অ্যাডিলেড: লজ্জার হার হল ভারতের। ৮ উইকেটে বিরাট কোহলি বাহিনীকে পরাজিত করে অ্যাডিলেড টেস্ট জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা করেছে মাত্র ৩৬,  ভারতের টেস্ট ইতিহাসে এটাই এক ইনিংসে সর্বনিম্ন স্কোর।


জয়ের জন্য দরকার মাত্র ৯২। সহজ টার্গেট লক্ষ্য নিয়ে নেমে তাড়াহুড়ো করেননি দুই অসি ওপেনার জো বার্নস এবং ম্যাথিউ ওয়েড। দুজনে করেন ৭০ রান। নিজের ৩৩ রানের মাথায় ওয়েড রান আউট হন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ওভারে। অশ্বিন ওয়ান ডাউনে নামা মার্নাস লাবুসেনকেও তুলে নেন তাঁর ৬ রানের মাথায়। বড় শট নিতে গিয়েছিলেন লাবুসেন, ধরা পড়েন মায়াঙ্ক আগরওয়ালের হাতে। কিন্তু বার্নসের সঙ্গে মিলে স্টিভ স্মিথ জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেন।

এই টেস্টের নায়ক হয়ে রইলেন দুই অসি পেসার জস হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্স। তৃতীয় দিনের ফার্স্ট সেশনেই ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডার ছত্রভঙ্গ করে দেন তাঁরা। ভারতীয় বোলাররা তাঁদের কাজটা ঠিকমতই করেছিলেন, প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং অর্ডারকে ১৯১ রানে আটকে রাখেন, গতকালের খেলার শেষে টিম ইন্ডিয়া ৬২ রানের লিড পেয়ে যায়। কিন্তু আজ ব্যাট করতে নেমে হ্যাজলউড ও কামিন্সের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। দুই বোলার তুলে নেন ৪ উইকেট করে, ৩৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ইনিংস শেষ করে ভারত।

৪, ৯, ২, ০, ৪, ০, ৮, ৪, ০, ৪, ১। না কোনও ফোন নম্বর নয়, এটা অ্যাডিলেডে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ঐতিহাসিক গোলাপি বলের টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোরকার্ড। একজন ব্যাটসম্যানও দুই অঙ্কের স্কোরে পৌঁছতে পারলেন না। আর যার নিটফল, টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা সঙ্গী হল ভারতের। মাত্র ৩৬ রানে শেষ হয়ে গেল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই ভারতের এক ইনিংসে সর্বনিম্ন স্কোর। এর আগে ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ রান অলআউট হওয়া ছিল ভারতের পক্ষে সর্বনিম্ন।

প্যাট কামিন্স (৪/২১) ও জস হ্যাজলউডের (৫/৮) আগুনে বোলিংয়ে এদিন ছারখার হয়ে যায় ভারতীয় ব্যাটিং। অ্যাডিলেডে ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্টের তৃতীয় দিনের সকালে বিরাট ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারত। শুরুর দিকেই মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট খুইয়ে বসে ভারত। তারপর জারি থাকে উইকেট পতন। শেষমেশ ৩৬ রানে শেষ হয় ইনিংস। ৯ উইকেটে ৩৬ রানে খেলার সময় হাতে চোট পান মহম্মদ শামি। তিনি রিটার্য়ার্ড হার্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লজ্জার নজির সঙ্গী হয় ভারতের।

৬ ওভার ব্যাট করে ১ উইকেটে ৯ রানের দিনের শুরুটা করেছিল ভারত। আর সেখান থেকে ৩৬ রানে শেষ হয়ে যায় বিরাটদের। একসময় ১৯ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে বসেছিল ভারত, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ইতিহাসে এর আগে কখনও স্কোরবোর্ডে ১৯ রানের মাথায় ৬ উইকেট খোয়াতে হয়নি ভারতকে। শেষটাও ঠিক তাই।

দিনের শুরুতেই নাইট ওয়াচম্যান জসপ্রীত বুমরাহকে (২) ফেরান টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর বোলার কামিন্স। তার কিছুক্ষণের মধ্যে চেতেশ্বর পূজারাকেও (০) ফেরান তিনি। তারপর তাঁর প্রথম ওভারে এসেই মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৯) ও আজিঙ্ক রাহানেকে (০) ফিরিয়ে জোড়া ধাক্কা দেন তিনি।

যখন মনে হচ্ছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে হয়তো লড়াই মেলে ধরবেন অধিনায়ক বিরাট (৪), তখন তাঁকে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে বাধ্য করে সাজঘরের পথ ধরান কামিন্স। কিছুটা থিতু হয়ে ওঠার আগেই ঋদ্ধিমান সাহা (৪) ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন (০) ও হনুমা বিহারিকে (৮) সাজঘরের পথ ধরিয়ে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড।

এই জয়ের ফলে ৪ টেস্টের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০-য় এগিয়ে গেল। ২৬ তারিখ থেকে মেলবোর্নে শুরু হবে বক্সিং ডে টেস্ট।