সিডনি: হার না মানা মানসিকতা। দাঁতে দাঁতে চাপা লড়াই। সিডনি টেস্ট ড্র করার পথে ভারতীয় দলের মাঠের ঐতিহাসিক লড়াই ইতিমধ্যে চাক্ষুষ করেছেন সকলেই। কিন্তু মাঠের বাইরের লড়াইটা ঠিক কেমন ছিল। যার সুবাদেই কার্যত হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ বাঁচিয়ে নেয় ভারত।


বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির তৃতীয় টেস্টের শেষ দিনের শুরুর দিকের একটা ছবি তুলে ধরা যাক।

ভারতীয় ড্রেসিংরুমের বাইরে রাখা দুটো চেয়ার। পাশাপাশি বসে আছেন রবীন্দ্র জাদেজা ও সিডনিতে অভিষেককারী নভদীপ সাইনি। ফল সরবরাহ করতে আসা এক ব্যক্তির হাতে ধরা ট্রে-তে রাখা ডজনখানেক কলা থেকে একটি কলা চেয়ে নিলেন জাদেজা। হাত বাড়িয়ে যা নিয়ে যা ছাড়াতে শুরু করলেন নভদীপ। কিছুক্ষণ পর যা তিনি বাড়িয়ে দিলেন জাদেজার উদ্দেশ্যে।

এতটুকু পড়ে কারোর মনে হতেই পারে, এ আর নতুন কী!

নতুনত্বটা হচ্ছে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে পরা ছিল গ্লাভস। হ্যাঁ, ভাঙা হাতেই। সঙ্গে পায়ে প্যাড। কথায় আছে, মানসিকতা বদলে দেখো, দেখবে পৃথিবী বদলে গিয়েছে। যেন সেটা হাতে-কলমে করে দেখাল ভারতীয় দল।



দলের প্রয়োজনে ভাঙা হাতে ব্যাট করতে নামতেও প্রস্তুত ছিলেন জাদেজা। ড্রেসিংরুমে জাদেজাকে প্যাড পড়ে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে দেখে নেটিজেনদের মনে উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে গ্রেম স্মিথের কথা। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ভাঙা হাতেই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান। যদিও সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি জাদেজাকে। হনুমা বিহারী ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ২৫৯ বল ধরে ক্রিজ আগলে পড়ে থাকায় ম্যাচ বের করে নেয় ভারত।

প্রথম ইনিংসে ব্যাট করার সময় বলের আঘাতে আঙুল ভাঙে রবীন্দ্র জাদেজার। ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। সেই অবস্থাতেই সকালে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সকালে জানিয়ে দিয়েছিল প্রয়োজনে ব্যাট করবেন জাদেজা। দ্রুত অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে সাজঘরে ফিরে গেলেও প্রথম ইনিংসে চোট পাওয়া ঋষভ পন্থের ব্যাট হাতে নেমে পড়াতেই যেন পাল্টা লড়াইয়ের ইঙ্গিত।

ব্যাট হাতে শুধু নামাই নয়, পন্থ যেরকম কাউন্টার পাঞ্চে ভরপুর ইনিংস খেলেন, তাতে অল্প সময়ের জন্য উঁকি দিয়েছিল জয়ের সম্ভাবনাও। তেমনটা না হলেও যেরকম চোয়ালচাপা লড়াই করে ড্র ছিনিয়ে নিল ভারত, সেটাই বা নৈতিক জয়ের থেকে কম কোথায়!