুবু খেতে হচ্ছিল গম্ভীরকে। তাও তিনি হাল ছাড়েননি। লড়াইটা চালিয়ে যান। এই ইনিংসের মাঝেই এক আপিলকে ঘিরে লেগে যায় কামরান আকমল ও গম্ভীরের মধ্যে।
গম্ভীরের প্যাডে একটি বল লাগার পর পাকিস্তান কিপার আকমল বিরাট আউটের আপিল করেন বটে, তবে তা আম্পায়ার নাকচ করে দেন। গম্ভীর তাঁর পিছনে আকমলের এই অত্যাধিক আপিলেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর দিকে তেড়ে যান। শেষমেশ সেইসময় ক্রিজে উপস্থিত মহেন্দ্র সিংহ ধোনি দুইজনকে আলাদা করেন। ম্যাচ কোনওসময় পাকিস্তানের দিকে তো কোনওসময় ভারতের দিকে মোড় নিচ্ছিলই। সেই ম্যাচে একটু বাড়তি মশলা যোগ করে এই গম্ভীর-আকমল বিবাদ। এরপরেই আসে বিবাদের দ্বিতীয় অধ্যায়। এবার প্রতিযোগী ছিলেন শোয়েব আখতার ও হরভজন সিংহ।
দুইজনের কেউই দমে যাওয়ার পাত্র নয়। অতীতেও তাঁরা তাঁদের আচরণের জন্য বারংবার ম্যাচ রেফারির ঘরে ঢু দিয়েছেন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই শোয়েবের বিরুদ্ধে হরভজন ৪৯তম ওভারে পর পর দুই বল মারতে গিয়ে মিস করেন। এরপরেই দুই তারকা পিচের মাঝেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই পর্বের পরে যখন শেষ ওভারে হরভজনের কাছে স্ট্রাইক আসে, তখন হয় এসপার না হয় ওসপারের পরিস্থিতি ছিলই। ভাজ্জুর মারা বল যখন মিড উইকেটের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বাউন্ডারি স্পর্শ করে, তখন হরভজনের উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছিল দেখার মতো। থার্ড ম্যানে দাঁড়িয়ে থাকা শোয়েব আখতারকে লক্ষ্য করেই আরও বেশি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ভাজ্জি। অতীতের এই ম্যাচগুলির মতো আজকের ম্যাচেও, এমন কোনও বিবাদ বা ঝামেলা দেখা গেলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
আরও পড়ুন: ভাল বল করেও মিলছিল না স্বীকৃতি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালেই জাত চেনান ইরফান