কানপুর: নিউজিল্যান্ডের (Ind vs NZ) বিরুদ্ধে কানপুরের গ্রিন পার্কে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন আচমকাই আম্পায়ার ও আর অশ্বিন-সহ ভারতের কয়েকজন ক্রিকেটারের মধ্যে তর্কাতর্কি লেগে গেল। পরিস্থিতি এমনই হয়ে যায় যে, ম্যাচ চলাকালীন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে (Rahul Dravid) ছুটতে হয় এই ম্যাচে আইসিসি-র রেফারির দায়িত্ব পালন করা জাভাগাল শ্রীনাথের (Javagal Srinath) কাছে। কিন্তু কেন? কীসের জন্য মাঠে আচমকা উত্তপ্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি?


ঘটনার সূত্রপাত নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ৭৭তম ওভারে। ওভারের চতুর্থ বলটি কেউ উইলিয়ামসনকে করার পর নাকি অশ্বিন এমনভাবে পিচে ঢুকে পড়েছিলেন যে, সামনে কিছু দেখতে পাননি আম্পায়ার নীতিন মেনন। তারপরই আম্পায়ার অশ্বিনকে ডেকে বিষয়টি বলেন। সেই সঙ্গে অশ্বিন যে পিচের বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকে পড়ছেন, সেই কথাও তারকা অফস্পিনারকে জানান আম্পায়ার।


পরের বলটি করার পর ভারত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানেকে ডেকে কথা বলেন দুই আম্পায়ার নীতিন মেনন ও বীরেন্দ্র শর্মা। অশ্বিনও দৌড়ে যান। সেই সময়ই দ্রাবিড় দেখা করে কথা বলেন শ্রীনাথের সঙ্গে। ম্যাচের ধারাভাষ্যকারদের কথা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, শুধু আম্পায়ারের দৃষ্টি আড়াল করাই নয়, অশ্বিন সম্ভবত নন স্ট্রাইকিং এন্ডে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারেরও সমস্যা করছিলেন। যে কারণে এত কথাবার্তা চলে দুই পক্ষে।


প্রবল চাপের সঙ্গে লড়াই করে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রানে অল আউট করে দিল ভারত। সেই সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানের মহার্ঘ্য লিড আদায় করে নিল।


আর ভারতের সেই পাল্টা লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিলেন স্পিনাররা। শুরুটা করেছিলেন আর অশ্বিন (R Ashwin)। কোচ রাহুল দ্রাবিড় জমানায় যাঁর কার্যত পুনর্জন্ম হয়েছে। কিউয়ি ওপেনিং জুটি ভাঙলেন। শেষ পর্যন্ত ৮২ রানে তিন উইকেট নিলেন তামিলনাড়ুর তারকা অফস্পিনার। ফের টেস্টে উজ্জ্বল অক্ষর পটেল (Akshar Patel))। এই টেস্টে দুই বাঁহাতি স্পিনার খেলাচ্ছে ভারত। রবীন্দ্র জাডেজার (Ravindra Jadeja) সঙ্গে খেলানো হচ্ছে অক্ষরকে। অধিনায়কের আস্থার মর্যাদা রাখলেন অক্ষর। ৬২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তিনিই ভারতীয়দের মধ্যে সেরা বোলার। জাডেজাও নিলেন এক উইকেট। প্রতিপক্ষের দশ উইকেটের মধ্যে ৯টিই নিলেন স্পিনাররা।


ভারতের প্রথম ইনিংসে ৩৪৫ রানের জবাবে গতকাল ইনিংস শুরু করে নিউজিল্যান্ড।  শুরু থেকেই ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার। দ্বিতীয় দিনের শেষ পর্যন্ত কিউয়ি ওপেনারদের রক্ষণ ভাঙতে পারেননি ভারতীয় বোলাররা। দ্বিতীয় দিনের শেষে নিউজিল্যান্ড কোনও উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ১২৯ রান।  তৃতীয় দিনে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন অশ্বিন। উইল ইয়ংকে ফিরিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অশ্বিন।


৮৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ইয়ং। ১৫১ রানে প্রথম উইকেট পড়ে নিউজিল্যান্ডের। অর্থাৎ টম লাথাম ও ইয়ংয়ের ওপেনিং জুটিতে ১৫১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। ইয়ং অশ্বিনের একটি রহস্যময় বলের শিকার হলেন। অশ্বিনের বল মাটিতে পড়ার পর নিচু হয়ে যায়। উইকেটরক্ষক কেএস ভরত কঠিন ক্যাচ দারুণভাবে গ্লাভসবন্দি করে নেন। কিন্তু ব্যাটসম্যান ভাবতেই পারেননি যে, তিনি আউট হয়ে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আম্পায়ারও ভারতীয় খেলোয়াড়রদের আবেদন নাকচ করে দেন। কিন্তু অশ্বিন ও ভরত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, বল ব্যাটে লেগেছে।  অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে ডিআরএস নেন। শেষ পর্যন্ত ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করা হয়। 


শতরান থেকে ১১ রান দূরেই থামতে হয় ইয়ংকে। তার আগে অবশ্য ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বাধিক রানের পার্টনারশিপ গড়েন ইয়ং ও লাথাম। এর আগে রিচার্ডসন ও ভিনসেন্ট ২০০৩-এ ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে ওপেনার হিসেবে তাঁদের জুটিতে ২৩১ রান তুলেছিলেন।